দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সম্প্রতি জম্মুতে নৃশংশ জঙ্গি হামলা আপামর ভারতবাসীর মন নাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই তলানিতে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের তরফে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—স্থগিত করা হয়েছে বহু দশকের পুরোনো সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। আর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, ভারত একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করতে পারে না এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তোলা হবে বলে এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ। এমনকি পাকিস্তানের তরফে বিশ্ব ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা স্পষ্ট জানিয়ে দেন—"সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।" তাঁর এই মন্তব্য পাকিস্তানের আশঙ্কায় জল ঢেলে দিয়েছে বলেই মত আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের।
সংবাদসংস্থা এএনআইএ-কে শুক্রবার সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে বাঙ্গা বলেন, ‘‘এখানে তারা (বিশ্ব ব্যাঙ্ক) সাহায্যকারী। এ ছাড়া আর কোনও ভূমিকা নেই।’’ পাশাপাশি, তিনি এ-ও বলেন, ‘‘চুক্তি নিয়ে সমস্যায় বিশ্ব ব্যাঙ্ক কী ভাবে হস্তক্ষেপ করবে, তা নিয়ে সংবাধমাধ্যমে অনেক জল্পনা চলছে। কিন্তু সে সবই ভুয়ো। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ভূমিকা শুধুমাত্র সহায়কের।’’ প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদ এবং তার ছয়টি প্রধান উপনদীর মধ্যে,পাকিস্তানের অধিকার: সিন্ধু, বিতস্তা (ঝিলম), ও চন্দ্রভাগা (চেনাব) পাশাপাশি ভারতের অধিকার: বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়), ও ইরাবতী (রাভি)। এই ভাগাভাগিতে প্রায় ৮০% জলের অধিকার ছিল পাকিস্তানের এবং মাত্র ২০% এর কিছু বেশি ভারতের হাতে।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়। পাকিস্তান ঘটনা অস্বীকার করলেও ভারতের সুর নরম হয়নি। ভারতের একাধিক প্রতিশোধ মূলক পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা। ভারতের এই সিদ্ধান্তের পরই বিশ্ব ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপের দাবি তোলেন পাকিস্তানের অনেকেই। তবে সেই আশায় এবার জল ঢাললেন বাঙ্গা। পাশাপাশি উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি।