দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ পানের সঙ্গে খাবার খয়ের, পেঁয়াজ আর সেগুন গাছের পাতা। এই তিন রঙেকে একত্রিত মিশিয়ে সুতো রাঙিয়ে তৈরি হয় ইনাফি। সেই ইনাফির কুশলতা সহ ট্র্যাডিশনাল তাঁতের কাপড়, গামছা, বিছানার চাদর, পাছরা। নানা শিল্প নিজের হাতে অনায়াসে দক্ষতায় তৈরি করে চলেছেন চল্লিশ শতাংশ বিশেষ সক্ষম নির্মলা সিনহা। ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার বড় সুরমা এলাকার এই শিল্পী আজ দেশের সেরা তাঁতশিল্পী।
ছোট থেকে শখকে অবলম্বন করে মায়ের কাছে শিখেছেন তাঁত বোনার কৌশল। যত বয়স বেড়েছে এসেছে আরও দক্ষতা, শৈল্পিক ভাবনা। আর এর জেরে নির্মলা সিনহা ২০২৩ সালে দেশের মধ্যে সেরা তাঁতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
আগামী ৮ আগস্ট নয়াদিল্লিতে তাঁকে সম্মাননা জানানো হবে। এরই ফাঁকে ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার বড় সুরমা এলাকার বাড়িতে বসে নিজের এই গৌরবময় অর্জনের নানা দিক তুলে ধরেছে নির্মলাদেবী।
নির্মলা দেবী জানান, তিনি চার ভাই তিন বোনের মধ্যে চতুর্থ। বোনদের মধ্যে সবার বড় তিনি। বাবা ছিলেন শিক্ষক। বর্তমানে প্রয়াত। আছেন মা জয়ন্তী সিনহা। বয়স প্রায় ৮৫ বছর। নির্মলা ছোট থেকেই বিশেষ সক্ষম। এরই মধ্যে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা।
১৯৯৫ সালে কমলপুর সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন। ছোট থেকে মায়ের কাছে শিখেছেন তাঁত বোনার নানা কলাকৌশল। নির্মলা জানান, তিনি ট্র্যাডিশনাল তাঁত বোনতে বেশি স্বচ্ছন্দ্য। একই সঙ্গে মণিপুরি ইনাফি বা ওড়না তাীর বেশি পছন্দের। খয়েরের রং, পেঁয়াজের রং আর সেগুন পাতার রঙ একত্রিত মিশিয়ে তৈরি করেন তাঁত বোনায় ব্যবহৃত সুতোর রঙ। সেই রঙের সুতো দিয়ে তৈরি হয় ওড়না। তাঁর কাজ দেখে খুব আগ্রহী হন স্থানীয় মলয়া ক্লাস্টার-এর দুই প্রশিক্ষক অনিন্দিতা কর্মকার এবং সুস্মিতা চক্রবর্তী।
তাঁরা নির্মলার তৈরি সামগ্রীপত্র পাঠান আগরতলায়। সেখান থেকে সেগুলো যায় দিল্লি। তার পর সারা দেশের শিল্পীদের টেক্কা দিয়ে ২০২৩ সালের শ্রেষ্ঠ তাঁতশিল্পী হন নির্মলা।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এই শিল্পকলাকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি নির্মলা। বাকিদের এই শিল্পে যুক্ত করতে মৈত্রী তাঁত ক্লাস্টার শুরু করেছেন তিনি। নির্মলা আজ শুধু জেলা নয়, গোটা রাজ্য ও দেশের গর্ব। এই পুরস্কার ও সম্মান পেয়ে তিনি আনন্দিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যদি সরকার তাঁকে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়, তা-হলে আগামীদিনে আরও নতুন শিল্পী তৈরি করতে চান তিনি।কিন্তু, সারা দেশের গর্ব চল্লিশ শতাংশ বিশেষ সক্ষম শিল্পী নির্মলা সিনহা কোনও সরকারি সাহায্য পাননি আজও।