দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ যারা সমকামী পুরুষ- বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর সাথে তাদের যৌনজীবন কি সবসময়ই অশান্তিতে জর্জরিত? আপনার স্বামী এসে যদি আপনাকে বলে “আমার তোমাকে কিছু বলার আছে”- প্রথম যে চিন্তা বিদ্যুৎচমকের মত আপনার মাথায় খেলে যাবে তা হল, “হয় ও মারা যাচ্ছে নয়তো প্রেমে পড়েছে!” হয়তো দুটোই সত্যি, কিন্তু ‘এমন কিছু’ শুনলে আপনার ‘বিয়ে’র যে অবস্থা হবে তার থেকে অবশ্যই কিছুটা আলাদা! সে অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে দেখে আপনার হয়তো তাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু যদি তা হয় এক বা একাধিক পুরুষের সঙ্গে? আপনার শখের বাগানে অকস্মাৎ বজ্রপাত! কোথায় গেল বুড়ো বয়সে হাত ধরাধরি করে বেড়ানোর স্বপ্ন? আমি এতদিন কোথায় ছিলাম? বিন্দুমাত্র টের পেলাম না? এসব ভাবনায় আপনার দম বন্ধ হয়ে আসবে। এরপর সোজা বিবাহ বিচ্ছেদ। নাকি থেকে যাবেন? পুরোটা নির্ভর করে আপনার বিয়ের শক্তির ওপর, আপনার বিয়ে টিকিয়ে রাখতে চাওয়ার ইচ্ছের ওপর। না, তারমানে এই নয় যে আপনার স্বামী বাসার কাজের ছেলেটির সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার পরেও আপনাকে তা সহ্য করে যেতে হবে। তার মানে হল, স্বামীকে এবং তার সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি যৌন আকর্ষণের কারণটি আপনাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার স্বামীই আপনার আশেপাশে একমাত্র সমকামী মানুষ নয়। আমরা ধরেই নিই যে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থাকা মানেই অনিবার্যভাবে নারী বা পুরুষটি সমকামী। পাশাপাশি আরেকটি সম্ভাবনা আমরা উপেক্ষা করে যাই, মানুষটি হয়তো সকল লিঙ্গের প্রতিই স্বচ্ছন্দ। আসল প্রশ্নটি হল, আপনার পুরুষসঙ্গীটি ছেলেদের সঙ্গে যৌনমিলনে আগ্রহী কেন? এটা কি একান্ত গোপন কোনো বন্ধুত্ব? টেস্টোসটেরনের অভাব? সুপ্ত নারীত্ব? আত্মনিবেদনের আকাঙ্ক্ষা? নাকি হঠাৎই ঘটে যাওয়া একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? যৌনতা আর এর বহুমুখী বিকাশের আজকের দুনিয়ায় শেষ কথা বলে কিছু নেই। যদি থাকত তবে আর কোনো থেরাপিস্ট, প্রশিক্ষক বা কাউন্সিলরের প্রয়োজন হতো না। সঠিক যৌনতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশ করা হতো এবং সবার যৌনজীবন নির্বিঘ্ন হতে পারত। বাস্তবতা হল, পৃথিবীতে তথাকথিত “স্বাভাবিক” দম্পতিদের মধ্যে (যদি সত্যি স্বাভাবিক বলে কিছু থেকে থাকে) অনেকেই মিশ্র ধরনের যৌনজীবন যাপন করে। যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজন সমকামী। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। “মিক্সড ওরিয়েন্টেশন ম্যারেজেস” লিখে গুগোল করলে এই ধরনের বিবাহবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য প্রচুর পরামর্শ এবং তথ্যবহুল অনুচ্ছেদ পাওয়া যায়। কষ্ট করে একটু খোঁজখবর করলেই সম্পূর্ণ গোপন একটা জগত বেরিয়ে পড়ে, যেখানে এইধরনের দম্পতির উভয় সদস্যের জন্যই রয়েছে পর্যাপ্ত সুপরামর্শ। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। কেন? কারণটি হয়তো আপনার অজানা নয়। সমকামী বিয়ের প্রতিক্রিয়া সমাজে কেমন হয় তা হয়তো আপনি জানেন। এমন একটি দিনও যায় না যেদিন সমকামী হওয়ার দায়ে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ লাঞ্ছিত, নিপীড়িত এমনকি খুন হয় না। অতএব মিশ্র বিয়ের ছদ্মবেশে সমকামিতা চলতে থাকে। যতদিন সমাজের মূলস্রোতের একটি ধারা হিসেবে সমকামিতা গৃহীত না হবে, ততদিন এই লুকোছাপা চলতেই থাকবে। পরিবর্তন সবসময়েই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বেশিরভাগ মানুষের লিঙ্গ এবং যৌনতার ধারণা হয় সাদা নয়তো কালোর মতো দুই মেরুতে বিভক্ত। সেখানে ধূসর রঙের কোনো স্থান নেই। সুতরাং পরিবর্তন কষ্টসাধ্য। কিন্তু ধূসর রঙ বা সাদা-কালোর বাইরে অন্য যেকোনো রঙ সাদা-কালোর মতই সত্য এবং স্বাভাবিক। তা নিয়ে কথা বলতে হবে। চলুন দেখা যাক মিশ্র বিয়ে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজন সমকামী; কেন সুবিবেচনার যোগ্যতা রাখে:
