Heart Health : হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অবিলম্বে নিজের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন !
Heart Health
দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ মানবদেহে হার্ট
বা হৃদয় এমন এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যার গতিশীলতা চার থেকে ছয় মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে
গেলে একজন মানুষ মারা যেতে পারে। তাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য একটি সুস্থ হার্টের
দরকার। তার জন্য প্রয়োজন দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনা। তাহলে হঠাৎ হৃদরোগ বা দীর্ঘকালীন
হার্টের অসুখ থেকে খানিকটা হলেও নিজেকে বাঁচানো যাবে। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলেন, বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই এসব মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন
এবং কায়িক পরিশ্রমের অভ্যাস তৈরির মাধ্যমে। যেমন --- বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া,
বলা হয় পেট থেকে সুস্থতার শুরু। আপনি কি খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে আপনি কতটা সুস্থ
থাকেন। ফাইবার বা আঁশ
সমৃদ্ধ খাবার রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে। ফাইবার সমৃদ্ধ বিভিন্ন সবজি
যেমন - শাক, ঢ্যাড়স, সিম, মটরশুঁটি, কলাই, ডাল, জাতীয় শষ্য, ফল, এছাড়া হোল গ্রেন, আটার
রুটি, বাদামি চালে প্রচুর ফাইবার থাকে।
ট্রান্স ফ্যাট,
স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খাওয়া দরকার। মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ হৃদরোগে
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা
বাড়িয়ে দেয়। ভোজ্য তেলের যেমন --- সয়াবিন, পাম-এর সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত অর্থাৎ হাইড্রোজেনেশন
করলে তেল জমে যায় এবং ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। যেমন - ডালডা, চিজ, দুধের সর, লাল মাংস,
মাখন কেক, বিস্কুট ও নারকেল তেলে প্রচুর মাত্রায় ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড
ফ্যাট আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে খাবারে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ মোট ফ্যাটের
শতকরা দু ভাগের কম হতে হবে। অন্যদিকে রান্নায়
অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল, তিলের তেল, ধানের কুড়োর তেল, রাইস ব্রান তেল স্বাস্থ্যের
পক্ষে উপকারী। তবে যেকোনো তেলই ১৫ দিন ব্যবহার করার পর পরিবর্তন করলে ভালো হয়। তেলে
ভাজার পর টিস্যু পেপার দিয়ে বাইরে সেঁটে থাকা তেল মুছে নিন। লবণ কম খাওয়া
- মাত্রাতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। আর এর জন্য বেড়ে যায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের
ঝুঁকিও। উচ্চ রক্তচাপের জন্য মানুষের করোনারি হার্টের অসুখের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে
দেয়।
দিনে সর্বোচ্চ
ছয় গ্রাম বা এক চামচ লবণ খাওয়া যেতে পারে। লবণ কমবেশি খাওয়া একটি অভ্যাসের ব্যাপার।
লবণ যত কম খাওয়া হবে তাই চাহিদাও তত কমে যাবে। আমরা ফাস্টফুডে যে সমস্ত খাবার খাই
- যেমন পিৎজা, বার্গার, চিপস, টিনজাত খাবার ইত্যাদি খাবারের মধ্যে প্রচুর লবণ থাকে।
তাই কাঁচা লবণ না খাওয়ার পাশাপাশি টিনজাত বা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়াও বন্ধ করতে হবে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লবণের পরিবর্তনে মশলা দিয়ে খাবার তৈরি করলে হৃদরোগের ঝুঁকি
অনেকটাই কমবে। হৃদরোগের জটিলতা
প্রতিরোধের জন্য প্রধান উদ্দেশ্য থাকে শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। তার জন্য হার্টকে
সতেজ ও সুস্থ রাখতে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ও খনিজ পদার্থ খাবার আমাদের
সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চরক্তচাপ
