আগরতলা : কোনও রকম রাজনৈতিক চাপের সামনে মাথা নত করতে হবে না । ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক থেকে শুরু করে একেবারে থানা স্তরের আধিকারিকদের নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। সেখানেই পুলিশকে অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা ।এদিনের এই পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, জেলা পুলিশ সুপার, ট্রাফিক পুলিশ সুপার, এসডিপিও এমনকি সব থানার ওসিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শুরুতে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরেন।
এই পর্যালোচনা বৈঠকে বিশেষ করে তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। প্রথমত দেশের প্রধানমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক ত্রিপুরাকে তিনি নেশা মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজ্য পুলিশের কাছে আহ্বান রাখেন। রাজ্যজুড়ে নেশার যে রমরমা চলছে তা কোনভাবেই বরদাস্ত নয় বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক ড্রাগ ফ্রী ইন্ডিয়ার মতোই ড্রাগ ফ্রী ত্রিপুরা গড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
নেশার বিরুদ্ধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। নেশা বিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকায় সন্তুোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই নেশা কারবারের সঙ্গে যুক্ত মূল কান্ডারীদেরকে গ্রেফতারে পুলিশকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূল পান্ডাকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ছিঁচকেদের আটক করে নেশা বিরোধী অভিযানে পুরোপুরি সাফল্য আসবে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এই পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার সাহা রাজ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে ত্রিপুরা রাজ্যের তিন দিক যেহেতু বাংলাদেশ বেষ্টিত এবং ভারত বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে এই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে রাজ্যে, তাই বলা যায় এটি একটি দ্বীপাক্ষিক বিষয় এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপর মূল দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু এক্ষেত্রেও পুলিশকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ প্রাথমিকভাবে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের উপরই বর্তায়। এর জন্য স্থানীয় থানার পুলিশ আধিকারিকদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আরো বেশি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এই পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নতুনভাবে ভাববার কথা বলেছেন। দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও রাস্তার পরিধি খুব একটা বাড়েনি। যার ফলে যানজট, দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিত্য নৈমিতিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য ট্রাফিক দপ্তরকে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে বলা হয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে নিজের মতামত ব্যক্ত করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশের কি কি সমস্যা রয়েছে সে সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট করা হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে বিভিন্ন থানায় গাড়ির সমস্যা, পুরানো দালান ঘর, আবাসনের সমস্যা, প্রযুক্তিগত সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে এই পর্যালোচনা বৈঠকে অবহিত করা হয়েছে। এইসব সমস্যা দূর করতে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের কাছে। তাছাড়া রাজ্য পুলিশের প্রায় ৪০ শতাংশ যে শূন্য পদ রয়েছে সে সম্পর্কেও অবগত রয়েছেন বলে এই পর্যালোচনা বৈঠকে স্বীকার করেন মুখ্যমন্ত্রী।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত নতুন পুলিশ স্টেশন উদ্বোধন হবে বলে তিনি জানান। কারণ এই সাইবারক্রাইম বর্তমান সময়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে রাজ্য পুলিশের দেড়শ বছর পূর্তি চলছে এবং রাজ্য পুলিশের একটি উজ্জ্বল অতীত রয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এরই ফলশ্রুতিতে সারা দেশের ২৮ টি রাজ্যের মধ্যে গড় অপরাধের বিচারে ত্রিপুরা পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তবে এই উজ্জ্বল অতীতকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে বলে তিনি পুলিশের আধিকারিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন।
রাজ্য থেকে মাফিয়া শব্দ অবলুপ্ত করে দিতে হবে- সিন্ডিকেট, কাটমানি বাণিজ্য, নেগসিয়েশন কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এই লক্ষ্যে পুলিশকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা এবং কোনরকম রাজনৈতিক চাপের সামনে মাথা নত করতে হবে না বলে তিনি পুলিশকে অভয় দিয়েছেন। এক কথায় রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে রাজ্য পুলিশকে পুরোপুরি ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া হয়েছে বলা যায়। এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেও অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে এক পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হয়ে অনুরূপ নির্দেশ ও ফ্রি হ্যান্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের সাফল্য অনেকটা প্রশ্নের মুখে রয়ে গেছে এখনো। দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর এবার তা কতটা ফলপ্রসূ হয় এখন তাই দেখার।