এই প্রতিবেদন পড়তে পড়তে অবাক লাগাটাই স্বাভাবিক। এমনকি হার্ভার্ডের গবেষকরাও জানেন হেন পেপার প্রকাশিত হলে অনেকেই একে স্রেফ ধাপ্পাবাজি বলে উড়িয়ে দেবেন। ঘটনাচক্রে অনেক ক্ষেত্রে তাইই হচ্ছে। বিজ্ঞানীমহলেরই একটি অংশ এই দাবিকে মান্যতা তো দূর, গুরুত্ব দিতেও নারাজ। তবে গবেষকদের বক্তব্য, 'জ্ঞান থেকে প্রাপ্ত নম্রতা এবং খোলা মন নিয়ে এই পেপার বিবেচনা করা উচিত।'
'দ্য ক্রিপ্টোটেরেস্ট্রিয়াল হাইপোথেসিস: এ কেস ফর সায়েন্টিফিক ওপেননেস টু আ কনসিল্ড আর্থলি এক্সপ্লানেশন ফর আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা' শীর্ষক গবেষণাপত্রে UFO (আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট) বা UAP (আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা), অর্থাৎ মহাকাশে অপরিচিত কর্মকাণ্ডের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, স্পেসশিপে (মহাকাশযান) ভিনগ্রহীরা তাদের পৃথিবীর বন্ধুদের (যাদের বলা হচ্ছে 'ক্রিপ্টোটেরেস্ট্রিয়াল') সঙ্গে দেখা করতে আসে। গবেষণাপত্রের তিন লেখক টিম লোমাস (হার্ভার্ড), ব্রেন্ডান কেস (হার্ভার্ড) এবং মাইকেল পল মাস্টার্সের (মন্টানা) বক্তব্য, 'মহাকাশে অপরিচিত কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা মূলত দু'টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়- প্রথম, কনভেনশনাল টেরেস্ট্রিয়াল এক্সপ্লানেশন (মানুষের তৈরি প্রযুক্তির কারণেই UFO-র আগমন) এবং দ্বিতীয়ত এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল এক্সপ্লানেশন (মহাশূন্যের কোথাও থেকে উন্নত সভ্যতার প্রতিনিধিদের আগমন)।'
মানুষের ভিড়ে এলিয়েনরা (অর্থাৎ ক্রিপ্টোটেরেস্ট্রিয়াল) রয়েছে, তার প্রমাণ কী? চারটি হাইপোথেসিস (ক্রিপ্টোটেরেস্ট্রিয়াল হাইপথেসিস বা CTH4) সামনে রাখছেন গবেষকরা। প্রথম, সম্পূর্ণ ভিন্ন টাইম পিরিয়ড এবং গ্রহ থেকে এসেছে এই ক্রিপ্টোটেরেস্ট্রিয়ালরা এবং মানুষের ভিড়ে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে। দুই, মানুষ ছাড়া অত্যন্ত বুদ্ধিমান একটি প্রজাতি এই পৃথিবীতে বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছিল এবং এখানেই এখন আত্মগোপন করে রয়েছে। গবেষণাপত্রে ইঙ্গিত, এরা অনেকটা বাঁদরের মতো দেখতে হতে পারে এবং হয়তো কোনও অজানা, বুদ্ধিমান ডায়নোসরের বংশধর। তৃতীয়, পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া কোনও সভ্যতার অবশিষ্ট অংশ যারা এখনও কোনও না কোনও ভাবে রয়ে গিয়েছে। এবং চতুর্থ, অতিপ্রাকৃত ভাবে উদ্ভুত কোনও অজানা প্রাণী, যেমন পরী গোত্রের কিছু, যারা কখনও পৃথিবীতে এসেছিল।
তবে গবেষকরা এ-ও বলছেন, এই চারটি হাইপোথেসিস বিজ্ঞানমহলের একটি অংশে বিন্দুমাত্র কদর পাবে না। বিশেষ করে চতুর্থটি সটান খারিজ করে দেবেন অনেকেই। পেপারে তাই স্বীকার করা হয়েছে, 'CTH4-এর সবথেকে বড় দুর্বলতা হলো এর মৌলিক দিকগুলি অনেকের কাছেই অদ্ভুত ঠেকবে (STRANGENESS)। বিশেষ করে প্রথাগত ফিজ়িক্সের মডেলের আওতায় থেকে যাঁরা কোনও কিছুর ব্যাখ্যায় অভ্যস্ত, তাঁদের কাছে।' অতঃপর তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন, 'ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব অনেকের কাছে তা-ও যুক্তিগ্রাহ্য। কিন্তু পরীর ধারণা মেনে নেওয়ার কোনও উপায় নেই বহু বিজ্ঞানীর কাছে।'
এমনিতেই UFO নিয়ে ২০২৩ থেকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা অফিসার ডেভিড গ্রুশ দাবি করেছিলেন, ইউএসএ সরকার অত্যন্ত গোপনে UFO মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রুশের দাবি খারিজ করে দেয় পেন্টাগন। তাদের সঙ্গত করে নাসা জানায়, মহাকাশে তারা কোনও ভিনগ্রহীর সন্ধান এখনও পায়নি। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক পুরোদস্তুর জারি রয়েছে। তার মধ্যেই হার্ভার্ডের গবেষকদের এই পেপার নিঃসন্দেহে নতুন করে সেই বিতর্কের পালে হাওয়া লাগিয়েছে।