দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ জামাইষষ্ঠী মানেই নানান রকমের খাবারের আয়োজন। জামাইকে একদিন নানান পদ রেঁধে খাওয়ানোর বাসনা কি ছাড়তে পারেন শাশুড়িরা? পোলাও-পাতুরি, মাটন থেকে শেষপাতের রসনা-সহযোগে ভুরিভোজ। পঞ্চব্যঞ্জন সাজানো জামাইয়ের পাত। তবে অনেকেই রেস্তরাঁয় না গিয়ে নিজের হাতে হরেক রকমের পদ রেঁধে খাওয়াতে ভালবাসেন জামাইকে। কিন্তু কি কি রাঁধবেন? তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। তবে চিন্তার কি আছে। আপনার জামাই যাতে আপনার রান্না খেয়ে বাহবা দেন সেই লক্ষ্যেই রইল এক গুচ্ছ রেসিপিঃ
১)দুধ পোলাও
উপকরণ
দেরাদুন চাল (১ কাপ), দুধ ফোটানো (দেড় লিটার), গোটা গরমমশলা (২ চামচ), স্টার অ্যানিস (৪-৫টা), কিশমিশ (১ চামচ), কড়াইশুঁটি (২ চামচ), ঘি (৪ চামচ), নুন (আধ চামচ), চিনি (স্বাদমতো), মিল্কমেড (৩ চামচ)
প্রণালী
প্রথমে চাল ভালো করে ধুয়ে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। পরে পাত্রে ঘি গরম করে গরমমশলা ও স্টার অ্যানিস ফোড়ন দিন। গন্ধ বেরোতে শুরু করলে ওর মধ্যে কড়াইশুঁটি, কিশমিশ, চাল দিয়ে অল্প নেড়ে নিন। ওর মধ্যে এবার ফুটিয়ে রাখা দুধটা দিন। নুন-চিনিও দিন। এবার পাত্রের ঢাকনা আটকে রাখুন, ঢিমে আঁচ রাখুন।
ধোঁয়া বেরোতে শুরু করলে বুঝবেন পোলাও তৈরি। আঁচ থেকে নামিয়ে স্ট্যান্ডিং টাইমে রাখুন। পরে ঢাকনা খুলে মিল্কমেড ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
২)চিংড়ির মুইঠ্যা
উপকরণ
চিংড়ি মাছ- ৫০০ গ্রাম, আলু সেদ্ধ- ১৫০ গ্রাম, ধনেপাতা কুচি- ২ চামচ, রসুন বাটা- ১ চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো- আধ চামচ, হলুদ গুঁড়ো- আধ চামচ, লেবুর রস- ১ চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা- ১ চামচ, নুন- স্বাদমতো, গ্রেভির জন্য, পেঁয়াজ কুচি- ১ কাপ, রসুন- ৬-৭ কোয়া, আদা টুকরো- আধ ইঞ্চি, কাজু- ৮-১০টি, টম্যাটো- ১টি, গোটা গরমমশলা- পরিমাণমতো, তেজপাতা- ১টি, লঙ্কা গুঁড়ো- ১ চামচ, হলুদ গুঁড়ো- আধ চামচ, ধনে গুঁড়ো- ১ চামচ, নারকেলের দুধ- ১ কাপ, নুন ও চিনি- স্বাদমতো, সর্ষের তেল- ৫ চামচ।
প্রণালী-
প্রথমে, চিংড়ি মাছ খোসা ছাড়িয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার অবশ্যই নজরে রাখুন যেন জল না থাকে। চিংড়িগুলোকে ভাল করে বেটে নিন। এরপর একটি বড় পাত্রে চিংড়ির সঙ্গে আলু সেদ্ধ, ধনেপাতা কুচি, রসুন বাটা, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, লেবুর রস, কাঁচালঙ্কা বাটা ও নুন ভাল করে মিশিয়ে নিন। দেখবেন যেন প্রত্যেকটি উপদান ভাল করে মিশিয়ে যায়। এবার একটি কড়াইয়ে সামান্য তেল নিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুচি, রসুন, আদা টুকরো, কাজু ও টম্যাটো দিয়ে ভাল করে ভেজে নিন। এরপর অন্য পাত্রে রেখে মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে ভাল করে বেটে নিন। এ বার কড়াইতে তেল গরম করে তাতে তেজপাতা ও গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিয়ে বাটা মশলা দিয়ে দিন। ভাল করে একটু