কলকাতা, ১৭ অক্টোবর : শিবপুরের রায়চৌধুরি পরিবারে আজও রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরির বংশধররা দুর্গাপুজো করেন। এ বছর ৩৩৯ বছরে পদার্পণ করল রাজ পরিবারের এই পুজো। এই বাড়ির গৃহদেবতা মা ব্যাতাইচণ্ডী।
পুজোর শুরু এক স্বপ্নাদেশ থেকে। রাজা স্বপ্নে আদেশ পান, দেবী দুর্গা রাজকন্যার বন্ধুরূপে রোজ দুপুরে বালি পুকুরে তাঁর সঙ্গে খেলা করেন। তাঁর পুজো যেন শিবপুরের রায়চৌধুরি পরিবারে হয়। রাজবাড়ির কাছেই শিবপুরের বালি পুকুরে রোজ দুপুরে একটি মেয়ের সঙ্গে খেলা করতেন রাজকন্যা। খেলা শেষে পুকুরে নেমে স্নানও করতেন।
একদিন শিবপুরের রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরি মেয়ের এই কীর্তিকলাপ জানতে পেরে ভীষণ রেগে যান। কে সেই খেলার সঙ্গিনী যে রাজকন্যাকে রোজ দুপুরে ডেকে । পুকুরে স্নান করতে বলে। কোথায় থাকে সেই সঙ্গিনী? তার সাহস হয় কী করে দুপুরবেলা রাজকন্যার সঙ্গে পুকুরে স্নান করার আর খেলার। এসব জানতেই মেয়েকে দিয়ে একদিন তাঁর পুকুরের খেলার সঙ্গিনীকে ডেকে পাঠান রাজা। রাজকন্যার সঙ্গিনীর নাম ছিল পদ্মাবতী।
পরদিন দুপুরে পুকুরে গিয়ে রাজকন্যা যখন পদ্মাবতীকে বলেন, রাজা ডেকেছে, তখন তার খেলার সাথী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজার নির্দেশ তিনি মানবেন না। পদ্মাবতী কারও সঙ্গে দেখা করবে না। পদ্মাবতী রাজকন্যাকে জানান, তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেন না। তিনি যদি মনে করেন কারও সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন রয়েছে তবে তিনি তাঁর কাছে নিজেই পৌঁছে যান।
রাজকন্যাকে একথা বলায় রাজা রামব্রহ্ম তো যান বেজায় চটে। সেদিনই রাজা তাঁর পেয়াদাদের পাঠান পুকুর থেকে পদ্মাবতীকে খুঁজে আসতে। কিন্তু পেয়াদারা ওই বালি পুকুরে গিয়ে দেখেন পুকুর ধারে শুধু পায়ের ছাপ। আর সেখানে কেউ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে খোঁজ পাওয়া নি পদ্মাবতীর।
সেদিন পেয়াদারা ফিরে আসেন রাজ দরবারে। সেই রাতেই পদ্মাবতী রাজা রামব্রহ্মকে স্বপ্নে দেখা দেন। স্বপ্নে তিনি রাজাকে বলেন, তিনি আসলে দেবী দুর্গা। তিনি রাজকন্যার বন্ধু রূপে রোজ দুপুরে বালি পুকুরে তাঁর সঙ্গে খেলা করেন। তাঁর পুজো যেন শিবপুরের রায়চৌধুরি পরিবারে হয়। রাজা রামব্রহ্ম এই স্বপ্ন দেখার পর তাঁর চোখ খোলে। সেই ইংরেজির ১৬৮৫ সাল ও বাংলার ১০৯২ বঙ্গাব্দে শুরু। আজও হচ্ছে চতিহ্যের সেই দুর্গাপুজো।