Country

5 hours ago

Space Glory: মহাকাশযাত্রায় ইতিহাস! শুভাংশুর প্রথম বার্তায় কী ছিল দেশের জন্য?

History in space travel!
History in space travel!

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:নির্ধারিত সময় মেনেই বুধবার ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১ মিনিটে ইতিহাসের পথে যাত্রা শুরু করল স্পেস এক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। ভারতীয় নভোচারী শুভাংশু শুক্লা-সহ মোট চারজন নভশ্চরকে নিয়ে এই যান রওনা দেয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে। উৎক্ষেপণের পর অত্যন্ত সফলভাবে কক্ষপথে প্রবেশ করে মহাকাশযানটি, যা এখন পৃথিবীর প্রায় ২০০ কিলোমিটার উপরে প্রতি সেকেন্ডে ৭.৫ কিলোমিটার গতিতে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।

এই গতিশীল ভাসমান অবস্থান থেকেই পৃথিবীর উদ্দেশে তাঁর প্রথম বার্তা পাঠান শুভাংশু শুক্লা। সেই বার্তায় উচ্ছ্বাস, অভিভূতি আর ঐতিহাসিক সাফল্যের ছাপ স্পষ্ট। সংক্ষিপ্ত বার্তায় তিনি বলেন,

“দারুণ সফর! এটা জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই মুহূর্তটা আমি কোনো দিন ভুলব না। আমি উড়ছি, আর সঙ্গে উড়ছে ভারত।”

শুভাংশুর এই বার্তা পৌঁছতেই গোটা দেশ যেন আবেগে ভাসে। তাঁর মুখে উচ্ছ্বাস আর কণ্ঠে দেশের জন্য ভালোবাসা—এই মুহূর্তে ভারতের বিজ্ঞান ও স্বপ্ন একসঙ্গে উঠে এল মহাকাশের বুকে।

বুধবার ভারতীয় সময় দুপুরে আমেরিকার ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেট মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সেই রকেটে চেপেই ইতিহাসের অংশ হলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। উৎক্ষেপণের কিছু সময় পর, পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে প্রথম বার্তা পাঠালেন শুভাংশু—এক গর্বিত, আবেগঘন স্বরে।

তাঁর কথায় ছিল উচ্ছ্বাস, দায়িত্ববোধ আর দেশের প্রতি অদম্য ভালোবাসা। কণ্ঠে উচ্ছ্বাস নিয়ে তিনি বললেন, “সকল দেশবাসীকে নমস্কার। অসাধারণ সফর ছিল! ৪১ বছর পর ভারত ফের মহাকাশে পা দিল। এই মুহূর্তে আমরা প্রতি সেকেন্ডে ৭.৫ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমার কাঁধে ভারতের তেরঙা পতাকা রয়েছে। এই পতাকাই প্রতিটি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছে—আমি আপনাদের সঙ্গেই রয়েছি।”

শুধু অতীতের গৌরব নয়, ভবিষ্যতের পথও যেন আঁকলেন শুভাংশু। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “এই অভিযান কোনও সমাপ্তি নয়, এটা একটি নতুন সূচনা। ভবিষ্যতের গগনযান মিশনের ভিত এই যাত্রাতেই গড়ে উঠছে।” দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আহ্বান জানান, “আমি চাই আগামী অভিযানে দেশের প্রতিটি মানুষ অন্তর থেকে অংশ নিক। কারণ মহাকাশের এই স্বপ্ন শুধু বিজ্ঞানীদের নয়, এটি গোটা জাতির।”

শুভাংশুর এই বার্তা যেন শুধু এক নভোচারীর নয়, বরং মহাকাশ থেকে ভেসে আসা এক ভারতীয়ের হৃদয়ের স্পন্দন—যেখানে দেশের জন্য গর্ব, দায়িত্ব আর আশা একসঙ্গে উচ্চারিত হয় মহাশূন্যে।

শুভাংশুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘শুভাংশু শুক্লই প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখবেন। তিনি নিজের কাঁধে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্ক্ষার ভার বহন করছেন।’’

১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা যখন রাশিয়ার মহাকাশযানে চড়ে ইতিহাস গড়েছিলেন, তখন গোটা দেশ গর্বে মুখর হয়েছিল। কিন্তু তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ৪১ বছর। এত বছরেও কোনও ভারতীয় আর পা রাখেননি মহাকাশে। সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে। শুভাংশু শুক্লার মহাকাশযাত্রার মাধ্যমে ফের ভারতের নাম উঠল মহাশূন্যের মানচিত্রে।

‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ নামে পরিচিত এই অভিযানে রয়েছেন মোট চার নভশ্চর। তাঁদের মধ্যে শুভাংশু শুক্লা ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী ও অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মানব মহাকাশযান বিভাগের ডিরেক্টর রেগি হুইটসন। বাকি দুই নভশ্চর হলেন পোল্যান্ডের স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু।

এই মিশনের জন্য প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। প্রায় এক বছরের কঠোর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, উৎক্ষেপণের আগে নভশ্চরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তাঁদের রাখতে হয়েছিল এক মাসের নিভৃতবাসে (কোয়ারেন্টাইন), যাতে কোনওরকম সংক্রমণ শরীরে প্রবেশ না করতে পারে।

চলতি অভিযানে তাঁরা আগামী ১৪ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন। সেখানে তাঁরা চালাবেন অন্তত ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব, জীববিজ্ঞানের বিকাশ, ও মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান সম্পর্কিত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু ভারত নয়, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিও ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করছে। আর ভারতের ক্ষেত্রে শুভাংশুর এই যাত্রা নিঃসন্দেহে এক নতুন দিগন্তের সূচনা—যেখানে ভারতের ভবিষ্যতের গগনযান মিশনের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন তিনি।


You might also like!