দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবাদের কথা আমরা সকলেই জানি—দাঁত থাকতে তার মর্ম বুঝি না। অথচ দাঁতের যত্ন নেওয়া কোনও বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। শরীর সুস্থ থাকলেও, দাঁত ও মাড়ির পরিচর্যা অবহেলা করলে ভবিষ্যতে বিপদ ঘনাতে পারে।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এর চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যারা নিয়মিত দাঁতের সঠিক যত্ন নেন, তাঁদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কম। অর্থাৎ, দাঁতের গুরুত্ব যারা বোঝেন, তাঁরা শুধু দাঁতই নয়, শরীরকেও রক্ষা করেন বড় রোগের হাত থেকে।
একমাত্র দাঁতে ব্যথা বা কোনও সমস্যা না হলে বেশির ভাগ মানুষই চিকিৎসকের কাছে যান না। দন্ত্যচিকিৎসকদের যদিও পরামর্শ, প্রতি ছ’মাসে এক বার দাঁত দেখিয়ে নেওয়া ভাল। সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে গোড়াতেই তার প্রতিকার করা যাবে। দাঁত ভাল আছে, এটা ভেবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। দাঁতের সঙ্গে ক্যানসারের কী সম্পর্ক তা বুঝিয়ে বলেছেন এমসের দুই চিকিৎসক অভিষেক শঙ্কর ও বৈভব সাহনি। তাঁদের মতে, যত রকম রোগ আছে, তাদের সূত্রপাত হতে পারে দাঁত ও মাড়ি থেকেই। আসলে খাদ্যবস্তুতে থাকা রাসায়নিক মুখের লালায় মিশেই পেটে যায়। যদি আগে থেকেই সে সব টক্সিনকে আটকে দেওয়া যায়, তা হলে ক্ষতি কম হবে। সে জন্যই মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ভাল রাখা খুব জরুরি।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পরফাইরোমোনাস জিঞ্জিভালিস ও প্রিভোটেলা ইন্টারমিডিয়া নামে দু’রকমের ব্যাক্টেরিয়া জন্মায় মুখে, যারা ক্যানসারের জন্য দায়ী। দাঁতে বা মাড়িতে কোনও রকম সংক্রমণ হলে তার থেকে এই দুই ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে পারে, যা পরবর্তীতে মুখগহ্বরের ক্যানসার এবং ‘হেড অ্যান্ড নেক’ ক্যানসারের কারণ হয়ে উঠতে পারে। মুখ, গলা, স্বরযন্ত্র, টনসিল গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, প্যারোটিড গ্রন্থি, নাক, সাইনাস, খাদ্যনালির উপরের অংশ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তাকে 'হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার' বলা হয়। এর থেকে বাঁচতে মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি।
দাঁত ও মাড়ি ভাল রাখতে
১) দাঁতে কোনও অস্বস্তি বুঝলেই চিকিৎসকের কাছে যান। আপনি অসুবিধাটুকু বুঝবেন। কিন্তু ভিতরে কী হয়েছে, কেন হয়েছে, সেটা চিকিৎসকই বুঝবেন। সেই মতো চিকিৎসা করবেন।
২) দাঁতের শিকড়ের অংশে এনামেল থাকে না। নোংরা জমে মাড়ি নীচে নেমে গিয়ে দাঁতের শিকড় বেরিয়ে এলে শিরশিরানি হতে পারে। তার জন্য বিশেষ টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। দাঁতে ফিলিং করতে হতে পারে।
৩) রাতে ব্রাশ করা জরুরি। দাঁতে আটকে যায়, এমন খাবার না খাওয়াই ভাল।
৪) ছোটদের ক্ষেত্রে নানা জিনিস মুখে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের দুধের দাঁত উঠলেই যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। বার বার কুলকুচি করাতে হবে।
৫) দাঁত ভাল রাখতে অপ্রয়োজনে মেডিকেটেড টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
৬) শুধু সর্দি বা কাশির জন্য নয়, মুখের ভিতরের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও গার্গল করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফলের রস বা ঠান্ডা নরম পানীয় খাওয়ার পর মুখের লালার পিএইচ-এর ভারসাম্য নষ্ট হয়। গার্গল করলে যা আবার আগের পর্যায়ে ফিরে আসে।
৭) সরু সুতোর সাহায্যে দু'টি দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বের করে নেওয়ার পদ্ধতিতেই বলা হয় ফ্লসিং। প্রতি বার খাওয়ার পর দাঁত মাজা সম্ভব না হলে, মুখ ধুয়ে নিয়ে করা যেতে পারে ফ্লস। তার জন্য অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
৮) নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। তিন মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত।