দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ-ভারতে এমন অনেক উপত্যকা আছে যার সৌন্দর্য (Nature) শব্দে বর্ণনা করা কঠিন। বিশেষত উত্তর ভারতে যে সব উপত্যকাগুলো রয়েছে সেগুলো তার সৌন্দর্যের জন্যই পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের (North-East India) পর্যটক কেন্দ্রগুলোর জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতেও এমন কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যার জনপ্রিয়তা অন্যান্য সব পর্যটন কেন্দ্রের যে বেশি। এমনই একটি উপত্যকা হল নাগাল্যান্ডের জুকু (Dzukou Valley)।
উত্তর-পূর্ব ভারতে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত জুকু উপত্যকা ট্রেকারদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। পূর্ব-ভারতে নাগাল্যান্ড এবং মণিপুর রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত জুকু উপত্যকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দু হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় জুকু উপত্যকা তার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য বিখ্যাত। শোনা যায়, এখানে যে ফুল ফোটে তা ভারতের অন্য কোথাও দেখা যায় না। যদিও এখানে প্রকৃতির যে সবুজ নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, তা হিমালয়ের অন্য কোথাও দেখা যায় না।
জুকু উপত্যকার ইতিহাস খুবই আকর্ষণীয়। এই উপত্যকা সম্পর্কে স্থানীয়রা বলে যে এর ইতিহাস চার-পাঁচ শত বছরের পুরনো নয়, বরং হাজার হাজার বছর পুরনো। প্রাচীনকালে এই উপত্যকায় তুষারমানব বাস করত বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীনকালে, পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এই উপত্যকাকে হিমান বা আদিম মানুষের আবাসস্থল বলে মনে করা হত। যদিও, এখন এই স্থানটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এবং এই জায়গাটি পূর্ব ভারতের মানুষের জন্য স্বর্গের চেয়ে কম নয়।
মরসুমি ফুল, গাছপালা আর উঁচু পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা এই উপত্যকা। যে এটি পূর্ব-ভারতের এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে আপনিও প্রকৃতির প্রেমে পড়তে বাধ্য। এখানে এলে নাকি প্রায় সবাই কবি হয়ে যায়। এই উপত্যকা সবচেয়ে বেশি ট্রেকিংয়ের জন্যও বিখ্যাত। যে নাগাল্যান্ডের বিশ্বেমা গ্রামের পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এখানে সহজেই যাওয়া যায়।
জুকু ভ্যালি যাওয়ার দুটো পয়েন্ট আছে, ভিসামা আর জাখামা। কিসিমা ভিলেজ থেকে ভিসামা যাত্রাপথ মোটামুটি ৪৫ মিনিট। ভিসামা থেকে জুকু ভ্যালি যাওয়ার পারমিট নিতে হয়। পারমিট নিয়ে আরও ৪০ মিনিট গেলে ভিসামা বেস পয়েন্ট। লম্বা, ঘন গাছের সারির মধ্যে দিয়ে হাঁটা পথ। পাশাপাশি ২-৩ জন হাঁটতে পারবে এই রাস্তায়। মাঝে মাঝে ম্যাপেল গাছের পাতা সারিবদ্ধ ভাবে রাস্তা দখল করেছে। ৪০০ মিটার মত হাঁটার পর শুরু হবে চড়াই রাস্তা। প্রায় ১ কিলোমিটার মত খাড়া পথ। পাথর গুলো সিঁড়ির মত সাজানো। কিন্তু শীর্ষে পৌঁছানোর পর সব ক্লান্তিই চলে যাবে।
একটু ওপরে উঠে দেখা যায় নীচে ভিসামা গ্রাম। সামনে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা। দূরে নীল আকাশের নীচে সাদা মেঘের আস্তারন আর অগুন্তি নাম না-জানা পাহাড়ের চুড়া। দু’চোখ ভরে উপভোগ করা যায় প্রকৃতিকে। রাস্তা যদিও এখনও শেষ হয়নি। ঘন বাঁশ বন আর পাহাড়ি ফুলকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যেতে হয় আরও পথ। এরপর যখন জুকু উপত্যকায় পৌঁছাবেন, মনে হবে স্বর্গে এসে পৌঁছেছেন।