দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ক্রিকেট কে বলা হয় জেন্টলম্যান’স গেম, দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও বারবার এই জেন্টলম্যান’স গেম ভারতের তেরঙ্গাকে উন্নিত করেছে বারে বারে। সত্যি বলতে যে দেশে মাস্টার ব্লাস্টারের মতো প্লেয়ার দেশের জার্সি গায়ে দেশকে কেবল তার খেলা দিয়েই নয় বরং খেলার মাঠে তার খালোয়াড়োচিত আচরন দিয়েও বারবার দেশকে গৌরবময় করে তুলেছেন সেখানে সম্প্রতি খেলার মাঠে আরো এক ভারতীয় খেলোয়াড়ের আচরন বর্তমানে বার বার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে।
ভারতের মহিলা দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর ঢাকার মাঠে তার আচরনের পর মনে হয়েছে তিনি যা করলেন তা কোনো মতেই অধিনায়কোচিত নয়। একসময়ে মিতালি রাজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতের মহিলা ক্রিকেটকে আলোর দিশা দেখানো হরমনপ্রীত, তার খেলার মাধ্যমে দেশের ছোটছোট মেয়েদের চোখে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিলেন।সেই মেয়েই তার আচরন দিয়ে দেশ দেশবাসীকে লজ্জিত করলেন।
আম্পায়ারিং নিয়ে অতীতে নানা প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটাররা। মাঠে মেজাজও হারিয়েছেন। কিন্তু আপনি সেই ঘটনা টেনে আনলেন পুরস্কারের অনুষ্ঠান মঞ্চ পর্যন্ত। আম্পায়ার ঘরের দল বাংলাদেশের পাশে না থাকলে ৩ ম্যাচের সিরিজ কোনওভাবেই ১-১ ড্র দিয়ে শেষ হত না। তাই এই ট্রফি শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, আম্পায়ারেরও প্রাপ্য। এই দাবি তুলেই হাজার ক্যামেরার ফ্ল্যাশের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি ডেকে নেন আম্পায়ারকে। অপমান-অস্বস্তির ছাপ পড়ে বাংলাদেশি অধিনায়িকার চোখে-মুখে।এখন প্রশ্ন সত্যিই কী এমন অ-খালোয়াড়োচিত ব্যবহারের কী সত্যিই প্রয়োজন ছিল ক্যাপ্টেন সাহেবা!
এই প্রসঙ্গে মনে পরে যাচ্ছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কথা, খেলা শুরুর আগে ওয়াসিম আক্রম কার্যত তাচ্ছিল্যের সুরেই বলেছিলেন, ‘এটা তো অনুশীলন ম্যাচ।’ সেই ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল আক্রমকে।সেই দিনের পাক অধিনায়কের ছায়া দেখতে পাওয়া গেল আপনার মধ্যে, তবে কী আপনার মধ্যে অহংবোধের অধিক্য বাড়ছে, যা আপনার কেরিয়ার ও দেশকে অধঃনমিত করছে। আপনার জয় আপনার পরাজয়কে নিজের মনে করেছেন কোটি কোটি দেশবাসী,আজ আপনার আচরন তাদের ও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কোনো জবাব কী আছে আপনার কাছে?
ছোটো থেকে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে, নিজের যোগ্যতাকে , নিজের ধী-শক্তিকে সক্রিয় রাখতে ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয়, খেলায় হার-জিত রয়েছে। কিন্তু শত্রুকে কখনও দুর্বল ভাববে না। প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখালে নিজের সম্মান কখনও কমে না। কিন্তু এসব তত্ত্বকথার ধারেকাছ দিয়ে হাঁটলেন না আপনি। এই আচরণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? ঔদ্ধত্য? নাকি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? আগামীর জন্য যে এই ঘটনা একেবারেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়।
নারী না কী সদা সর্বদা করুনাময়ী, মমতাময়ী, কিন্তু সেদিনের খেলার মাঠে আপনার ব্যবহারে তার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়নি। আপনার বিরুদ্ধে এই লেখা দেখে মনে করবেন না আমি নারী বিরোধী, কিন্তু ঠিক তা নয় যেখানে কাজের জগতে সমবেতনের দাবী করা হয়, সেখানে এমন কথা অমূলক। একটা সময় অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলেছিলেন ‘দুর্বল দলের সঙ্গে টেস্ট খেলাই উচিত নয়’। সেদিন তাঁর কথায় ফুটে উঠেছিল ঔদ্ধত্য। আজ তেমন ছায়া দেখছি আপনার মধ্যেও যা আপনার এবং ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের ও হতাশার।
বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ভারতীয় মহিলা খিকেট দলের প্রগতির কথা ভেবে না না উদ্যোগ নিয়েছে।মহিলা ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানো থেকে শুরু করে নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া, মহিলা আইপিএল চালু করার মতো পদক্ষেপ করে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মহিলা ক্রিকেট ও পুরুষদের ক্রিকেটের সমমর্যাদার দাবিদার সেখানে আপনার এই ব্যবহার কাম্য নয়। অধিনায়ক কে অনুসরন করেন তার সতীর্থ রা কিন্তু নিন্দনীয় ব্যবহার করে ২২ গজের যে কৌলিন্য তাকে ধূলিসাৎ করবেন না।
ক্রিকেট বিশ্বে খুব ক্ষুদ্র একটি দেশ আফগানিস্থান, সাল ২০১৮ তে টেস্টে আফগানিস্তানের হাতেখড়ি হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে।এক ইনিংস এবং ২৬২ রানে সেই টেস্ট ম্যাচ জেতে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু খেলার ফলাফলকে ছাপিয়ে গিয়েছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। ভারত অধিনায়ক অজিঙ্কে রাহানে ট্রফি নেওয়ার সময় ডেকে নিয়েছিলেন আফগান অধিনায়ক আসগর আফগান-সহ গোটা দলকে। আপনার মধ্যেও ঠিক সেই স্পোর্টসম্যান স্পিরিট দেখারই আশা রাখি।