দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বর্ষাকাল নাকি একেবারেই ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ নয় । অনেকের ধারণা কিন্তু সেরকমই । কিন্তু, বর্ষা বা বৃষ্টি মানেই যে ছুটির দিনে শুধু বাড়িতে বসে বৃষ্টির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়া, কিংবা চা,পকোড়া খেতে খেতে সিনেমায় ডুবে যাওয়া, তা কিন্তু নয় । প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সেরা সময় কিন্তু বর্ষাকাল । বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ে মেঘের ছোঁয়া, বৃষ্টি দেখতে দেখতে কিংবা ভিজতে ভিজতে সমুদ্রে রোম্যান্টিক সন্ধ্যা কাটানো,জঙ্গলে সবুজের আরাম... যা আপনাকে, আপনার মন-প্রাণকে মুগ্ধ করবে, স্নিগ্ধ করবে ।
ঘুরতে যাওয়ার আসলে কোনও সময় হয় না । ইচ্ছা, নেশা আর প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য যে কোনও ঋতুই পারফেক্ট । যখনই 'মন বসবে না শহরে, ইট-পাথরের নগরে'...ঘুরে আসুন আপনার পছন্দের জায়গায় । বর্ষার জন্য অনেকেই জুন-জুলাই মাসটা এড়িয়ে চলেন । কিন্তু, প্রকৃতির রূপ খোলতাই হয় এই সময়ই । তাই ইঁদুর-দৌড়ের জীবন থেকে দিন কয়েকের জন্য ছুটি নিতে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এই বর্ষাতেই । কিংবা যাঁদের বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যে বিয়ে হয়েছে, তাঁরা বর্ষায় হানিমুনের জন্য কোথায় যাবেন ভাবছেন ? আপনাদের জন্য বাংলার কাছে পিঠেই ৫ টি সেরা মনসুন ডেস্টিনেশনের খোঁজ রইল ।
ডুয়ার্স
জঙ্গলের রূপ খোলে কিন্তু বর্ষাতেই । বৃষ্টির জলে আরও সবুজ হয়ে ওঠে প্রকৃতি । তাইতো বর্ষার দিনগুলিতে ছবির মতো সুন্দর হয়ে ওঠে ডুয়ার্স । যদিও, এইসময় জঙ্গল সাফারি বন্ধ থাকে ডুয়ার্সে । তবে, ডুয়ার্সে আরও আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে । যেমন- নদীর পাশে, নুড়ি-পাথরের উপর বসে বর্ষায় ডুয়ার্সকে উপভোগ করতে মূর্তি ঘুরে আসতে পারেন । এছাড়া, ঝালং, বিন্দু, প্যারেন, মংপং, ইয়েলবং, গীতখোলার মতো জায়গাও প্ল্যান করতে পারেন । জঙ্গল খোলা না থাকলেও, ক্যাম্প করার জন্য হর্নবিল জঙ্গল ক্যাম্প, টুকটুকি ওয়াচ টাওয়ার, কালিকাপুর জঙ্গল ক্যাম্প, ধুপঝোরা ইকো ট্যুরিজম ক্যাম্প, পানঝোরা জঙ্গল ক্যাম্পগুলি খোলা থাকে । সেখানেও আপনি জঙ্গলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন । হানিমুনের জন্য আদর্শ ।
কীভাবে যাবেন ?
ডুয়ার্সের যে কোনও জায়গায় যেতে গেলে প্রথম নিউ জলপাইগুড়ি কিংবা নিউ মাল জংশনে নামতে হবে । তারপর সেখানে থেকে ডুয়ার্সে যাওয়ার জন্য গাড়ি পেয়ে যাবেন । থাকার জন্য প্রচুর হোটেল, হোম স্টে , রিসর্ট পেয়ে যাবেন ।
দুর্গাডিহি
নির্জনে যদি দুই-একদিন ছুটি কাটাতে চান, তাহলে ঘুরে আসুন দুর্গাডিহি । কোথায় এই জায়গা ভাবছেন ? পুরুলিয়ার পর্যটন মানচিত্রে জ্বলজ্বল করছে নামটা । এটা আসলে একটি জলাধার । চারপাশে সবুজ পাহাড়, মাঝে মাঝে পাখিদের কলতান মন ভাল করে দেবে । তাই, হাতে দু'দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসুন দুর্গাডিহি । আর সময় যদি হাতে বেশি থাকে তাহলে পুরুলিয়ার পাশে গড়পঞ্চকোট থেকেও ঘুরে আসতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন ?