নাড়াচাড়া করে সব রকম গুঁড়ো মশলা দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। তেল ছেড়ে এলে নারকেলের দুধ দিয়ে ভাল করে নাড়াতে থাকুন। এ বার বেটে রাখা চিংড়ি মাছের মিশ্রণ বড়ার মতো গড়ে নিয়ে ঝোলে ছেড়ে দিন। মিনিট পাঁচেক ঢাকা দিয়ে ফুটতে দিন। গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিন। ব্যস তৈরি চিংড়ি মাছের মুইঠ্যা। ভাতের সঙ্গে দারুণ লাগবে এই চিংড়ি মুইঠ্যা।
৩) গন্ধরাজ চিকেন পাতুরি
উপকরণ
৩০০ গ্ৰাম বোনলেস চিকেন, ৩ টেবিল চামচ পোস্তবাটা, ৩ টেবিল চামচ নারকেলবাটা, আধ চা চামচ রসুনবাটা, ১.৫ চা চামচ কাঁচা লঙ্কাবাটা, ১ চা চামচ গোলমরিচগুঁড়ো, ৩ চা চামচ লেবুর রস, ১/৪ কাপ সাদা তেল, স্বাদ মত নুন, ১৫ টি কুমড়ো পাতা, ১ টি সুতোর রিল, ১৬ টি গন্ধরাজ লেবুর পাতা, পরিমাণ মতো ভাজার জন্য সামান্য সাদা তেল।
প্রণালী
চিকেন কিমা বানিয়ে নিতে হবে। একটি পাত্রে চিকেনের কিমা নিয়ে, তার মধ্যে পোস্তবাটা, নারকেলবাটা, রসুনবাটা, কাঁচা লঙ্কাবাটা ও ১ টি গন্ধরাজ লেবুর পাতাবাটা, গন্ধরাজ লেবুর রস, সাদা তেল ও গোলমরিচগুঁড়ো পরিমাণ মতো নুন দিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। এবার একটি কুমড়ো পাতা ধুয়ে হালকা সেঁকে নিযন তাওয়ায়। তার মধ্যে এই মিশ্রণটি ৩ টেবিল চামচ নিয়ে, উপরে একটি গন্ধরাজ লেবুর পাতা রেখে খুব ভালো করে সুতো দিয়ে বেঁধে দিন। এবার একটি ফ্রায়িং প্যান তেল গরম করে এরমধ্যে একে একে পাতুরিগুলো দিয়ে, ঢিমে আঁচ রেখে ঢেকে দিন উপর থেকে। বারে বারে উলটেপালটে ভেজে নিতে হবে। চারিদিকে সুন্দর লালচে কালার চলে এলে, নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৪) কাতলা রেজালা
উপকরণ-
কাতলা মাছ (লবণ-হলুদ গুঁড়ো দিয়ে মাখানো), নুন, চিনি, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো, গরম মশলাগুঁড়ো, গোটা গরমমশলা, কাঁচালঙ্কা, পিঁয়াজ পেস্ট, আদা পেস্ট, কাজু-কিশমিশ পেস্ট, জলে ভেজানো জাফরান, সরষের তেল, সাদা তেল।
প্রণালী-
প্রথমে তেল গরম করে ম্যারিনেট করা মাছগুলোকে সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন। এবার এতে গোটা গরম মসলা ফোঁড়ন দিন, গন্ধ বেরোতে শুরু করলে কাজু-কিশমিশের পেস্ট দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে এতে পিঁয়াজ ও আদা বাটা দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিয়ে একে একে সব গুঁড়োমশলা দিয়ে ভালো করে কষান। প্রয়োজনে সামান্য জল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। ফুটতে থাকলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে আরও ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। নামানোর আগে উপর থেকে জাফরান জল ছড়িয়ে দিন।
৫) মাটন নিহারী
উপকরণ-
১ কিলো খাসির মাংস (লেগ পিস), ৪ টেবিল চামচ ঘি, ৩ টে বড় মাপের পেঁয়াজ কুঁচি, ১ টেবিল চামচ আদা বাটা, ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা, ২ টেবিল চামচ ধনে গুড়ো, ১ চা চামচ হলুদ গুড়ো, ২ টেবিল চামচ গরম মশলা গুড়ো, ২ টেবিল চামচ ময়দা, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, আন্দাজ মতো নুন।