১) যা টিকে থাকে তা নিজ যোগ্যতায়ই টিকে থাকে
সমকামী, উভগামী, বহুকামী, পরিবর্তিত বা তৃতীয় লিঙ্গ- যেকোনো ধারার যৌনতার চর্চাই করুক না কেন, তা সে যত বিচিত্রই হোক- একজোড়া মানুষ যদি নির্বিঘ্নে পাশাপাশি থাকতে পারে তবে তাদের সেভাবেই থাকতে দেয়া উচিত। আপনার একান্ত নিজস্ব যৌনজীবন অন্য কারো নির্দেশে চলতে পারে না।
২) প্রতিটি গল্পেরই দুটি ভিন্ন দিক থাকে
হঠাৎ আবিষ্কার করা সমকামী সঙ্গীকে নিয়ে অধিকাংশ মানুষই বিপন্ন এবং অসহায় বোধ করে। কিন্তু খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে দুজনের মানসিক অবস্থা জানার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়ার সূচনা হতে পারে। আসল ঘটনা উন্মোচিত হলে আপনি আপনার প্রশ্নগুলোর জবাব পাবেন এবং দুজনে মিলে এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৩) আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ চিহ্নিত করুন
যদিও ব্যাপারটা বেশ কঠিন, কিন্তু তাঁকে জানতে হবে তাঁর মনের গহীনে কী আছে। সমকামী সঙ্গীটির প্রতি তাঁর যে আকাঙ্ক্ষা তা কি যৌনকামনা, না আবেগিক চাহিদা? যদিও উভয়ই উভয়ের পরিপূরক, কিন্তু চাহিদা যদি শুধু যৌনতাকেন্দ্রিক হয় তাহলে সমকামিতা অনিবার্য নয়। পরিপূর্ণ যৌনতৃপ্তি এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান যা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর কাছ থেকেও আসতে পারে। কিন্তু সমকামী সঙ্গীটির সঙ্গে যদি আবেগিক সম্পর্কও থাকে সেক্ষেত্রে নিজের সম্পর্কে ধারণাটি পরিষ্কার করে নেওয়াই ভাল। নিজের কাছেও এবং নিজের বিবাহিত সঙ্গীর কাছেও। স্বামীর কাছে জানতে চান এই ব্যাপারটি সম্পর্কে।
৪) সমলিঙ্গের কারো সঙ্গে যৌনমিলনের ইচ্ছা হওয়া মানেই কি মানুষটি সমকামী?
অবশ্যই না। বিচিত্র ধরনের যৌন আকাঙ্ক্ষা উদ্ভূত হয় যৌনতৃপ্তির তৃষ্ণায়। পদ্ধতি যতই বিভিন্ন হোক উদ্দেশ্য কিন্তু সবারই এক থাকে- যৌনতৃপ্তি। কাজেই কেউ যদি বিচিত্রতার স্বাদ নিতে প্রচলিত স্বীকৃত পথের বাইরে যায় তাকে শুধু সমকামিতার দোষ দেওয়া যায় না।
৫) যৌনতার সঙ্গে বিয়ের কী সম্পর্ক?
প্রচলিত সমাজব্যবস্থায়, যৌনতা এক বিরক্তিকর স্থবিরতার পর্যায়ে উপনীত। অধিকাংশ মানুষের কাছেই যৌনতা বংশবৃদ্ধির উপায় অথবা বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন সমকামী হলেও যদি দাম্পত্য টিকে থাকে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে সম্পর্কটা শুধু যৌনতাকেন্দ্রিক নয়। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সঙ্গ, দুজনে সব ভাগ করে নেয়া এবং সামাজিক অবস্থানে দুজন মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতাই এক্ষেত্রে মুখ্য। যৌনতা একটি পছন্দ অথবা বাধ্যতা মাত্র। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, যারা সঙ্গীর সমকামিতার দোহাই দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ করেন তারা ভুলে যান যে অসংখ্য পরিবার আরও অন্যান্য কারণেও বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভুল মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়, সেখানে সমকামিতা কোনো অযোগ্যতা নয়। অপরাধও নয়। দাম্পত্যজীবনে সঙ্গীর সমকামিতা ছাড়াও আরও অনেক গুরুতর সমস্যা থাকতে পারে। সুতরাং আপনার সমকামী সঙ্গীকে নিয়েও আপনার দাম্পত্য জীবন হতে পারে মধুময়। ভালোবাসা সব প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পারে, এমনকি একজন সমকামী সঙ্গীও। আপনার বিবাহিত জীবন নিজের মতো করে যাপন করার অধিকার যেমন আপনার আছে, তেমনি অপরজনকেও তার বিবাহিত জীবন তার নিজের মতো করে উপভোগ করার অধিকার আপনাকে দিতে হবে। দিনশেষে ধূসর রঙের উপস্থিতি সর্বত্র বিদ্যমান, এমনকি বিবাহবন্ধনেও।