Health

1 year ago

Viral fever : ভাইরাল ফিভার সম্পর্কে কিছু জরুরী তথ্য

viral fever
viral fever

 

ডাঃ পার্থ সরকার : ভাইরাল ফিভার - খুবই প্রচলিত কথা, মূলত করোনা অতিমারি কালে ভাইরাল ফিভার বিষয়টি জনজীবনে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ভাইরাল ফিভার যা ঋতুগত আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে যে কোনো কারোর হতে পারে এবং করোনা আক্রমণের পরিবেশ তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই সমস্যা ছিল।

শীতের পরে বসন্তের হাওয়া, গরমের ঘাম, এসির ঠান্ডা, ফ্রিজের ঠান্ডা জল, বর্ষার স্যাঁতসেত পরিবেশ লোকজনের ভীড়ে ঠাসা বাসে ট্রেনে যাওয়া আসা --- ইত্যাদি সবকিছুই ভাইরাল ফিভারের জন্য দায়ী। কারণ এই সময় যে কোনোও সংক্রামক রোগ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ খুব বৃদ্ধি পায়।

 

রেসপিরেটরি সিক্রেশন, কনট্যাক্টের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ধরণের ভাইরাস আবার কয়েক ঘন্টা ধরে বিভিন্ন জায়গায় যেমন - দরজার হাতল, ইত্যাদিতে বেঁচে থাকে। এইসব জায়গায় হাত দিলে কনট্যাক্টের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই স্কুল, সুইমিং পুলের কমন জায়গা থেকে ভাইরাল ইনফেকশন সহজে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় সাধারণত বাচ্চাদের হতে পারে সর্দি-কাশি, রোটাভাইরাল ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু-হ্যান্ড-ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ। যে কোনো ভাইরাল ইনফেকশনের প্রথম লদণই হল ভাইরাল ফিভার। ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তাই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।


  ভাইরাস ঘটিত জ্বর তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি থাকে না। মূলতঃ এটা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর।

* জ্বর তীব্র হতে পারে। সঙ্গে খুব গলা ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা, কারও কারও ক্ষেত্রে গায়ে র্যা শ বেরোতে পারে। হাতে পায়ে, হাড়ের অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হয়।

* জ্বরের সঙ্গে নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, খুকখুক কাশি, ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়া, এগুলো প্রকট হয়।

* এই জ্বর বেশিদিন থাকলে তা ডেঙ্গুর জ্বর, এখনও তো করোনা ভাইরাসের সাথে মিলে গিয়ে করোনা পজিটিভও হতে পারে। তাই পরিস্থিতি বুঝে চিকৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

 বয়স্ক, অসুস্থ বা অনেকদিন ধরে অ্যাজমা ক্রনিক ব্রংকাইটিস, হার্টের অসুখ, হার্ট ফেলিওর-এর সমস্যা ও ডায়াবেটিস থাকলে এই ভাইরাস সহজে আক্রমণ করে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ খেলে তাদের এই জ্বরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। ভাইরাল ফিভার থেকে চেষ্ট ইনফেকশন, ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া, দীর্ঘদিন সর্দি-কাশি, দুর্বলতা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকে। তাই ভাইরাল ফিভার থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকদিন সাবধানে থাকতে হয়। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ভাইরাল ফিভার থেকে দূরে থাকতে আপনার কিভাবে সতর্কতা নিতে হবে তা জেনে রাখুন ---

*আশপাশে কারও জ্বর হলে তার কাছাকাছি যাওয়া একেবারে বন্ধ করুন।

*বেশি সময় এসিতে না থাকা।

* নিয়মত উষ্ণ জলে স্নান করা, সঙ্গে ছোটদেরও।

*বৃষ্টির জলে কখনো ভিজে গেলে দ্রুত স্নান করে নিতে হবে।

ভাইরাল ফিভার হলে আপনি কি করবেন ---

*জ্বর যে কদিন থাকবে সেই কদিন বাড়িতে থেকে বিশ্রাম নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। কারণ বেশি এদিক-ওদিক করলে তা যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়ায়।

*গায়ে জ্বর নিয়ে চলাফেরা করতে থাকলে হঠাৎ রক্তচাপ কমে মাথা ঘুরে যেতে পারে। তাই বাড়িতে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়াই মুখ্য ওষুধ।

- যারা প্রেসারের ওষুধ খান তাঁদের এই জ্বর হলে সেক্ষেত্রে প্রেসারের ওষুধ বন্ধ করে রাখা বা ডোজ কমানোর প্রয়োজন পড়ে। কারণ এই জ্বরের প্রভাবে রক্তচাপের হেরফের হয়। তাই চিকিৎসককে সেকথা জনান।- ভাইরাল ফিভার হলে প্রচুর জল খান। দরকার মতো নুন-চিনি মেশানো জল, লেবু দেওয়া জল, ডাবের জল খুব উপকারী এবং দরকারী।

*ভাইরাল ফিভারে হাঁচি, কাশি থাকলে, মাস্ক পরুন,. অকারণে করোর কাছে যাওয়া, গায়ে হাত লাগানো থেকে বিরত থাকুন।

*ভাইরাল ফিভারকে প্রতিরোধ করতে নিজের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা বিশেষ দরকার।

*ভালভাবে হাত ধোয়া, যেকোন কাজে, বাইরে থেকে এলে বারবার হাত ধুয়ে নেওয়া বিশেষ দরকার।

*মশা যাতে না কামড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন, ছোটদের চিকেন পক্স, ভাইরাল ফ্লু-র ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার।

* স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম কয়েক বছরে বাচ্চাদের শরীর বিভিন্ন ভাইরাস এক্সপিরিয়েন্স করে নেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনফেকশনের মাত্রা কমতে থাকে। ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে ইমিউনিটি গড়ে তোলা যায়। ভাইরাল ফিভার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের বহুদিন সাবধানে চলতে হয়। যে কোনো রকম সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টকে অবহেলা না করাই ভালো।  

You might also like!