দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :৩৭ বছর বয়সী ইন্দোরের কৌতুকাভিনেতা জাকির খান বিশ্বখ্যাত ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে হিন্দি স্ট্যান্ড-আপ শোতে প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে শিরোনাম হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। ৬,০০০ দর্শকের সামনে তাঁর এই পরিবেশনা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় স্ট্যান্ড-আপ কমেডির জন্যও এক মাইলফলক মুহূর্ত।
সেটের মাঝপথে খান হঠাৎ থেমে যান এক আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করতে। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়েই ফোন বের করে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে যুক্ত হন। এরপর ক্যামেরা ঘুরিয়ে উল্লাসিত দর্শকদের দেখিয়ে বাবাকে উদ্দেশ করে বলেন, “বাবা, ইয়ে আপসে কুছ কেহনা চাহতে হ্যায়”। সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশে উষ্ণ করতালি ও হাসির রোল ওঠে। পর্দায় দেখা যায় তাঁর বাবা-মা হাত নেড়ে ও হাত জোড় করে জনতাকে অভিবাদন জানাচ্ছেন।
পরবর্তীতে ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের সঙ্গে অনুভূতি ভাগ করে জাকির খান দিনটিকে আখ্যা দেন তাঁর জীবনের এক “বড় মুহূর্ত” হিসেবে এবং অভিজ্ঞতাটিকে বর্ণনা করেন “অপ্রতিরোধ্য” বলে। তিনি তাঁর দল ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, রাতটি একজন কৌতুকাভিনেতা হিসেবে তাঁর যাত্রার এক “বিশেষ মাইলফলক” হয়ে থাকবে।
মঞ্চে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকৌতুকাভিনেতা তন্ময় ভাট। দর্শকরা উপভোগ করেন খানের রসবোধ ও মানবিকতার অনন্য সমন্বয়, যে স্টাইল তাঁকে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তের প্রিয় করে তুলেছে।
ঐতিহাসিক এই পরিবেশনার প্রস্তুতিও ছিল সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে ঝলমল করেছিল জাকিরের পোস্টার, আর শীর্ষস্থানীয় মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হয়েছিল খবরটি—যা প্রমাণ করে, হিন্দি ভাষার কমেডি এখন স্থান করে নিচ্ছে সেইসব মঞ্চে, যা এতদিন কেবল বিশ্ববিখ্যাত বিনোদন তারকাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
শোয়ের এক মজাদার ভূমিকায় জাকির অংশ নেন শেফ বিকাশ খান্নার সঙ্গে একটি রান্নার পর্বে, যা অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে বিশেষ মাত্রা যোগ করে।
স্থানীয় সংবাদ্মাধমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির খান স্বীকার করেন, অনুষ্ঠানের মহত্ত্ব এখনও পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেননি। তিনি বলেন, “ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন কখনও আমার পরিকল্পনার অংশ ছিল না। এটা সবসময় মনে হত বড় বড় চলচ্চিত্র তারকাদের জায়গা, ইন্দোরের কোনো সাধারণ ছেলের নয়। কিন্তু কখনও কখনও জীবন আমাদের কল্পনারও বাইরে গিয়ে যায়।”
২০১২ সালে কমেডি সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ার সেরা স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানের খেতাব জিতে প্রথম আলোচনায় আসেন খান। এরপর একে একে ‘হক সে সিঙ্গেল’, ‘তথাস্তু’ এবং *‘চাচা বিধায়ক হ্যায় হামারে’*র মতো জনপ্রিয় শো তাঁকে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী কমেডি কণ্ঠে পরিণত করে। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা তাঁর হিন্দি রসবোধ শুধু দর্শকের মন জয় করেনি, বরং নতুন প্রজন্মের কাছে ভারতীয় স্ট্যান্ড-আপ কমেডির ধারা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।