West Bengal

2 weeks ago

Buxa Tiger Reserve : কথা ছিল উড়িয়ে আনার, হেঁটেই মানসের বাঘ ঢুকে পড়ল বক্সায়!

Buxa Tiger Reserve
Buxa Tiger Reserve

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাঘশূন্য বদনাম ঘুচেছে বছরখানেক আগে। জাতীয় বাঘশুমারির পরিসংখ্যানে উত্তরবঙ্গের বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভে রীতিমতো ফোটোগ্রাফিক এভিডেন্স-সহ নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন শার্দূল সম্রাট। এখনও এ জঙ্গলে রেসিডেন্ট টাইগার নেই ঠিকই, তবে ২০১৭ থেকে ২০২৪— প্রায় প্রতি বছর নির্দিষ্ট কয়েক মাসে বক্সায় তার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে নানা ভাবে। কিন্তু কিছুতেই জানা যাচ্ছিল না, বক্সায় বাঘ আসছে কোথা থেকে। ভুটান, নাকি ভারতের জঙ্গল?

এবার ক্যামেরা ট্র্যাপের ছবি থেকে প্রথমবার জানা গেল, বক্সার অন্তত একটি সোর্স পপুলেশনের (যে জঙ্গল থেকে বাঘ আসছে) নাম। অসমের মানস টাইগার রিজ়ার্ভ। একই সঙ্গে আলোচনায় উঠে এল বাংলা-অসমের মধ্যে থাকা বাঘেদের ঐতিহাসিক বায়োলজিক্যাল করিডরের কথা, যা সময়ের সঙ্গেন বন্যপ্রেমীরা।

জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের (এনটিসিএ) তরফে দিন দুয়েক আগে প্রকাশিত ক্যামেরা ট্র্যাপের ছবিতে দেখা দিয়েছে, যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মানস টাইগার রিজ়ার্ভে ঘোরাফেরা করছিল, সেই পুরুষ বাঘই ২০২৪, অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারিতে পা রেখেছে বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভে। নিরাপত্তার কারণে দু’টি ক্ষেত্রেই বাঘের নির্দিষ্ট অবস্থান সামনে আনা হয়নি। এনটিসিএ আধিকারিকদের দাবি, মানসের জঙ্গল তথা গোটা অসমে টাইগার করিডর সংরক্ষণের প্রমাণ এই দু’টি ছবি। কারণ, জঙ্গল ছাড়াও ছোট বসতি এলাকা, রাস্তা, পাহাড়ি নদী, চা-বাগান রয়েছে বক্সা-মানসের মধ্যে। সেসব বাধা পেরিয়ে মানসের বাঘ বক্সায় এসেছে মানে তার যাত্রাপথে আপাতত ‘মিনিমাম ডিস্টার্বেন্স’ রয়েছে।

মানসের ডিএফও সুবোধ তালুকদার যদিও বলছেন, ‘বাঘটি অসম থেকে সরাসরি ঢুকেছে, না ভুটান ঘুরে বাংলায় গিয়েছে, সেটা এখনই বলা মুশকিল। কারণ মানসের জঙ্গল ভারত-ভুটান সীমান্তে। বাঘ যে কোনও পথ ধরতে পারে।’ তবে বঙ্গের বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা দু’টি করিডরের কথাই মাথায় রাখছেন। রাজ্য বন দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষের কথায়, ‘ভুটান হয়ে নেওড়া ভ্যালির রুট ধরে একাধিক বার বাঘের দেখা মিলেছে। সেটা বক্সায় ঢোকার একটা রুট। তবে বক্সার বাঘেদের বায়োলজিক্যাল করিডর আরও একটা রয়েছে। মানসের জঙ্গলের বাফার দিয়ে উল্টাপানি ফরেস্ট হয়ে রায়মোনা ন্যাশনাল পার্ক আর সঙ্কোশ নদী পার করলেই বাংলা। তার পর রায়ডাক নদী পেরিয়ে বাঘ আসতেই পারে বক্সায়।’

এ বছর কি সেই পথেই মানসের বাঘ এল বক্সায়? সম্ভাবনা কিছুটা বেশি, কারণ এক্ষেত্রে যাতায়াতের দূরত্ব অনেকটা কম। তা ছাড়া ভুটান ভূখণ্ডে থাকা রয়্যাল মানস টাইগার রিজ়ার্ভ-সহ সে-দেশের একাধিক বাঘ-জঙ্গল পার করে অসমের বাঘের বাংলায় ঢোকার তত্ত্বের বিরুদ্ধে যেতে পারে আরও একটা তথ্য। ২০১৫ থেকে ২০২২ — এই সাত বছরে ভুটানে বাঘের সংখ্যা একলাফে ২৭% বেড়ে ১৩১-এর পৌঁছেছে।

