Life Style News

6 hours ago

Travel Escape: বৃষ্টিভেজা পাহাড় আর মেঘে ঢাকা রূপকথার শহর, কলকাতা থেকে খুব দূরে নয় এই স্বপ্নময় ঠিকানা

hill station near Kolkata
hill station near Kolkata

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : এখানে মেঘ আর কুয়াশা একসঙ্গে চাদর পেতে বসে না, কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলক দেখা নিয়েও কোনও প্রতীক্ষা নেই। তবুও এই জায়গার শান্ত সৌন্দর্যে যেন এক অদ্ভুত টান রয়েছে। একবার প্রকৃতির এই অনন্য রূপ চোখে পড়লে মন বারবার টেনে আনে ফিরে আসার জন্য। বৃষ্টিতে ভেজা ছোট ছোট টিলা, ঘন সবুজ বন আর আকাশজুড়ে ছায়া ফেলে থাকা কালো মেঘ— সব মিলিয়ে যেন এক নিঃশব্দ মোহজাল।

পাহাড়ের সন্ধানে যাঁরা শুধু উত্তরবঙ্গের কথাই ভাবেন না, এই স্থান তাঁদের জন্য। অচেনা, অজানা মোটেই নয়। বরং অনেকেই জানেন এই জায়গার নাম। তবে যাঁদের এখনও ঘোরা হয়নি, তাঁরা এই বেলা ঝট করে ঘুরে ফেলুন গড় পঞ্চকোট।

পুরুলিয়ার পাঞ্চেত পাহাড়ের পাদদেশে পূর্বপ্রান্তে রয়েছে পঞ্চকোট রাজাদের ভাঙা গড়। অরণ্য ঘেরা ধ্বংসাবশেষ আজও পর্যটক মহলের আকর্ষণ। ফাল্গুন-চৈত্রে গড় পঞ্চকোটের আকর্ষণ যদি হয় আগুনরঙা পলাশ, তবে ঘনঘোর বর্ষা হাতছানি দেয় প্রকৃতির শ্যামলিমা উপভোগের

এখানে বৃষ্টির আলাদা মাধুর্য আছে। থেকে থেকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আসে। জলের তোড়ে তখন চারপাশ সাদা। আবার খানিক ক্ষণ বাদেই যেন একেবারে থমকে যায় বারিধারা। বৃষ্টিতে ধৌত পাঞ্চেত পাহাড় তখন ঘন সবুজ। কখনও কখনও পাহাড়ের মাথায় দেখা যায় মেঘের হালকা ভাসা চাদর।

সকাল বেলা হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে কুমারডুবি, বরাকর বা আসানসোল, কোনও একটি স্টেশনে নামলেই হয়। তার পর অটো বুক করে যাওয়া যায় গড় পঞ্চকোট। রাস্তা গিয়েছে পাঞ্চেত জলাধারের উপর দিয়ে। মজার ব্যাপার হল, জলাধারের উপরের রাস্তাটির দুই প্রান্ত পশ্চিমবঙ্গে, মাঝেরটুকু শুধু পড়ে ঝাড়খণ্ডে। সেই রাস্তা দিয়ে আসার সময় বর্ষার পাঞ্চেত জলাধারের যে রূপ চোখে পড়ে, প্রথম দর্শনেই মনে হতে পারে, আসাটা সার্থক।


গড় পঞ্চকোটে সরকারি, বেসরকারি দুই রকম থাকার জায়গাই আছে। প্রতিটি আবাস এমন জায়গায়, যেখান থেকে প্রকৃতির উজাড় করা রূপ দৃশ্যমান হয়।

বর্ষায় গড় পঞ্চকোট আসার একটি কারণ যদি শ্যামল প্রকৃতির শোভা দর্শন হয়, আর একটি কারণ, পাঞ্চেত এবং মাইথনের সৌন্দর্য উপভোগ করা। গড় পঞ্চকোটে ঢুকেই প্রথম চোখে পড়ে, সম্প্রতি সংস্কার করা পঞ্চরত্ন মন্দিরের মধ্যে একটি, রাস মন্দির। লোকে এটিকে ‘গড় পঞ্চকোট মন্দির’ও বলেন। তার অদূরে কয়েকটি ছোট ছোট চায়ের দোকান। ঘন জঙ্গলের মোড়কে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য একটি নজর মিনারও আছে।


