দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: অবৈধ খাদানে চলছিল পাথর তোলার কাজ। সেই সময় হঠাৎ ধস নামায় মৃত্যু হয়েছে ৬ শ্রমিকের। আহত হয়েছেন আরও তিনজন শ্রমিক। বীরভূমের নলহাটিতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতি এবং অবৈধ বিস্ফোরক সামগ্রীর অবাধ ব্যবহারই এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। তিনি এই ঘটনায় NIA তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। শুভেন্দুর সুরে সুর মিলিয়ে NIA তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেতা মিল্টন রশিদও।
গতকাল নলহাটির বাহাদুরপুর পাথর খাদানে ধস নামে। সেইসময় ওই খাদানের মধ্যে পাথর তোলার কাজ করছিলেন ৯ জন শ্রমিক। ধসে চাপা পড়েন তাঁরা। ধস নামার খরব পেয়ে এলাকার অন্যান্য পাথর খাদানের শ্রমিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা ৬ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। ৩ জন চিকিৎসাধীন।
এই দুর্ঘটনার পর হইচই শুরু হয়। জানা যায়, ওই পাথর খাদান থেকে অবৈধভাবে পাথর তোলা হচ্ছিল। দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে অবৈধ পাথর খাদান নিয়ে সরব হন শুভেন্দু। পাথর খাদানে বিস্ফোরণের জেরে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, “পাথর খাদানে বিস্ফোরণে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল ছয় জন নিরীহ শ্রমিকের। এই দরিদ্র শ্রমিকরা শুধুমাত্র পরিবারের দু’মুঠো অন্ন জোগানোর জন্য এই খাদানে কাজ করছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসনিক গাফিলতি এবং অবৈধ প্রাণঘাতী বিস্ফোরক সামগ্রীর অবাধ ব্যবহারের ফলেই এই দুর্ঘটনা। স্থানীয় শাসকদলের নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজশে এই ধরনের অসংখ্য অবৈধ খাদান এই এলাকায় গড়ে উঠেছে। এর জন্য রাজ্য সরকার পুরোপুরি দায়ী।”
পাথর খাদানে ৬ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় NIA তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি লেখেন, “ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA এই এলাকায় দুটি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। যার একটি হল বীরভূমের মহম্মদবাজারে পাচারের সময় উদ্ধার হওয়া ৮১০০০ জিলেটিন স্টিক ও ডিটোনেটর। অন্যটি বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার লিপারি এলাকায় মোটরসাইকেলে বিস্ফোরক বহনের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা। এর পরও যে বিস্ফোরক পাচার বন্ধ হয়নি, এই ঘটনা তার প্রমাণ। এই ঘটনার বিষয়েও আমি এনআইএ তদন্তের দাবি করছি। অবিলম্বে বিস্ফোরক ব্যবহারকারী অবৈধ চক্রগুলির বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। নচেৎ এমন বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ আগামিদিনে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শুধু তাই নয়, এই বিস্ফোরক পাচার হয়ে কোনও দেশবিরোধী শক্তির হাতেও পড়তে পারে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
শুভেন্দুর মতো NIA তদন্তের দাবি জানিয়ে কংগ্রেস নেতা মিল্টন রশিদ বলেন, “আমার কাছে খবর রয়েছে, বীরভূমের ২০০টি পাথর খাদানের মধ্যে ৬-৭টি সরকার অনুমোদিত। বাকি খাদানগুলি অবৈধ। আর অবৈধ খাদানগুলিতে বিস্ফোরণের জন্য বিস্ফোরক কোথা থেকে আসে, সেগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। এগুলো রাজ্য সরকার ঠিকমতো দেখবে না। তাই আমরা রাজ্য কংগ্রেসের তরফে এই নিয়ে NIA তদন্ত চাইছি। যদি তদন্ত ঠিকঠাক না হয়, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব। যাতে অবৈধ খাদানগুলি বন্ধ হয়। আর বীরভূমের কোনও ছেলের যাতে প্রাণ না যায়।”