দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ রাঢ় বাংলার প্রান্তিক মানুষের মধ্যে টুসু পরবের বড় মাহাত্য রয়েছে। কেউ বলেন টুসু ধন দেবী, কেউ বলেন টুসু আসলে মা লক্ষীরই লৌকিক রূপ।তবে রাঢ় বাংলার প্রান্তিক মানুষের কাছে টুসু তাঁদের ঘরের মেয়ে। এই টুসু কখনও প্রান্তিক মানুষের সুখ দুঃখের মুখ হয়ে ওঠে আবার কখনও বঞ্চনা আর শোষন রুখতে টুসুকে সামনে রেখেই শাসকের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে সাধারণ মানুষ। শত শত বছর পেরিয়েও সেই টুসুর জন্য পৌষ সংক্রান্তিতে রাত জাগে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ রাঢ় বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
টুসু আরাধনার শুরু কবে থেকে কেউ জানেন না। গবেষকরা বলেন, রাঢ় বাংলায় টুসু আরাধনার চল চলে আসছে আর্যদের আগমনের বহু যুগ আগে থেকেই। মাঝে জৈন যুগ, বৌদ্ধ যুগ, ইসলামিক যুগ, বা ব্রিটিশ আমল। শাসকের বদল হলেও রাঢ় বাংলার লাল মাটিতে টুসু আরাধনার ছবি বদলায়নি। গ্রামে গঞ্জে আমন ধান জমি থেকে খামারে উঠে এলেই প্রান্তিক কৃষিজীবী মানুষ আনন্দে ডগমগ হয়ে ওঠেন। সারা বছরের কষ্ট সাময়িকভাবে মুছে যায়। তখনই টুসু উৎসবে মেতে ওঠে রাঢ়ের প্রান্তিক পরিবারগুলি। টুসু ঘরের মেয়ে হওয়ায় তার আরাধনাতেও রয়েছে গ্রাম্য সারল্য।
শুধুমাত্র গানে গানে টুসুর বন্দনা করা হয়। গানে মিশে থাকে গ্রাম্য জীবনের সুখ দুঃখ, পাওয়া না পাওয়া। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শুধুমাত্র মুখে মুখে সঞ্চারিত হয় গানগুলি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই গানে মিশে যায় সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। কখনও কখনও গানে উঠে আসে বাল্য বিবাহ রোধ বা স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তাও। কখনও শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র শ্লেষ বা সংগঠিত আন্দোলনের কথাও নিহিত থাকে টুসু গানের প্রতিটি কলিতে।