
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ সময় জেলবন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এই কেন্দ্রের জনগণের সঙ্গে তাঁর সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।তবে মঙ্গলবার জেল থেকে বাড়ি ফিরেই তিনি তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক 'মেরামত' করার কাজে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বেহালা পশ্চিমের জনগণের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে প্রাক্তন মন্ত্রী সরাসরি জানতে চেয়েছেন: "চাকরি দেওয়ার বদলে কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি?" এর মাধ্যমে তিনি অভিযোগের সত্যতা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন জাগিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা শুরু করলেন।
রাজ্যের শিক্ষা দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের। অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ‘অযোগ্যদের’ চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। কারা টাকা তুলেছেন, দুর্নীতির শিকড় কোথায়— তা নিয়ে গত কয়েক বছরে নানা তথ্য দাখিল করেছেন তদন্তকারীরা। পার্থ এবং তাঁর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে একযোগে তল্লাশি চালায় ইডি। তবে পার্থের বাড়ি থেকে কোনও টাকা উদ্ধার না-হলেও অর্পিতার বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার পরই দু’জনকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জেল থেকে বেরিয়ে সেই পার্থই বেহালাবাসীর কাছে জানতে চাইলেন, তিনি কার থেকে টাকা নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর নাম করে কেউ টাকা তুলেছেন কি না, তা-ও জানতে চান পার্থ। বেহালা (পশ্চিম)-এর বিধায়ক মনে করেন, ‘‘ আমার সততার ছবিকে যারা মসীলিপ্ত করার চেষ্টা করল— তাদের ছেড়ে দেওয়া সামজিক অপরাধ।’’
২০০১ সাল থেকে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে টানা জিতে আসছেন পার্থ। এক সময় বিরোধী দলনেতাও সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা। পরে মন্ত্রী হন। বেহালা (পশ্চিম)-এর পাঁচ বারের বিধায়ক, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য কী কী কাজ করেছেন, তার খতিয়ান চিঠিতে তুলে ধরেছেন পার্থ। তিনি মনে করেন, বেহালাবাসীর ‘আশীর্বাদেই’ বার বার জিতেছেন। পার্থ এ-ও মনে করেন, তাঁর কর্মজীবনের ছন্দপতন হয় ২০২২ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর। পার্থের দাবি, চাকুরিজীবন থেকে শুরু করে মন্ত্রী হিসাবে তিনি সমাজে যে প্রতিষ্ঠা বা সম্মান পেয়েছিলেন, ‘তা মিথ্যা অপবাদে ভুলণ্ঠিত’ হয়েছে। তাই জেল থেকে ফিরেই নিজের ‘ভাবমূর্তি’ পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় নামলেন পার্থ।
‘দুযারে বিধায়ক’-এর মাধ্যমে বেহালাবাসীর কাছে পৌঁছে যেতে চান পার্থ। তিনি চান, তাঁর নাম করে কেউ যদি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা তোলেন, তা তাঁর ‘জনবাক্স’-এ প্রমাণ-সহ জমা করুন। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। বেহালাবাসীর উদ্দেশে পার্থের আবেদন, ‘‘সুদীর্ঘ কর্মজীবন বা পরিষদীয় জীবনে কেউ আমার ‘সততা’ নিয়ে প্রশ্ন করেনি। আমার ছবিকে মসীলিপ্ত হওয়ার থেকে উদ্ধার করুন।’’ চিঠির শেষে পার্থ জানান, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। তবে উত্তর চান।
উল্লেখ্য, জেল থেকে ফিরেই চালু করলেন তাঁর ‘জনবাক্স’। সাধারণ মানুষ, বিশেষত, নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে এই উদ্যোগ পার্থের। তাঁর আবেদন, ওই বাক্সে জমা হোক নানা অভিযোগ। মূলত, শিক্ষা দুর্নীতিতে তাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠেছিল, সেই সম্পর্কিত বিষয়ই জানতে চেয়েছেন পার্থ।
তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন রাজনীতির ময়দান থেকে দূরেই ছিলেন পার্থ। রাজনীতির কৌশল ভুলে আইনি লড়াই লড়েছেন তিনি। তবে জেল থেকে বাড়ি ফিরে আবার নিজের চেনা ময়দানে সক্রিয় হলেন। মঙ্গলবারই তৃণমূলনেত্রী মমতাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। ওই চিঠির প্রতিলিপি গিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছেও। সেই চিঠিতে পার্থ জানতে চান, তাঁকে দল সাসপেন্ড করে থাকলে সেটা দলের কোন নিয়মবলে করা হয়েছে। দলের মধ্যে নিজের অবস্থান নিয়ে তৃণমূলের একদা মহাসচিব যেমন চিন্তিত, তেমনই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে তৎপর হলেন। পরের বছরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূল তাঁকে সাসপেন্ড করায় পুরনো দলের টিকিটে ভোটে লড়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে হয় তাঁকে নির্বাচনী রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে, নয়তো অন্য কোনও দলে যোগ দিয়ে বা নির্দল হিসাবে ভোটে লড়তে হবে। অনেকের মতে, যদি তিনি ভোটে লড়েন বেহালা পশ্চিমের বাসিন্দাদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তা এখন থেকেই পরখ করে নিতে চাইছেন পার্থ।
মঙ্গলবার বাড়ি ফিরে পার্থ জানিয়েছেন, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে নির্দল বিধায়ক হিসাবে যোগদান করে বক্তৃতা করতে চান। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমি বেহালা পশ্চিমের (বিধানসভা) মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। যাঁরা আমাকে সৎমানুষ মনে করেন, পর পর পাঁচ বার নির্বাচনে জিতিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছেই বিচার চাইতে যাব।’’