ফলে সেখানকার জঙ্গলেও জায়গা দখল নিয়ে বাঘেদের মধ্যে ‘ইনফাইটিং’ শুরু হয়েছে। সেই কারণেই হোম রেঞ্জ বাড়াতে এবং সঙ্গিনীর খোঁজে ভুটানের হা স্যাংচুয়ারি থেকে নেওড়া ভ্যালির জনবসতিহীন অথচ জীববৈচিত্র্যে ভরা জঙ্গলপথে বার বার দেখা মিলছে পুরুষ বাঘের, মনে করছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা। তাই ভারত-ভূখণ্ডে থাকা মানসের পুরুষ বাঘের কাছে সেই রুট সহজ নয় একেবারেই।

ঘটনাচক্রে, বক্সার জঙ্গলে বাইরে থেকে বাঘ আনার জন্য যে প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিআর) ২০১৭ সালের প্রথমে গ্লোবাল টাইগার ফোরাম এবং এনটিসিএর কাছে জমা পড়েছিল, তাতে বাঘের সোর্স পপুলেশন হিসেবে অসমের কোনও জঙ্গলকেই চেয়েছিলেন বাংলার বনকর্তারা। রাজ্যের তৎকালীন প্রধান মুখ্য বনপাল প্রদীপ ব্যাস বলছেন, ‘কাজিরাঙা বা ওরাং, যেখানে সারপ্লাস পপুলেশনের সমস্যা শোনা যায়, আমরা চাইছিলাম সেখানকার বাঘ। তবে মূল চয়েস ছিল অসম। কোন জঙ্গল, সেটা ওখানকার বনকর্তারাই ঠিক করতেন।’

সেই ডিপিআর জমা পড়ার সাত বছর পর অসমের বাঘ নিজেই পায়ে হেঁটে বক্সায় ঢুকে পড়ায় রীতিমতো এক্সাইটেড বনকর্তা উজ্জ্বল ঘোষ। তাঁর মতে, ‘যে কোনও জঙ্গলে বাঘের হার্ড রিলিজ়ের (ট্রান্সলোকেশন/রিলোকেশন) তুলনায় প্রকৃতির নিয়মে তাদের ঢুকে পড়া অনেক বেশি কাম্য। টেরিটরি এক্সটেনশন বা ট্রানজ়িশান— যে কারণই হোক, পড়শি জঙ্গল থেকে বক্সায় গত কয়েক বছরে বার বার বাঘ আসায় এটুকু স্পষ্ট, হ্যাবিট্যাট ম্যানেজমেন্ট, প্রোটেকশন এবং প্রে-বেস বাড়ানোর কাজটা আমরা ঠিকমতো করতে পারছি। কোর এরিয়া থেকে গাঙ্গুটিয়া ও ভুটিয়া বস্তি রিলোকেট করা গিয়েছে সফল ভাবে। ফলে সেখানকার নিরুপদ্রব জঙ্গলে বাঘের আনাগোনা আরও বাড়বে আশা করাই যায়।’

১৯৮৩ সালে টাইগার রিজ়ার্ভ হওয়ার পরে কখনওই বাঘ-জঙ্গল হিসেবে সুনাম কুড়োতে পারেনি বক্সা। থেকে গিয়েছে ‘লো ডেনসিটি’ তকমা নিয়েই। সেই দিন কি তবে দ্রুত পাল্টাচ্ছে? এখনই এতটা আশাবাদী হতে পারছেন না প্রদীপ ব্যাস। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘বাঘ এসে প্রতি বছর ক’দিন থেকে ঘুরে চলে যাচ্ছে মানে বক্সার জঙ্গলকে তারা শুধুমাত্র এক্সটেন্ডেড টেরিটরি বা হোম রেঞ্জ হিসেবে ভাবছে। থাকার উপযুক্ত মনে করছে না। তার একটা কারণ যদি হয় বনবস্তি-সহ নানা ডিস্টার্বেন্স, অন্য দু’টো সম্ভাব্য কারণ সারা বছর থাকার মতো খাদ্য (প্রে বেস) এবং সঙ্গিনী না-থাকা। এই সমস্যাগুলো মিটলে তবেই বাঘ পাকাপাকি ভাবে থাকবে বক্সায়।’ সোনালি রেখা দেখা যাচ্ছে। কতটা দূরে, সেটাই প্রশ্ন।

You might also like!