দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: জামাইষষ্ঠী—বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী পার্বণ, যেখানে জামাইবাবুর উদরপূর্তি আর সাদর আপ্যায়ন যেন এক অলিখিত রীতি। চর্ব, চোষ্য, লেহ্য, পেয়—এই চিরাচরিত খাবারের তালিকায় মিষ্টির স্থান সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, দুপুর বা রাতের জমকালো ভোজের পর একটু মিষ্টিমুখ না হলে যেন উৎসবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সাধারণত দোকান থেকেই মিষ্টি কেনা হয়ে থাকে। তবে এই বছর না হয় একটু আলাদা করে জামাইকে তাক লাগিয়ে দিন। শাশুড়ির হাতের তৈরি মিষ্টির স্বাদেই মুগ্ধ হয়ে যাক জামাইবাবু। বাড়িতে তৈরি করা মিষ্টির আলাদা এক আকর্ষণ তো আছেই, সঙ্গে যোগ হবে গৃহিণীর যত্ন আর ভালোবাসার ছোঁয়া।
আজকের প্রতিবেদনে রইল কিছু সহজ অথচ মুখরোচক ডেজার্টের রেসিপি:
বেকড পাতুরি সন্দেশঃ
উপকরণঃ ২৫০ গ্রাম গরুর দুধের ছানা, ২৫০ গ্রাম সরেস পাকের সন্দেশ, ২৫০ গ্রাম খোয়াক্ষীর, ৫০ গ্রাম আইসিং সুগার (চিনি গুঁড়ো), কুচিয়ে নেওয়া পেস্তা, মগজ, কাজু আর কিশমিশ।
প্রণালীঃ সব উপকরণ একসঙ্গে নিয়ে ভালো করে মেখে নিয়ে শক্ত মন্ড তৈরি করুন। তারপর সেই ডো থেকে ছোট ছোট পিস কেটে কলাপাতার টুকরোর ওপর রাখুন। আর প্রতি টুকরোর উপর দিন এক চামচ মালাই। মালাই বাড়িতে তৈরির পদ্ধতি কিন্তু বেশ ধৈর্যের। কীভাবে করবেন? জেনে নিন। ৪ সের দুধ ফুটিয়ে ২ সের
করতে পারলেই মালাই রেডি। যাক, ফিরে আসি পাতুরিতে। এবার কলাপাতা মুড়ে ডাবল বয়লারে বেক করে নিলেই তৈরি বেকড পাতুরি সন্দেশ।
শাহী টুকরাঃ
উপকরণঃ পাউরুটি, দুধ, ক্ষীর, চিনি, চিনির সিরাপ, ঘি, জাফরান, গোলাপ জল, কেওড়া জল, চেরি, বাদাম, পেস্তা।
প্রণালীঃ প্রথমে পাউরুটির ধারগুলো কেটে আপনার ইচ্ছা মতো আকার দিয়ে কেটে নিন। এবার সেগুলোকে একটু টোস্ট করুন। এবার প্যানে দুধ ফুটিয়ে যতটা সম্ভব ঘন করে নিন। আগে থেকে যা চিনি, জল, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে তৈরি করা সিরাপে রুটির টুকরোগুলি ২-৩ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এখন দুধ ঘন হয়ে এলে সামান্য চিনি ও ক্ষীর দিয়ে ভালো করে নেড়ে রুটির ওপর ঢেলে দিন। বাদাম ঘিতে সামান্য ভেজে কুচি করে নিন। এবার ওই বাদামগুলো দুধ ও রুটির ওপর ছড়িয়ে দিয়ে ১ ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। পরে আপনার পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
আম শিরখন্দঃ
উপকরণঃ টকদই (৩ কাপ), আমন্ড (৬টা), কাজুবাদাম (৬টা), এলাচগুঁড়ো (১/৪ চা-চামচ), কেশর (৬ আঁশ), ঈষদুষ্ণ দুধ (১ চামচ), পাকা আমের পিউরি (১ কাপ), ক্যাস্টর সুগার (আধ কাপ)।
প্রণালীঃ একটা মসলিন কাপড়ে দই নিয়ে অন্তত ৬-৭ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখুন যাতে সমস্ত জল বেরিয়ে যায়। এবার কাপড় বাঁধা অবস্থাতেই দই ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। আমন্ডগুলো জলে ভিজিয়ে দিন। পরে আমন্ডের খোসা ছাড়ান। ছোট ছোট করে আমন্ড এবং কাজু কুচিয়ে নিন। কেশরটা হালকা গরম দুধে ভিজিয়ে রাখুন। ফ্রিজে রাখার প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে দইটা বের করে একটা বড় বাটিতে রাখুন। খুব ভাল করে একসঙ্গে দই এবং ক্যাস্টর সুগার ফেটিয়ে মেশান। একে একে ওই বাটিতে দিন গরম দুধে ভেজানো কেশর, কুচনো কাজুবাদাম ও আমন্ড, পাকা আমের পিউরি এবং এলাচগুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মেশান। মিশ্রণটা আরও ২ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজ থেকে বের করে ওপর দিয়ে আরও খানিকটা কাজুবাদাম-আমন্ড কুচি ছড়িয়ে স্কুপ করে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন আমের শিরখন্দ।
শাহী ক্ষীরঃ
উপকরণঃ চাল – ৫০ গ্রাম (২ ঘণ্টা ভেজানো এবং গুঁড়ো করা, তবে মিহি গুঁড়ো নয়), দুধ – ২ লিটার (ফোটানোর জন্য), চিনি – ৭৫ গ্রাম, সবুজ এলাচগুঁড়ো – আধা চা-চামচ, গোলাপ জল – ১ চা-চামচ, কিশমিশ – ১ টেবিল চামচ, চিরঞ্জি (তরমুজের সাদা বীজ) অথবা কাজু বাদাম – ১ টেবিল চামচ, কিছু গোলাপের পাপড়ি ও তবক (সাজানোর জন্য)।
প্রণালীঃ দুধ ফুটিয়ে ফুটন্ত দুধে গুঁড়ো করা চাল যোগ করুন। ক্রমাগত নাড়তে থাকুন, যাতে জমাট বেঁধে না যায়। মিশ্রণটা ঘন হয়ে এলে এবং চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিন। চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। চিরঞ্জি ও কিশমিশ যোগ করুন। একটি পাত্রে ঢেলে নিয়ে ঠান্ডা করুন। তবক, চিরঞ্জি ও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়ে নিন। পছন্দমতো ঠান্ডা বা গরম পরিবেশন করুন।
এ ছাড়াও তৈরি করতে পারেন সন্দেশ, দই-ফুলুরি অথবা ফিউশন মিষ্টি, যেমন চকো-রসগোল্লা বা ম্যাঙ্গো সন্দেশ। এই জামাইষষ্ঠীতে দোকানের নির্ভরতা ছেড়ে রান্নাঘরেই তৈরি হোক মিষ্টির সমাহার। জামাইইয়ের মুখে হাসি ফুটুক আর শাশুড়ির কৃতিত্বে বাড়ুক গৃহের আনন্দ।