দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ আপনি হয়তো নিপাট পোশাক পড়তে ভালোবাসেন। কোঁচকানো পোশাকে হয়তো আপনার মন খারাপ হয়। কিন্তু কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) বলছে, সপ্তাহের প্রথম দিন কোঁচকানো জামাকাপড় পরেই অফিস করুন। তাতে প্রকৃতি কিছুটা হলেও বাঁচবে।
নিপাট পোশাকের সঙ্গে প্রকৃতির কী সম্পর্ক?
গবেষণা বলছে, এক সেট জামাকাপড় ইস্ত্রি করার সময় ২০০ গ্রাম কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। শুধু এক সেট পোশাকেই যদি ২০০ গ্রাম গ্রিনহাউজ় গ্যাস নির্গত হয়, তা হলে অন্য ক্ষেত্রে প্রকৃতির কী হাল হচ্ছে! বিজ্ঞান এখন নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইডকে তার রূপ বদল করে ব্যবহারযোগ্য করতে চাইছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে এই গবেষণা।
এরই মধ্যে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)- কলকাতার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন এমন পদ্ধতির, যার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে ওলেফিন-এ পরিণত হয়। এই ওলেফিন বা অ্যালকিন শিল্পে ব্যবহার করা যায়। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসার-এর অধ্যাপক শান্তিস্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কার বিজয়ী স্বাধীন মণ্ডল।
তাঁদের গবেষণাপত্রটি ‘নেচার ক্যাটালিসিস’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী মহলেও প্রশংসা পেয়েছে তাঁদের আবিষ্কৃত পদ্ধতিটি। কী এই পদ্ধতি? কী করেই বা কার্বন ডাইঅক্সাইডের এমন রূপান্তর? স্বাধীন বলছেন, ‘কার্বন ডাইঅক্সাইডের রূপ যে বদলানো যায় না, এমন নয়। কিন্তু তা যেমন জটিল, তেমন খরচসাধ্যও। কার্বন ডাইঅক্সাইডকে কেমিক্যাল রিয়্যাকশনের মাধ্যমে অন্য তরল বা গ্যাসে রূপান্তর করা যায়। এর জন্য অনুঘটক হিসেবে প্রয়োজন প্ল্যাটিনাম বা এই ধরনের ধাতুর। কিন্তু সেই ধাতুগুলির দামও আকাশছোঁয়া। এর থেকে সাধারণত ইথানল মেলে। যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পদ্ধতি এবং খরচের কথা ভেবে আমরা এই পদ্ধতি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। এই পদ্ধতির জন্য উচ্চ তাপ এবং চাপেরও প্রয়োজন।’
তাঁর সংযোজন, ‘আমরা সেই জন্যই ফর্মাইলিন রিয়্যাকশনের মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে পেয়েছি ওলেফিন নামের এক রাসায়নিক। এই পদ্ধতির সব থেকে সুবিধা হলো, এর জন্য উচ্চ চাপ বা তাপ ছাড়াই দামী ধাতুর ব্যবহার না করেই সাধারণ পরিবেশে কম খরচে এই রাসায়নিক বিবর্তন সম্ভব।’
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই আবিষ্কার বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো কার্বন নির্গমন কমানো। তা না হলে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্রিন হাউজ় গ্যাসের রূপান্তর ঘটিয়ে তা ব্যবহার করা। কিন্তু তা যদি খরচসাধ্য হয়, তা হলে তাকে বাস্তবায়িত করায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই জন্যই এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে ওলেফিন নামের রাসায়নিক মেলে, শিল্পে তার বহুল ব্যবহার রয়েছে।
ডিটারজেন্ট পাউডার এবং সাবান তৈরির ক্ষেত্রে ওলেফিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফলে এই পদ্ধতি আগামী দিনে গেমচেঞ্জার হতে পারে। গবেষণাগারে যা সম্ভব, তা কি বৃহত্তর ক্ষেত্র অর্থাৎ শিল্পে কি উপযোগী? স্বাধীন বলছেন, ‘নিশ্চয়ই সম্ভব। কিন্তু তার জন্য আয়োজনও তেমন বৃহৎ হবে। আমরা এখনও হাতেকলমে তেমন করে উঠতে পারিনি। সেটা খুবই খরচসাধ্য। কোনও সংস্থা যদি এগিয়ে আসেন, তা হলে আমরা নিশ্চই সেই পদ্ধতি হাতেকলমে করতে পারব।’