দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বিহারের ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র-সহ একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠনের দায়ের করা মামলাগুলিকে একত্রে শুনানির সিদ্ধান্ত নিল দেশের শীর্ষ আদালত। সোমবার এই মামলাগুলি গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, আসন্ন বৃহস্পতিবার মামলাগুলির শুনানি হবে। তার আগে মামলাকারী প্রতিটি পক্ষ নির্বাচন কমিশনকে নোটিস পাঠাতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নির্দেশ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই সংশোধনের কাজ সেরে ফেলতে চায় কমিশন। বিহারের ভোটারদের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্ম বিলি করা হয়েছে। তা পূরণ করে নথি-সহ জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরে। নথি হিসাবে দেখাতে হবে নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে না। এতেই আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ, এর ফলে তিন কোটি মানুষ ভোটাধিকার হারাতে পারেন। যাঁরা এত দিন ধরে ভোট দিয়ে আসছেন, কেন আবার তাঁদের নথি দিয়ে ভোটাধিকার প্রমাণ করতে হবে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
মহুয়াও এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশ বাতিল এবং এমন নির্দেশ যাতে অন্য কোনও রাজ্যে না দেওয়া হয়, তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। মহুয়া ছাড়াও কমিশনের এসআইআরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে অসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম্স, পিইউসিএল। এ ছাড়া মামলা করেছেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব। এ বিষয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এই চারটি মামলার একত্রে শুনানি হবে বৃহস্পতিবার।মহুয়া সমাজমাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে মামলার কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘বিহারের এসআরআই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হয়েছে। নোটিস জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানি। সত্যমেব জয়তে।’’
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও ছাড় নেই। ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪-এর পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। মহুয়া-সহ মামলাকারীদের অভিযোগ, এই নির্দেশ সংবিধান, জনপ্রতিনিধি আইনের বিরোধী। মহুয়া আবেদনে লিখেছিলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯ (১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারা, জনপ্রতিনিধি আইন এবং ভোটার নিবন্ধনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে কমিশনের নির্দেশ। তা যদি বাতিল না করা হয়, এর ফলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এটা গণতন্ত্রের অসম্মান এবং দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কাঁটা।’’ বাংলা-সহ অন্যান্য রাজ্যে যাতে এই পদক্ষেপ না করা হয়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশও চেয়েছেন মহুয়া। তাঁর পক্ষে এই মামলা লড়বেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং আইনজীবী সিইউ সিংহ। আরজেডি সাংসদের হয়ে মামলা লড়বেন আইনজীবী কপিল সিব্বল।
সোমবার কমিশনের নির্দেশ নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের সময়েও এই সমস্যাগুলি তুলে ধরেন আইনজীবীরা। জানান, যে সমস্ত ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, বহু বার যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরই আবার নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে! ২৫ তারিখের মধ্যে নথি না দিলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে বলা হচ্ছে। এটা অসম্ভব একটা কাজ। বিচারপতি ধুলিয়া অবশ্য জানান, এখনও বিহারের নির্বাচন ঘোষণা হয়নি। ফলে এই সময়সীমার কোনও গুরুত্ব নেই। সূত্রের খবর, কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও পৃথক ভাবে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে চলেছে।