শৈশব মানে একরাশ খুশি, শৈশব মানে সবুজ ঘাসে ভরা মাঠে রঙিন বল পায়ে দৌড়ে বেড়ানো একপাল ক্ষুদে বাচ্ছার দল, শৈশব মানে হাওয়াই মিঠাই , পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে স্নান , চুরি করে খাওয়া আমের আচার। কিন্তু কালের প্রবাহে আজ সবই প্রায় লুপ্ত। শৈশব আজ পরিচালিত হচ্ছে মুঠো ফোনে। খেলার মাঠের সাথে সম্পর্ক তো বহুতলের বেড়াজালে খেলার মাঠের ধারনাও স্পষ্ট নয় আজকের প্রজন্মের কাছে। মূলত, মোবাইল ফোনের প্রসার এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির উত্থানের সাথে, শিশুদের খেলার অভিজ্ঞতা ক্রমবর্ধমানভাবে শারীরিক স্থান থেকে ভার্চুয়াল অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিজ্ঞানের অগ্রগতির একটি অন্যত্তম পাথর ফলক এই মুঠো ফোন বা মোবাইল। সাধারনত মোবাইল ফোন আমাদের আশেপাশের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার, তথ্য অ্যাক্সেস করার এবং সংযুক্ত থাকার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। শিশুদের জন্য, বর্তমানে এই ডিভাইসগুলি সর্বব্যাপী সরঞ্জাম হয়ে উঠেছে যা তাদের নখদর্পণে বিনোদন, শিক্ষা এবং সামাজিক সংযোগ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে থাকে।বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনের কম্প্যাক্ট প্রকৃতি এবং অ্যাক্সেসযোগ্যতা একটি খেলার মাঠের ঐতিহ্যগত ধারণাকে নস্যাৎ করে খেলার মাঠের এক নতুন সমীকরন তৈরী করেছে নব প্রজন্মের কাছে।
হাতে মোবাইল ফোন থাকায়, শিশুরা এখন ডিজিটাল খেলার মাঠে ডুবে আছে। তারা ভিডিও গেম খেলা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করা, ভিডিও দেখা এবং শিক্ষামূলক অ্যাপ অন্বেষণ সহ বিস্তৃত ক্রিয়াকলাপে জড়িত। এই পরিবর্তন শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ ও জানার পরিধিকে বহুমুখী করে তোলে, শুধু তাই নয় ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা তৈরী করে।
মোবাইলের কিছু ভাল দিক রয়েছে যেমন, এটি ইন্টারেক্টিভ গেম এবং শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে শিশুদের জ্ঞানের বিকাশ, সমস্যা সমাধান এবং সৃজনশীলতার সুযোগ প্রদান করে। মোবাইল ফোনগুলিতে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সহজে অ্যাক্সেস করা সম্ভব হয়, যার দ্বারা শিক্ষাকে গতি প্রদান করা সম্ভ হয়ে ওঠে এবং শিশুদের জ্ঞানের দিগন্তকে ও প্রসারিত করে। উপরন্তু, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি সংযোগ স্থাপনে ও দ্রুততা আনে, যা শিশুদের বিভিন্ন অবস্থানের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করতে সক্ষম করে তোলে।
তবে এর ব্যবহারের কিছু খারপ প্রভাব ও রয়েছে, অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর সম্ভাব্য প্রভাব ফেলতে পারে, এর প্রভাবে শিশুদের বাইরের ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পায়। অধিকন্তু, অনুপযুক্ত বিষয়বস্তু, সাইবার বুলিং, এবং গোপনীয়তার ঝুঁকিতে সীমাহীন অ্যাক্সেসের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব শিশু মনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেক্ষেত্রে, স্ক্রিন টাইম এবং অ্যাক্সেসের ধরনগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, সেইসাথে ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং দায়িত্বশীল অনলাইন আচরণকে বিধিবদ্ধতার সাথে পরিচালিত করতে হবে, তবেই এই বিবর্তিত পরিকাঠামোকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।সেক্ষেত্রে পিতামাতা অভিভাবককে মোবাইল ফোন এবং ডিজিটাল খেলার মাঠের সাথে শিশুদের সম্পৃক্ততার দিকনির্দেশনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই শিশুকে ডিজিটাল বাতাবরন থেকে সুরক্ষিত রেখে তার বৃদ্ধি ও বিকাশকে গতি প্রদান করা সম্ভব হবে। মোবাইল ফোন নিঃসন্দেহে শৈশবের খেলার মাঠের ধারণাকে রূপান্তরিত করেছে,তবে নিঃসন্দেহে ডিজিটালাইজেশন সৃজনশীলতা এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বিস্তারের অনন্য সুযোগ দেয়।
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের যে একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তা বলার অবকাশ রাখে না। তবে ডিজিটাল এবং ঐতিহ্যগত খেলার অভিজ্ঞতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক খেলার ধারনা, নির্দেশিকা প্রদান, এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি করতে না পারলে সেক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের যে কুপ্রভাব তা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।