হাওড়া থেকে বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া চলে যান । তারপর সেখান থেকে গাড়িতে দুর্গাডিহি । জলাধারের পাশে রয়েছে ইকো-রিসর্ট ।
মুকুটমণিপুর
জঙ্গল, কংসাবতী নদী ও পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা 'বাঁকুড়ার রানি' মুকুটমনিপুর । বাঁকুড়া থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । বর্ষাতে যেমন সবুজ হয়ে ওঠে চারপাশ, তেমনই নদীতে ফুলে-ফেঁপে ওঠে জল । আর সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে মুকুটমণিপুর । এক কাপ চা, স্ন্যাকস আর নৌবিহার... ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ হবে না ।
মুকুটমণিপুর গেলে দখতে পাবেন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ। ঘুরে দেখতে পারেন পরেশনাথ মন্দির, মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট ও ডিয়ার পার্ক।
কীভাবে যাবেন ?
হাওড়া থেকে পুরুলিয়াগামী ট্রেনে চেপে বাঁকুড়া স্টেশন নামতে হবে। সেখান থেকে মুকুটমণিপুর যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। আর রাত্রিবাসের জন্য প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি হোটেল রয়েছে ।
বগুরান জলপাই
বর্ষায় হানিমুনে যদি সমুদ্রে যেতে চান, তাহলে একঘেয়ে দিঘা বা মন্দারমণি নয়, ঘুরে আসুন অফবিট ডেস্টিনেশন বগুরান জলপাই থেকে । একেবারে নির্জন সমুদ্র সৈকত । লাল কাঁকড়ার বিচ দেখতে পাবেন । বর্ষায় এখানকার শালপিয়ালের জঙ্গল যেন আরও সবুজ হয়ে ওঠে । নবদম্পতিদের জন্য একেবারে আদর্শ বললে ভুল হবে না ।
বগুরান জলপাই-এর খুব কাছেই রয়েছে জুনপুট, বাঁকিপুট, কপালকুন্ডলা মন্দির, দরিয়াপুর লাইট হাউস । সময় হাতে থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গাগুলি থেকেও ।
কীভাবে যাবেন ?
ট্রেনে আসলে কাঁথি স্টেশনে নামতে হবে । তারপর সেখান থেকে টোটো করে সোজা ডেস্টিনেশনে । এছাড়া সড়কপথে দিঘা যাওয়ার যে কোনও বাসে চড়ে কন্টাই বাস স্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে অটো বা টোটো ধরে বগুরান জলপাই চলে আসতে পারেন । তবে, এখানে থাকার জায়গা কম । একটিমাত্র রিসর্ট আছে । নাম সাগর নিরালা । যেখানে অগ্রিম বুকিং করা থাকলে ভাল ।
সুন্দরবন
বর্ষায় সুন্দরবন মানেই সবুজের সৌন্দর্য্য । জলে টইটম্বুর থাকে নদী-নালা । বর্ষায় সুন্দরবনের আরও এক আকর্ষণ হল ইলিশ । এই সময় ইলিশ উৎসবের আয়োজন করে থাকেন অনেকেই । লঞ্চে ঘুরতে ঘুরতে ইলিশের নানা পদে মধ্যাহ্নভোজনটা সারতে মন্দ লাগবে না । সারারাত লঞ্চে থাকা, ঘোরার মতো সুযোগও থাকে । আর ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের মাঝে যদি সৌভাগ্যবশত বাঘের দেখা পেয়ে যান, তাহলে তো কোনও কথাই নেই ।
কীভাবে যাবেন ?
ট্রেনে ক্যানিং পৌঁছে বা সড়কপথে গোসাবা এসে আপনাকে জলপথে পৌঁছতে হবে সুন্দরবন ।