শীত বা বসন্তে এলে অরণ্যপথে এদিক-সেদিক যাওয়া যায় বটে, তবে বর্ষায় সাপের ভয় থাকে। তাই স্থানীয়দের পরামর্শ এড়িয়ে বেশি সাহস দেখানো অনুচিত হতে পারে। গড় পঞ্চকোটের মন্দির দর্শন করে অটো নিয়ে ঘুরে নিতে পারেন গড়ের ধ্বংসাবশেষ। নিতুড়িয়া ব্লকে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি প্রাচীন গড় এখনও পঞ্চকোট রাজত্বের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। গড় বলতে এখন শুধুই ভেঙে পড়া দেওয়াল। কাছাকাছি যাওয়া যায় না। গজিয়ে উঠেছে বট, অশ্বত্থ গাছ। স্থানীয়েরা বলেন, রাজা দামোদর শেখর ছিলেন পঞ্চকোটের প্রথম রাজা। পুরুলিয়ার ঝালদা অঞ্চলের পাঁচ আদিবাসী সর্দারের সাহায্যে এখানে তিনি রাজত্ব গড়ে তোলেন। আর সেই থেকেই নাম গড় পঞ্চকোট। ‘গড়’ মানে দুর্গ, ‘পঞ্চ’ মানে পাঁচ এবং ‘কোট’ মানে গোষ্ঠী।

পঞ্চরত্ন বা গড় পঞ্চকোট মন্দির থেকে গড় দেখতে যাওয়ার পথেই পড়ে এক রাস্তা, ফাগুনে যা আগুন পলাশে ভরে যায়। তবে আষাঢ়-শ্রাবণে সবই সবুজ। আলাদা করে গাছ চেনার উপায় থাকে না। গড় পঞ্চকোটের একেবারে কাছেই পাঞ্চেত জলাধার। মাইথনের দূরত্বও খুব বেশি নয়। অটো ভাড়া করে এক দিনেই সাইট সিইং করে নেওয়া যায়। দেখা যায় কল্যাণেশ্বরী মন্দির। এই অঞ্চলে একটি খোলামুখ কয়লাখনিও আছে। চাইলে কেউ এখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন বড়ন্তিতেও। অটো চালককে বললেই তিনি নিয়ে যাবেন। সেটিও বেশ সুন্দর।

বর্ষার ভ্রমণে গড় পঞ্চকোট রাখার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল জায়গাটি কলকাতা থেকে খুব বেশি ষ দূরে নয়। ফলে, বিস্তারিত পরিকল্পনা ছাড়াই বেরিয়ে যাওয়া যায়।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে একাধিক ট্রেন রয়েছে যেগুলি কুমারডুবি, বরাকর বা আসানসোল থামে। একদম সকালেই আছে ব্ল্যাক ডায়মন্ড। হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল ৬টা১৫ মিনিটে। বরাকর পৌঁছয় সকাল ১০টায়। এ ছাড়া শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ধরতে পারেন। কলকাতা থেকে বাসেও আসানসোল যাওয়া যায়। বরাকর থেকে গড় পঞ্চকোটের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটারের মতো। আসানসোল থেকে দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে গাড়িতে গেলেও ঘণ্টা ৬-৭ সময় লাগবে। দূরত্ব ২৪৫ কিলোমিটার।

কোথায় থাকবেন?

বেসরকারি একাধিক থাকার জায়গা আছে। পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন নিগমেরও অতিথি আবাস রয়েছে। গড় পঞ্চকোট মন্দিরের কাছেও সরকারি পর্যটন আবাস রয়েছে। আগাম অনলাইনে বুকিং করে যাওয়া যায়।

You might also like!