প্রতিরোধ করে। অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের
মাধ্যমে এসব ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া সম্ভব। এসবের জন্য ওষুধের বতিক্রম ভিটামিন-ডি। কারও
শরীরে ভিটামিন-ডি ও মিনারেলের অভাব থাকলে তা অবশ্যই সঠিক খাবারের মাধ্যমে পূরণ করতে
হবে।
ক্যালোরি কমানোর
মাধ্যমে দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
হৃদরোগের ঝুঁকি
কমাতে তাহলে খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আপনি যদি চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট
চর্বিযুক্ত খাবার কম খান, ভিটামিন ও মিনারেল আছে এমন খাবার বেশি খান, তাহলে মোটা হয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। মনে রাখা দরকার দৈহিক ওজন বাড়লে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে
দেয়। বিশেষ করে কোমরে চর্বি জমা হলে। পুরুষের কোমর যদি ৩৭ ইঞ্চি আর নারীর কোমর ৩১.৫
ইঞ্চির বেশি হয়, তাহলে ওজন কমাতে হবে। ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব।
শারীরিক পরিশ্রমও
দরকারঃ ১) হার্ট সম্পূর্ণ শারীরিক সুস্থতার জন্য কিছু নিয়ন্ত্রিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম
খুব দরকার। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে একজন সুস্থ মানুষের প্রতি সপ্তাহে ১৫০
মিনিট মাঝারী ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট ভারি ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম,
হাঁটা, দৌড়ানোর অভ্যাস অত্যন্ত ভালো কাজ দেয় হার্ট সুস্থ রাখতে।
২) বসে থাকার কাজ
কম করলে ভালো হয়। আধুনিক সময়ে আমরা কাজের জন্য কম্পিউটার, ঘরের মহিলা, বয়স্ক সদস্যরা
অনেকটা সময় টিভির সামনে বসে কাটাই, এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কোন সচলতা ছাড়া এক জায়গায়
বসে থাকা যেমন হার্টের বিভিন্ন অসুখ তৈরি করে, তেমনি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এর
কারণে মানুষের আয়ু কমে। আপনার সারাদিনের বেশি সময় যদি বসে কাজ হয়, তাহলে প্রতি ৪০ মিনিট
পর উঠে ২-৫ মিনিট হাঁটুন। আর নিজের অবসর সময়ে ব্যায়াম করুন।
৩) পর্যাপ্ত মানের
ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। যাদের পর্যাপ্ত
ঘুম হয় না, তাদের স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস ও হতাশার ঝুঁকি
বেশি থাকে। প্রচুর মানুষ আছেন, যারা অস্বাস্থ্যকর উপায়ে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সহ্য
করে যেমন অতিরিক্ত খাওয়া, মদ্যপান বা ধূমপান যতটা সম্ভব এই অভ্যাস বর্জন করা ভালো।
বরং স্ট্রেস কমাতে হালকা শরীরচর্চা, ব্যায়াম, হাঁটা, মেডিটেশন বিশেষভাবে কাজ দেয়। অতিরিক্ত
অনিয়ম, মানসিক চাপ, ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ, সেরিব্রোভাসকুলার সমস্যায় মৃত্যুকে সহজে ডেকে
আনে।
৪) ধূমপান বর্জনঃ
আমাদের শরীরের ওপর সিগারেট বিশেষ একটি নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। তাই সিগারেটে অভ্যস্থ মানুষজনের
উচিত ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন ধূমপায়ীর তুলনায় একজন অধূমপায়ী
প্রায় দ্বিগুণ বাঁচে। ধূমপান ফুসফুস এবং হার্টের প্রচুর ক্ষতি করে। ধূমপানে অভ্যস্থ
একজন ব্যক্তি এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে কিছুদিন পরেই বুঝতে পারবেন নিজের শরীরে
সচলতা সুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।
নিয়মিত চিকিৎসকের
সংস্পর্শে থাকা দরকার। আপনার যদি হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে বা অন্যান্য ক্রনিক অসুখ,
ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ বা উচ্চ রক্তচাপ, তাহলেই অবশ্যই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মধ্যে থাকুন।
ইতিমধ্যে হার্টের সমস্যা ধরা পড়লে সতর্ক থাকুন, কোলেস্টেরল, সুগার নিয়ন্ত্রণে যে কোনো
শারীরিক অসুবিধায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলুন।