ডাঃ তাপস কুমার কর : অনেক সময়ে দেখা গেছে মহিলাদের ব্রেস্টে বা
স্তনের ভিতর এক অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হয়ে টিউমারে পরিণত হয়। এই টিউমারের ধরণ যদি ম্যালিগন্যান্ট
অর্থাৎ ক্যানসার জাতীয় হয়ে থাকে তাহলে তাকে ব্রেস্ট ক্যানসার বলা হয়। এই ম্যালিগন্যান্ট
জাতীয় টিউমার খুব দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের কোন সঠিক কারণ
জানা যায়নি। তবে কোনও সম্ভাব্য কারণ থেকে ব্রেস্ট ক্যানসার হতে পারে, তা হল ---
- ব্রেস্ট ফিডিং না করানো।
- পশ্চিম দেশীয় জীবনচর্চা।
- পর্যাপ্ত ভিটামিনের অভাব।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হরমোন
রিপ্লেসমেন্ট চালিয়ে যাওয়া।
- দেরীতে বিবাহ হওয়া।
স্তনে ফোলাভাব
- ব্রেস্টে ব্যথাহীন লাম্প
- দুটি ব্রেস্টের মধ্যে আকারগত পরিবর্তন
- লিম্প বিকৃত হওয়া বা সেখান থেকে রস বা
রক্ত পড়া
- বগলের পাশে ফোলাভাব
- নিপলের চারপাশে র্যাশ
- ব্রেস্টে যন্ত্রণা হওয়া।
- স্তন ক্যানসার নির্ণয় করার বিশেষ উপায়
হয় যে রোগী আয়নার সামনে নিজেরই স্তন নিজে পরীক্ষা করা।
- যদি কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায় তখন
ম্যায়োগ্রাফিক পরীক্ষা করা হয়।
- রোগীর বয়স কম হলে এবং স্তনের ঘণত্ব বেশি
থাকলে এম. আর. আই. করা হয়।
- এছাড়া ক্যানসার নিশ্চিত করার জন্য বায়োপ্সি করা হয়। এখন সেন্টিনেল লোড বোয়োপ্সি করার প্রচলন বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে বগলের গ্ল্যান্ড ডাই পুস করে ক্যানসারের অস্তিত্ব দেখা হয়। রেজাল্ট পজিটিভ হলে আনুষঙ্গিক অন্যান্য গ্ল্যান্ডগুলিও চিকিৎসক অপসারণ করে থাকেন।
ব্রেস্ট ক্যানসার শনাক্তকরণের আদর্শ পরীক্ষা
হল ম্যায়োগ্রাফি। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারই উচিত নির্দিষ্ট সময়ে এই পরীক্ষা করে
নিশ্চিত হওয়া। ম্যায়োগ্রাফি হল স্তনের এক্স-রে। এই পদ্ধতিতে হাই কোয়ালিটি ডিজিটাল ছবি
পাওয়া সম্ভব। সাধারণত ওপর থেকে নিচে এবং সাইড থেকে সাইডে এই এক্স-রে করা হয়। স্তনের
যে কোনও স্পট বা টিউমার ম্যায়োগ্রাফির মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
- এক্ষেত্রে সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি
দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
- প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রেস্ট এবং কানের
গ্ল্যান্ডগুলি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তারপর
কেমোথেরাপি চলে।
- অনেক সময়ে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি একইভাবে
নিতে হতে পারে।
- বর্তমানে ব্রেস্ট বাঁচিয়ে অর্থাৎ ব্রেস্ট
প্রিজারভেশন করে সার্জারি করা হয়। ফলে ব্রেস্টটি সম্পূর্ণভাবে অপসারণের প্রয়োজন পড়ে
না।
ব্রেস্ট ক্যানসারে যেহেতু ইস্ট্রোজেন হরমোনের
একটি প্রাধান্য রয়েছে সেহেতু এক্ষেত্রে এই হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট
থেরাপি দেওয়া হয়। বর্তমানে এই চিকিৎসার সফলতা ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণত টানা পাঁচ বছর থেরাপি
চলে।
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার যদি নির্ণয়
করা যায় তাহলে এটি ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য।