
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্গাপুজো আর কালীপুজোর পর এবার পালা জগদ্ধাত্রী পুজোর। বাংলার চন্দননগর ও কৃষ্ণনগর জগদ্ধাত্রী আরাধনার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। যদিও এই পুজো চারদিন ধরে চলে, মূল পূজা হয় নবমীর দিনই। সেদিন নিয়ম মেনে সম্পন্ন হয় দেবীর আরাধনা ও পুজোপাঠ। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি আনতে এই দিনে কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করা অত্যন্ত শুভ। দেখে নিন, জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনে কোন কোন নিয়ম মানা উচিত।
** জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীতে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠুন।
** বাসি ঘর পরিষ্কার করে স্নান সেরে ফেলুন। পরে নিন শুদ্ধ বস্ত্র। উজ্জ্বল লাল কিংবা হলুদ বর্ণের পোশাক পরুন। কালো কিংবা সাদা রং এড়িয়ে চলুন।
** জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীতে বহু মহিলা উপবাস করেন। আর উপবাস করতে না পারলে নিরামিষ খাবার খাওয়া উচিত বলেই মত শাস্ত্রজ্ঞদের।
** সম্ভব হলে আপনার সাধ্যমতো সামগ্রী দিয়ে দেবী জগদ্ধাত্রীকে অর্পণ করুন।
** এদিন দেবীকে শাড়ি দিলে লাল কিংবা হলুদ বর্ণের শাড়ি অর্পণ করুন।
** নবমীর দিন জগদ্ধাত্রী পুজো দেওয়ার পর আমলকি গাছ প্রদক্ষিণ করতে পারেন। তাতে মনোস্কামনা পূরণ হবে।
** বাড়িতে কোনও কন্যাসন্তান থাকলে তাকে এদিন উপহার দিতে পারেন।
** কোনও দরিদ্র মানুষকে সাধ্যমতো দান করুন।
‘জগদ্ধাত্রী’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল— জগৎ অর্থাৎ ত্রিভুবন, এবং ধাত্রী অর্থাৎ ধারণকর্ত্রী। অর্থাৎ, যিনি সমগ্র বিশ্বকে ধারণ ও রক্ষা করেন, তিনিই জগদ্ধাত্রী। তিনি সত্ত্বগুণের প্রতীক এবং অহংকার নাশ ও জগতের রক্ষণ-পোষণের জন্যই তাঁর আবির্ভাব। তাঁর আবির্ভাবের পেছনে দুটি প্রধান পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত। প্রথম এবং সর্বাধিক পরিচিত কাহিনিটি পাওয়া যায় উপনিষদ ও কাত্যায়নী তন্ত্রে। কথিত আছে, মহিষাসুর বধের পর দেবতারা নিজেদের শক্তিতেই বিভোর হয়ে ওঠেন। তাঁদের মনে জন্মায় অহংকার— তাঁরা ভাবেন, অসুরবধের কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তাঁদেরই, কারণ দেবী দুর্গা তো তাঁদের সম্মিলিত শক্তিরই প্রকাশ।
এই দেবতাদের অহংকার ভাঙার জন্যই দেবী তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হন। দেবতাদের শক্তি পরীক্ষা করতে তিনি তাঁদের দিকে একটি তৃণখণ্ড নিক্ষেপ করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, দেবতারা কেউই সেই তৃণ সরাতে পারেননি— ইন্দ্র তাঁর বজ্র নিক্ষেপ করেও ব্যর্থ হন, অগ্নিদেব সেটিকে দগ্ধ করতে পারেন না, বায়ু উড়িয়ে ফেলতে পারেন না, এমনকি বরুণও সেটিকে জলে ভাসাতে অক্ষম হন। শেষমেশ দেবতারা উপলব্ধি করেন যে তাঁদের সমস্ত শক্তির উৎস আসলে দেবীই। তখনই তাঁদের সামনে দেবী চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী রূপে প্রকাশিত হন— প্রমাণ করেন, তিনিই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারিণী, রক্ষক এবং পোষক শক্তি।
আরেকটি মত পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। এই মত অনুসারে, যুদ্ধের সময় মহিষাসুর হাতির রূপ ধারণ করেছিল। সংস্কৃতে হাতির আরেক নাম ‘করী’। হস্তীরূপী এই অসুরকে বধ করার জন্যই দেবী চতুর্ভুজা মূর্তিতে আবির্ভূতা হন। তিনি তাঁর চক্র দিয়ে সেই হাতির শুঁড় ছেদন করেন। দেবীর এই রূপটিই জগদ্ধাত্রী নামে পরিচিত। সেই কারণে দেবীর বাহন সিংহ একটি মৃত হাতির (করীন্দ্রাসুর) উপর দাঁড়িয়ে থাকে। তাই দেবীর আরেক নাম হল করীন্দ্রাসুরনিসূদিণী।
