স্বাস্থ্যই সম্পদ। ছোট থেকেই এই বিষয়ে বহু বার রচনা লিখে লিখে অভ্যাস করে ফেলেছে কয়েক প্রজন্ম। তবুও যেন সব জেনেও স্বাস্থ্যের প্রতি দুয়োরানি-সুলভ ভাবনা কম বেশি সব দেশেই। কখনও পরিবেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উৎপাদন কমাতে না চাওয়া, আবার কখনও স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীন থাকা। আবার কখনও স্বাস্থ্যকে স্রেফ ভোট রাজনীতির একটি অঙ্গ হিসেবে দেখার প্রচেষ্টা— উন্নতির পর্দাফাঁস হয়ে গিয়েছে করোনাভাইরাসের অতর্কিত আক্রমণে।
উন্নত প্রথম বিশ্বের দেশ থেকে তৃতীয় বিশ্বের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি, সর্বত্র করোনা স্রেফ গোগ্রাসে গিলে নিয়েছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। সারা পৃথিবী এখন বড় চোখ করে দেখছে করোনার চতুর্থ ঢেউ। ঠিক এখানেই ভীষণ প্রাসঙ্গিক এই বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এই দিনটি শুধু আনুষ্ঠানিক পালন করার দিন নয়, বরং আত্মোপলব্ধির দিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদ্যাপনের ইতিহাস: প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা WHO প্রতি বছর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই দিন উদ্যাপন করে। ১৯৪৮ সালে ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেই ঐতিহাসিক দিনকে মাথায় রেখেই এই তারিখ বেছে নেওয়া।
আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য— এই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৃহত্তর আঙ্গিকে ভাবার জন্য মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।পরিষ্কার বায়ু, পানীয় জল এবং খাবার— এখন পৃথিবীতে মহার্ঘ্য হয়ে গিয়েছে। এখনও অনেক দেশ তাদের অর্থনীতির কথা ভাবতে গিয়ে স্বাস্থ্যকে প্রাপ্য গুরুত্ব না দিয়ে উন্নয়ন নিয়ে একমাত্রিক চিন্তাভাবনা করে চলেছে। জলবায়ুর সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গড় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি হওয়ার কারণে একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সব দেশকেই। এর সঙ্গে গত দুই বছর করোনার দিকে সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থা মনোনিবেশ করার কারণে ক্যানসার, অ্যাজমা, হৃদরোগের মতো বিষয়গুলিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। WHO-র মতে, প্রতি বছর ১৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যান পরিবেশগত কারণে। তাই পরিবেশ এবার অগ্রাধিকারের দিক থেকে আছে শুরুর দিকেই।
স্বাস্থ্যক্ষেত্র নিয়ে অনেক দেশেই বিতর্ক রয়েছে যে সুস্বাস্থ্য মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়লেও সরকার কেন অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে না? এছাড়া চিকিৎসায় সবার সমান সুযোগ থাকবে না কেন?
তাই দেশের গণ্ডির মধ্যে না থেকে, এই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে মানবতার স্বার্থ নিয়ে আলোচনার কথা বলছে। তাই বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ুর সমস্যাগুলো নিয়ে সদর্থক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।