দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ STF এবং পুরুলিয়া জেলা পুলিশের অভিযানে জালে শীর্ষ মাওবাদী নেতা। বাঁকুড়ার শিমলাপাল থেকে গ্রেফতার মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোর । কিশোর নামে মাওবাদী শীর্ষ নেতা NIA-এর ‘মোস্ট ওয়ান্টেডের’ তালিকায় ছিলেন। কিশোরের বাড়ি উত্তর শহরতলির আগারপাড়ায়। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংগঠন পুনর্গঠনের দায়িত্বে ছিলেন ওই নেতা।
পুরুলিয়ার সম্প্রতিক কয়েকটি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনে তাঁর উস্কানি ছিল বলে অভিযোগ। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কিশোর এরাজ্যে সংগঠন পুনর্গঠিত করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে উত্তর পূর্ব ভারতের সংগঠনের সঙ্গে লিয়াসন ভূমিকা ছিল তাঁর। সব্যসাচী গোস্বামীর নেতৃত্বে গত ৫ বছরে জঙ্গলমহলের বাইরে, মুর্শিদাবাদ নদিয়া, মালদা, বীরভূমে সংগঠনের বিস্তার হয়। সংগঠনের বিস্তার হয় দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগণাতেও। বাঁকুড়ার বারিকুল এলাকায় সম্প্রতি বেশ কিছু আদিবাসী যুবক মাওবাদী সংগঠনে যোগ দেন। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কিশোরের নেতৃত্বেই নিয়োগ হচ্ছিল জঙ্গলমহলে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ থেকে STF গ্রেফতার করে কিশোরের সঙ্গী প্রতীক ভৌমিককে। তারপরেই জঙ্গলমহলে গা ঢাকা দেন কিশোর।
জানা যাচ্ছে, কিশোর তিন দশকেরও বেশি সময় CPI মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। লালগড় আন্দোলনের সময় সুন্দরবন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনের কাজ করেছেন ‘ওভার গ্রাউন্ড’ কর্মী হিসাবে। সংগঠনের একাধিক প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন। কিশেন জির মৃত্যুর পর এই রাজ্যে সংগঠন অবিন্যস্ত হয়ে পড়ে।
রাজ্য সম্পাদক আকাশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তারপরেই, সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরো ERB সব্যসাচীকে রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্ব দেয়। ২০১৮ সালে গোয়ালতোড়ে তাঁকে একবার পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই মামলায় জামিন পেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যান সব্যসাচী ওরফে বাবু । উত্তর পূর্ব ভারত থেকে লজিস্টিক ঝাড়খণ্ড হয়ে ছত্তিশগড় পর্যন্ত পৌঁছনোর লিয়াসনের ভূমিকা দেওয়া হয়। তিনি জঙ্গলমহলে ছেড়ে, প্রয়াত মাওবাদী নেতা চণ্ডী সরকারের সাহায্যে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ এলাকায় নতুন করে সংগঠন তৈরি করেন।
২০০০ সালে সিপিআই (মাওবাদী)-র কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক ছিলেন সব্যসাচী। ২০০৪ সালে রাজ্য কমিটির সদস্য পদ পান। ২০১৮ সালের পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। মূলত তাত্ত্বিক এই মাও নেতা ভূমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নোনাডাঙ্গা উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনেও ভূমিকা ছিলো তার। ছাত্র জীবনে নকশাল নেতা সন্তোষ রানার দলের সক্রিয় কর্মী। পরে যোগ দেন জনযুদ্ধ গোষ্ঠীতে। দীর্ঘদিন ধরেই হাঁপানিতে আক্রান্ত এই ৫৪ বছরের তাত্ত্বিক মাওনেতা। তবুও অস্ত্র চালানোতেও পারদর্শী সব্যসাচী দলের নির্দেশে বাংলার সংগঠনকে আরও মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।