প্রণালী-
প্রেসার কুকারে মটন আর জল দিয়ে ২ টো সিটি দিয়ে নামিয়ে রাখুন। তারপর জল ঝরিয়ে মটনের স্টক আলাদা করে অন্য পাত্রে রেখে দিন। একটি ননস্টিক কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ দিয়ে দিন । ভাল করে ভেজে নিন। এরপর এতে মটন, ধনে গুড়ো, হলুদ গুড়ো, আদা বাটা, রসুন বাটা, আন্দাজ মতো নুন দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। মিনিট পাঁচেক রান্না করুন। এরপর গরম মশলা ও মটনের স্টক দিয়ে কম আঁচে ভাল করে মিশিয়ে ঢেকে রান্না করুন যাতে মাংস খুব ভাল মতো সেদ্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ঢাকা সরিয়ে নাড়িয়ে নিন। প্রয়োজনে আরও একটু স্টক ঢেলে দিতে পারেন। এরপর একটি ছোট বাটিতে ময়দা ও মটনের স্টক খুব ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে মাংসের উপর ঢেলে দিন। ঢেকে দিয়ে আরও মিনিট দশেক রান্না হতে দিন যাতে মাংসের গ্রেভি ঘন হয়ে যায়। রান্না হয়ে গেলে মাংসের উপর লেবুর রস ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন। রুমালি রুটি বা পরোটার সঙ্গে দারুণ লাগবে মটন নিহারী।
৬) পেঁপের চাটনি
প্রথমে কাঁচা পেঁপে গ্রেট করে নিতে হবে। কড়ায় সাদা তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা, আধ চাচামচ আদাবাটা, তেজপাতা ফোড়ন দিন। এবার পেঁপে কোরাটা দিয়ে ফোটাতে হবে। একটু ফুটে উঠলে জল ঝরিয়ে নিয়ে আবার জল, চিনি, কাজু, কিসমিস দিয়ে চাপা দিতে হবে। ঘন হয়ে এলে চিনি দিয়ে ফোটান ঢিমে আঁচে। তারপর নামানোর আগে ভাজা মশলা (জিরে, ধনে, শুকনোলঙ্কা, মৌরি) দিন। এতে দারুণ একটা ফ্লেভার তৈরি হয়। কাঁচা পেপের চাটনি হজমের ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকরী।
৭) আম শিরখন্দ
উপকরণ
টকদই (৩ কাপ), আমন্ড (৬টা), কাজুবাদাম (৬টা), এলাচগুঁড়ো (১/৪ চা-চামচ), কেশর (৬ আঁশ), ঈষদুষ্ণ দুধ (১ চামচ), পাকা আমের পিউরি (১ কাপ), ক্যাস্টর সুগার (আধ কাপ)।
প্রণালী
একটা মসলিন কাপড়ে দই নিয়ে অন্তত ৬-৭ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখুন যাতে সমস্ত জল বেরিয়ে যায়। এবার কাপড় বাঁধা অবস্থাতেই দই ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। আমন্ডগুলো জলে ভিজিয়ে দিন। পরে আমন্ডের খোসা ছাড়ান। ছোট ছোট করে আমন্ড এবং কাজু কুচিয়ে নিন। কেশরটা হালকা গরম দুধে ভিজিয়ে রাখুন। ফ্রিজে রাখার প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে দইটা বের করে একটা বড় বাটিতে রাখুন। খুব ভাল করে একসঙ্গে দই এবং ক্যাস্টর সুগার ফেটিয়ে মেশান। একে একে ওই বাটিতে দিন গরম দুধে ভেজানো কেশর, কুচনো কাজুবাদাম ও আমন্ড, পাকা আমের পিউরি এবং এলাচগুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মেশান। মিশ্রণটা আরও ২ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজ থেকে বের করে ওপর দিয়ে আরও খানিকটা কাজুবাদাম-আমন্ড কুচি ছড়িয়ে স্কুপ করে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন আমের শিরখন্দ।