
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: প্রতি বছরই বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছট পূজা পালিত হয় বিপুল উৎসাহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। এই বছর এই পবিত্র উৎসব শুরু হবে ২৫শে অক্টোবর এবং শেষ হবে ২৮শে অক্টোবর। দীপাবলির পরপরই পালিত এই উৎসব কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক নয়, এটি আবেগ, ঐতিহ্য এবং পারিবারিক বন্ধনের গভীর প্রকাশ। তবে অনেক সময়ই পড়াশোনা, চাকরি বা অন্যান্য কারণে সবাই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেন না। দূরে বসে পরিবার ও উৎসব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কষ্ট তৈরি করে এক ধরনের অপূর্ণতার অনুভূতি। যদি আপনিও এ বছর বাড়ি যেতে না পারেন, তবুও মন খারাপ করার কিছু নেই। দূরে থেকেও আপনি পেতে পারেন ছট মাইয়ের আশীর্বাদ—জেনে নিন কীভাবে পালন করবেন এই পবিত্র উৎসবের রীতি, মন থেকে।
• ছঠি মাইয়ার নামে প্রদীপ জ্বালাও— প্রথমে ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। তারপর এমনভাবে সাজান, যেন আপনি সত্যিই ছট উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন—পরিষ্কার, পবিত্র ও ভক্তিভরা পরিবেশ তৈরি করুন। এরপর মাটির বা পিতলের প্রদীপে সরিষার তেল ভরে জ্বালান। এই প্রদীপগুলো ঘরের চার কোণে, জানালার ধারে বা পূজার স্থানে রাখুন। প্রদীপের আলোর সঙ্গে ঘর ভরে উঠুক শান্তি ও ভক্তির উষ্ণতায়। তারপর গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস নিয়ে ছঠি মাইয়ার ধ্যান করুন। পূজার সময় “ছঠি মাইয়া আরতি” বা “নাহয়-খায়” গান শুনতে পারেন কিংবা নিজেই গেয়ে নিতে পারেন। এই ভক্তিমূলক সুর আপনার মনকে ভরিয়ে তুলবে ইতিবাচক শক্তি, শান্তি ও এক বিশেষ আনন্দে।
• ঘাটগুলির সরাসরি দর্শন করুন— ছট পূজার আসল আনন্দ অনুভব করা যায় ঘাটের পরিবেশে—ভক্তির সুর, ঢোলের শব্দ, আর সূর্য আরাধনার দৃশ্য যেন মনকে ভরে তোলে। কিন্তু যদি আপনি দূরে থাকেন, চিন্তার কিছু নেই। এখন অনলাইনেই সম্ভব ছট পূজার সরাসরি দর্শন। দেশের বিভিন্ন ঘাট থেকে লাইভ সম্প্রচার দেখা যায়—যেমন পাটনার গঙ্গা ঘাট, বারাণসীর ঘাট কিংবা অন্য শহরের পবিত্র তীর থেকে। স্ক্রিনের ওপার থেকেও সেই দৃশ্য আপনাকে পৌঁছে দেবে এক অনন্য ভক্তির অনুভূতিতে, যেন আপনি স্বচক্ষে সেখানে উপস্থিত। আর যদি সুযোগ থাকে, তবে অবশ্যই চলে যেতে পারেন আপনার নিকটতম ছট ঘাটে। সেখানে গিয়ে উপবাসকারীদের (ব্রতধারীদের) কাছ থেকে আশীর্বাদ ও প্রসাদ গ্রহণ করুন। এই ছোট্ট সংযোগই এনে দেবে মনের শান্তি ও ভক্তির পরিপূর্ণতা।
• ফল, আখ ও ঠেকুয়া উৎসর্গ করুন— ছট পূজার মূল ভাবনা হলো পবিত্রতা, আত্মসমর্পণ ও ভক্তি। তাই আপনি যদি এ দিন উপবাস রাখতে না-ও পারেন, তবুও ভক্তিভরে ফল, আখ, ঠেকুয়া বা গুড় প্রসাদ হিসেবে উৎসর্গ করতে পারেন। ইচ্ছা করলে এই খাবারগুলি দরিদ্র বা অভাবী মানুষদের দান করলেও তা সমান পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়। বাড়ি থেকে দূরে থাকলেও মন থেকে করা এই ছোট ছোট নিবেদনেই ছঠি মাইয়া তুষ্ট হন। তাঁর আশীর্বাদে আপনার জীবনে আসুক শান্তি, সমৃদ্ধি ও আলোর পথ।
• বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে দর্শন করুন— যদি দূরে থাকেন, তবুও পরিবারের সঙ্গে ছট পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেন সহজেই। ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হন। ঘাটে পূজা চলাকালীন তাঁদের সঙ্গে অনলাইনে যোগ দিন, আর আরতির সময়ে হৃদয়ভরা শ্রদ্ধায় উচ্চারণ করুন — “জয় ছঠি মাইয়া!”
এই মুহূর্তে আপনি হয়তো ঘাটে উপস্থিত নন, কিন্তু মনে রাখবেন — ছট পূজার আসল অর্থ ভক্তির গভীরে, উপস্থিতির মধ্যে নয়। যদি আপনার হৃদয় সত্যিকারের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ থাকে, তবে ছঠি মাইয়া অবশ্যই আপনার প্রার্থনা ও ভক্তি গ্রহণ করবেন, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন।
