International

4 days ago

Mass Trial Of A Vaccine: মশার কামড় থেকে পাখি বাঁচাতে আরও মশা! ম্যালেরিয়া ঠেকাতে হাওয়াই-দাওয়াই

Month trial of a vaccine
Month trial of a vaccine

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাচ্চারা তখন খেলছিল মাঠে। বয়স্করা একপাশে গোল করে বসে গল্পে মেতেছেন। হাতে-হাতে ঘুরছে মুখরোচক। টুকটাক মুখও চলছে অনেকের। স্বাস্থ্য সচেতন তরুণ-তরুণীরা অবশ্য চক্কর কেটেই চলেছেন মাঠ জুড়ে। হঠাৎ কাটল তাল। কোথা থেকে যেন উড়ে এসে জুড়ে বসল ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। এ কী! হেলিকপ্টার থেকে লক্ষ-লক্ষ মশা ছাড়ছে কারা?

কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের রোগ ছড়ানোর ষড়যন্ত্র নয় তো? আবার একটা অতিমারী! নাকি সরকারই জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশার মাধ্যমে কোনও ভ্যাকসিন বা ওষুধের গণপরীক্ষা চালাতে চাইছে? আমরা কি গিনিপিগ নাকি— ‘কন্সপিরেসি থিয়োরি’ মুহূর্তে কাবু করে ফেলে প্রায় গোটা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জকে।

অনেকে আবার এ-ও ভেবে বসেন যে— মশার মতো দেখতে এগুলো নির্ঘাত ছোট-ছোট ড্রোন-ক্যামেরা। দেশের সরকারই ছেড়েছে স্রেফ নাগরিকের উপর নজরদারি চালাতে! কিন্তু না। এ সব জল্পনার একটাও ঠিক না। পরীক্ষা একটা চালানো হচ্ছে বটে, কিন্তু সেটা মানুষ বা কোনও প্রাণীর ক্ষতি করতে নয়। তা হলে? ধোঁয়াশা কাটল সরকারের বিজ্ঞপ্তিতেই।

জানিয়ে দেওয়া হলো— বিলুপ্তপ্রায় ‘হানিক্রিপার’ পাখিদের বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবেই হেলিকপ্টার থেকে লাখ-লাখ মশা ছাড়া হচ্ছে।

মানেটা কী? এত দিন তো শোনা যাচ্ছিল উজ্জ্বল রঙ এবং বিচিত্র আকৃতির ঠোঁটের জন্য পরিচিত ‘ভেরি ভেরি হাওয়াই স্পেশাল’ হানিক্রিপার মরছে বেশি ম্যালেরিয়াতেই! প্রকৃতিবিদদের দাবি, ইনফেক্টেড মশার এক কামড়েই মরে যায় এই পাখিরা। উনিশ শতক থেকে চলছে হানিক্রিপারের এই মহামারী!

ম্যালেরিয়ার জেরে ৫০টির মধ্যে ৩৩টি প্রজাতি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হানিক্রিপারের মধ্যে কোনও রকম ইমিউনিটিই তৈরি হয়নি। এ দিকে অ্যানোফিলিসের উৎপাত বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশারা হালে ক্রমে উঁচু জায়গায় উঠতে শুরু করেছে বলে দাবি পরিবেশবিদদের। তাই গাছে বাসা বাঁধা হানিক্রিপারের অবশিষ্ট ১৭টি প্রজাতিও চরম বিপদে! ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে অচিরেই ইতিহাস হয়ে যাবে হানিক্রিপার।

অতএব— ছাড়ো মশা। সপ্তাহে আড়াই লাখের হিসেবে ইতিমধ্যেই এক কোটি মশা ছাড়া হয়ে গিয়েছে গোটা দ্বীপপুঞ্জে। কিন্তু এ তো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা? এবার তো মড়ক লাগবে পাখিদের! একেবারেই না। বরং এটাই রেমেডি। পাখি বাঁচানোর শেষ চেষ্টা— বলছেন বিজ্ঞানীরা। পাখি সংরক্ষণবিদরা অনেক ভেবেচিন্তেই ভরসা রাখছেন মশার উপর। হাতিয়ার — ‘ইনকমপ্যাটিবল ইনসেক্ট টেকনিক’ (IIT)।

হেলিকপ্টার থেকে ছাড়া হচ্ছে শুধু পুরুষ মশা। যাদের মধ্যে থাকছে উলবাকিয়া নামে বিশেষ এক ব্যাক্টিরিয়া। এই ব্যাক্টিরিয়া প্রাকৃতিক জন্ম-নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। মানে, ছক একটাই— মশারা যত ইচ্ছে সঙ্গম করুক, কিন্তু কিছুতেই ওদের আর বংশবৃদ্ধি করতে দেওয়া যাবে না।

এ ছাড়া আর উপায় কী? তাড়ানোর থেকে ঝাড়েবংশে মারা ভালো— এমনই ভাবছেন প্রকৃতিবিদরা। এই টেকনিক অবশ্য নতুন কিছু নয়। মশাকে ধোঁকা দেওয়ার এই কৌশল ব্যাপক সাফল্য দিয়েছে চিন ও মেক্সিকোকে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই প্রোগ্রাম সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয় গ্রীষ্মে। যে হেতু ওটাই মশার বংশবৃদ্ধির সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। ‘Birds, Not Mosquitoes’ — এই ব্যানারে হাওয়াই প্রশাসনের সঙ্গে জোট বেঁধে এই অভিনব টেকনিকে হাত লাগিয়েছে ইউএস ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস, মাউয়ি ফরেস্ট বার্ড রিকভারি প্রজেক্ট-সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ।

কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে তো? ‘সে তো সময়ই বলবে। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থেকে বিরল এই পাখিদের নিশ্চিহ্ন হতে দেখাটা আরও বড় অপরাধ হবে,’ সাফ জবাব হাওয়াই ন্যাশনাল পার্কের ফরেস্ট বার্ড প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, ক্রিস ওয়ারেনের। দ্বীপপুঞ্জের জাতীয় উদ্যান পরিষেবার দেওয়া তথ্য বলছে, ‘আকিকিকি’ নামের হানিক্রিপারের একটি প্রজাতির পাখি ২০১৮-তেও ছিল ৪৫০টি। গত বছর সেটা পাঁচে নেমে এসেছিল। এখন মাত্র একটাই ‘আকিকিকি’ পড়ে রয়েছে জঙ্গলে। একা।

You might also like!