রবীন্দ্রকুমার শীল: বাংলার রেনেসাঁসের মূল তত্ত্বই ছিল প্রাচীনত্ব থেকে বের হয়ে আসার পথ প্রস্তুত করা। প্রাচীনত্বের খোলস থেকে বাংলাকে মুক্ত করে নতুন ভাবে তাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। বিলাতে শিল্প বিপ্লব হওয়ার ফলে কাচা মালের প্রয়োজনে উপনিবেশ স্থাপন করাটা জরুরী হয়ে পড়তে শুরু করলো। ইংরেজদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইউরোপের ডাচ, পর্তুগিজ, ফরাসি দেশগুলি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করার দিকে ঝুঁকতে শুরু করলো॥ ফরাসি, পর্তুগীজ, ডাচ এবং ইংরেজরা বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করাকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে। তার ফলে ইউরোপীয দেশগুলি ভারতের ওপরে ্প্রভাব বিস্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ইউরোপীয সংস্কৃতির মেলবন্ধন হতে থাকে। নতুন চেতনা শক্তি প্রসারিত হতে শুরু করলো বাংলায়। পাশ্চ্যত্য সংস্পর্শে বাংলায় নবজাগরণের পরিবেশ সৃষ্টি হতে থাকলো। বাংলা তখন প্রচলিত প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। নবাবী আমল থেকে বের হয়ে এসে নতুন করে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে। ঠিক সেই সময়ে বাংলার দোরগোড়ায এসে উপস্থিত হয়েছে ইংরেজ শক্তি। বাংলা তাকেই আঁকড়ে ধরলো। তাকে অবলম্বন করেই বাংলা তখন জাগতেশুরু করেছে। ইংরেজ রাজশক্তি সেই চিত্রটা পরিস্কার করে ধরে ফেলেছে। বাংলার দুর্বল দিকটাকে ৱুঝতে সক্ষম হয়ে। সেই দুর্বলকে অবলম্বন করেই ইংরেজ শক্তি বাংলায় প্রসার লাভ করতে থাকে। বাংলাকে রক্ষা করতে ইংরেজ সরকার তৎপর। তারা আগাম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল বাংলার হাত ধরে ভারত জয় করতে হবে। বাংলা তখন ইংরেজদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। ভারতবর্ষ ধর্মের দেশ। মিশ্র সংস্কৃতির দেশ। তখন বাংলায় রাজনৈতিক চিন্তাটা শক্তিশালী ছিল না। ধর্ম তখন সারা বাংলাকে গ্রাস করে ফেলে রেখে দিয়েছে। একটি সময়ে সমাজে সতীদাহ প্রথা, বিধবা প্রথা এবং বহু বিবাহ প্রথা চালু ছিল। বহু বিবাহ এবং সতীদাহ প্রথার হাত থেকে বের হযে আসার আ্প্রাণ চেষ্টা করতে শুরু করে দিয়েছিল বাংলা। কিন্তু পারছিল না। তার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে শাস্ত্র তখন গোটা বাংলার শ্বাসরুদ্ধ করে রেখে দিয়েছিল। প্রতিবাদ করার কোনও ভাষা তখন ছিল না। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িযে ছিলেন শক্তিশালী জর্ব চার্নক। তিনি স্বযং একজন সতী মহিলাকে শশ্মান থেকে উদ্ধার করে নিজের স্ত্রী হিসাবে মর্যাদা দিলেন।
তখন জব চার্নকের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পেল না সমাজ। পুরো ব্যাপারাটকে তারা তখন হজম করে নিয়েছিল। ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তার হওয়ার মধ্যে দিযে বাংলা নবাবী শাসন থেকে বের হয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করতে শুরু করে বাংলা। তার ফলে পলাশির যুদ্ধ 1757 সালে। বাংলা তখন ইংরেজদের পক্ষে। নবাব সিরাজ পরাজয় স্বীকার করে পালিযে গেল বাংলা। নবাবী শাসনের পতন ঘটল। বাংলা প্রাচীন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদ্ধতিকে বিদায় জানাতে প্রস্তুতি নিল। সব দিক দিয়ে নতুনত্বকে প্রতিষ্ঠা করার একটি প্রবণতা বাংলায় প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ঠিক সেই সময়ে বাংলায় এসে উপস্থিত হয়েছেন উদারপন্থী মতবাদের বিশ্বাসী সাহেব হিকি, উইলিযাম কেরি, উইলিযাম জোন্স, ডেভিড হেযার, বেথুন, শ্রীরামপুরের মিশনরারীরা। বাংলাকে সমৃদ্ধ হতে শুরু করেছে। ফোর্ট উইলিযাম কলেজ বাংলা চর্চার পীঠস্থান। মানবতাবাদের জয়গান শুরু হয়ে গিয়েছে। ধর্ম বড় নয়। মানুষ বড় সেটা প্রমাণ করতে উপস্থিত হয়েছেন রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও প্রমুখ। সেই উজ্জ্বল মুহূর্তে এসে উপস্থিত হলেন কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত। তিনি হিন্দু কলেজে পড়ার সময়ে শুরু করে দিলেন পাশ্চাত্য চর্চা। হিন্দু কলেজ তখন সাহেবি চর্চার ওপরে বেশি করে জোর দেওযা শুরু হয়েছে। তার আগে ডিরোজিও পাশ্চাত্য শিক্ষার বীজ বোপন করে গিয়েছিলেন। ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তাঁর পথ ধরে পরবর্তীকালে ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা আর বেশি করে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ ধরে পাশ্চাত্য চর্চার শ্রীবৃদ্ধি ঘটাল। বাংলা জড়ে নয়া কর্মযজ্ঞ শুরু হল। গোটা বাংলার পরিস্থিতি ওলোটপালট। প্রাচীন এবং মধ্যযুগের সামাজিক প্রথা থেকে বের হয়ে ধর্ম ও সাহিত্য নতুন পথ ধরে প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রবনতা প্রবলতর হতে থাকলো। ভারতীয় পুরাণ, শাস্ত্র এবং মহাকাব্যগুলি নতুন দৃষ্টির আলোকে বিচার উপস্থাপিত হতে থাকে। বাংলার কবি সাহিত্যেকেরা, ধর্মীয় নেতারা এই নতুন কর্মযজ্ঞে সামিল হতে থাকলেন। প্রাচীন এবং মধ্য যুগের রীতিনীতি থেকে ধর্ম এবং সাহিত্যকে বের করে নিয়ে আসতে সংগ্রাম করতে শুরু করলেন। সেই সংগ্রামে সামিল হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ, রাজা রামমোহন রায, বিদ্যাসাগর, প্রিন্স দ্বরাকনাথ ঠাকুর, ডেভিড হেয়ার সহ আরও অনেকে। এদের সংগ্রামে দেবদেবী তুচ্ছ হয়ে গেল। প্রতিষ্ঠা পেল মানবতাবাদ এবং যুক্তিবাদ। মানবতাবাদকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল সেই সময়ে রামকৃষ্ণ এর মূল লক্ষ্য। রাজা রামমোহন রায যে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রতিষ্ঠা সেখানে হিন্দু ধর্মের আধুনিক রূপ দেখতে পাওয়া গেল। ব্রাহ্ম ধর্মকে অবলম্বন করেই বাংলার মেয়ো শিক্ষিত হতে শুরু করে। তারপরে বহু সংগ্রাম করে হিন্দু মেে.রা স্কুলে যাওয়ার অধিকার অর্জন করে। আধুনিক শিক্ষার বিকাশ এবং ্প্রসার ঘটতে শুরু করলো। ইংরেজ মিশনারীরা যখন ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইংরেজি স্কুল তৈরি করতে ব্যস্ত তখন বিদ্যাসাগর বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছেন। বাংলা ভাষায শিক্ষা দেওয়ার ওপরে জোর দিতে শুরু করেছেন। জেলায় জেলায় বাংলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে শুরু করেছেন বিদ্যাসাগর। ঠিক সেই সময়ে মাইকেল বাংলায় আর্বিভূত হলেন।
মাইকেল একেবারে বিপরীত দিকে পা চালাতে শুরু করে দিলেন। প্রাচ্য সভ্যতাকে ত্যাগ করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন। প্রাচীন ধর্মীয খোলস থেকে বের হয়ে এসে নতুন ভাবে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তার জন্য তিনি বহু কষ্ট ভোগ করেছেন। রামাযণের বহমান চিন্তার ধারাকে একেবারে নতুন দৃষ্টিকোন দিযে বিচার করলেন। ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য রচনা করলেন। সেখানে তিনি দেখালেন যে রাম, রাবণ রাজা মহারাজ হয়ে প্রকৃত অর্থে তাঁরা কিন্তু বীর নন। প্রকৃত বীর এবং শক্তির আধার হলেন মেঘনাদ। তিনি শক্তিশালী ধনুধর। মহান রাম, রাবণ চরিত্র মাইকেলের মনে কোনও রেখাপাত করতে পারেনি। ‘মেঘনাদ’কেই তিনি রামায়ণের মহান বীর বলে উপস্থিত করলেন। প্রাচীন কাল থেকে রামাযˆণ বা মহাভারতে এবং হিন্দু পুরাণ গ্রন্থে যে সব চরিত্রগুলি অবহেলিত হয়েছিল সেগুলিই মাইকেলের হাতে মহান হতে শুরু করলো। যুক্তি দিয়ে ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যের চরিত্রগুলিকে বিচার বিশ্লেষণ করতে শুরু করলেন। মাইকেল হিন্দু কলেজে পড়ার সমযে সাহেব হযে গিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে সেই সমযে হিন্দু বলে গ্রহণ করতে একেবারে প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁর গায়ে হিন্দুদের কোনও রক্ত প্রবাহিত হবে না বলে তিনি খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ করে ঘাঁটি সাহেবে পরিণত হলেন। লিখে ফেলেন ‘ক্যাপটিভ লেডি’ মহাকাব্য। বাইরনের ‘দ্য লেডি অব স্যালোট’ মতো মহাকাব্য রচনা করলেন ইরেজি ভাষাতে। ইংরেজি ্প্রতিষ্ঠিক কবি বাইরনকে অতিক্রম করার প্রবল ইচ্ছা থেকেই তিনি ক্যাপটিভ লেডি মহাকাব্য রচনা করেছিলেন যার পাঠককূল বাঙালি ছাড়া আর কোনও ইংরেজ ছিল না। ইংরেজরা কিন্তু মাইকেলকে ইংরেজ কবি বাইরনের আসনে বসায় নি। বিদেশে থাকাকালীনই মাইকেল তাঁর নিজস্ব কবি সত্ত্বা এবং নিজের অবস্থান দেখে তা অনুভব করতে পেরেছিলেন। হিন্দু কলেজে পড়ার সময়ে যে মাইকেল সাহেব ইংরেজি কবি হওযার স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে গিয়ে সেই মাইকেল আবার বাংলার কবি জগতে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বিদ্যাসাগর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি মাইকেল সাহায্য করলেন। বিদ্যাসাগর তখন মাতৃভাষায় শিক্ষা অন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন জোর কদমে। ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার চর্চার শ্রীবৃদ্ধির দিকে মনসংযোগ করতে শুরু করেছেন বিদ্যাসাগর। এবারে সেই আন্দোলনে সামীল হলেন মাইকেল। তিনি আবার বিদ্যাসাগরের নারী শিক্ষা আন্দোলনকে সমর্থন করে বীরাঙ্গনা কাব্য রচনা করলেন।
বিদ্যাসাগরের নারী স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন দিলেন। বীরাঙ্গনা কাব্য এর পাশাপাশি লিখলেন ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’। বিদ্যাসাগরে দেখানো পথ ধরে মাইকেল এবারে চলতে শুরু করলেন। ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ প্রথম প্রকাশ অনুষ্ঠানে মাইকেলসম্বর্ধনা বিদ্যাসাগর উপস্থিত ছিলেন না। তৱুও বিদ্যাসাগর মাইকেল বন্ধুত্বের কোনও চিড় ধরে নি। মাইকেলের বন্ধু মহল তখন তৈরি হয়েছিল প্রতাপচন্দ্র সিংহ, রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, দিগম্বর মিত্র, রমা্প্রসাদ রায, কিশোরীচাঁদ মিত্র, গৌরদাস বসাক, রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেশের তত্কালীন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। কিন্তু এই সব বন্ধুরা তাঁর দুর্দিনের পাশে এসে দাঁড়াযনি। বিদ্যাসাগরের সঙ্গে মাইকেলের পরিচয খুব বেশি হলে ছয় বছর মাত্র। দুই জনের সামাজিক ভিন্নতা থাকলেও কিন্তু নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হতে পেরেছিল। সেখানে কোনও স্বার্থ কাজ করেনি। শুধু বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন মাইকে বাংলার চর্চায বিশেষ মনোযোগী হোক। এই চাওয়াটা বিদ্যাসাগর নিজ স্বার্থে নয়, সমগ্র বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধশালী করতে চাওয়া। তিনি বাংলা ভাষা রত্নভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে মাইকেলকে সহযোগিতা করেছিলেন। বাংলা ভাষার বৃহৎ স্বার্থের দিকে তাকিয়ে একের পর এক মাইকেলের আবদারকে নীরবে সহ্য করে নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। এখানেই বিদ্যাসাগরের আন্দোলনের জয় হল বলা যেতে পারে। যে ঈশ্বরচন্দ্র ভারতের প্রাচীন শাস্ত্র চর্চা করে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেছিলেন সেই বিদ্যাসাগর ‘সীতার বনবাস’ বিধবা বিবাহ প্রচলন করে স্বাধীনতা তথা নারী মুক্তির কথাকে ব্যক্ত করলেন। আর মাইকেল ‘বীরঙ্গানা কাব্য’ এবং ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য রচনা করে প্রাচীন ভারতের নারী আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিলেন। যাঁরা মহাকাব্যের যুগে অচ্ছু্যত হয়েছিলেন তাঁরা মাইকেলর হাˆত ধরে সমাজের ্প্রাদ্প্রদীপে সামনে এসে উপস্থিত হলেন। এখানে বিদ্যাসাগরের জয় হলো বলা যেতে পারে বিদ্যাসাগর মাইকেলের ওপরে কোনও জোর খাটাননি। মাইকেলের চিন্তার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেননি। উল্টে মাইকেল বিদ্যাসাগরের দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করে দিয়েছিলেন। মাইকেল যেসব কাব্য, নাটক রচনা করে গিয়েছেন তার মধ্যে প্রতিবাদের সুর শোনা গিয়েছে। সেই সব প্রতিবাদ বিদ্যাসাগর তাঁর বিভিন্ন রচনার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছেন। বিদ্যাসাগরের প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সুস্থ শিক্ষিত সমাজ তৈরি করা। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে তিনি এগিয়ে চলতে শুরু করেছিলেন। সেই পথে চলার সাথী হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন মাইকেলকে। এখানেই বিদ্যাসাগরের নারী মুক্তি তথা মানবতাবাদকে প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থকতা।