কলকাতা, ৬ মে: সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে বিদ্রুপকে কেন্দ্র করে নেটনাগরিকদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যাঁরা এই সঙ্গীতের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের একজনের প্রকাশ্য দাবি, “ভারতীয় সংগীত বাংলাদেশে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে ভারত”।
সোমবার ‘হয়নি আলাপ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ভিডিও পরিবেশিত হয়। তাতে দেখা যায়, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশনার সময় কয়েকটি কুকুরজাতীয় চতুষ্পদ লাইনে অনিচ্ছুক এবং অলসভাবে দাঁড়িয়ে। কেউ ঘুমোচ্ছে, কোনওটা পড়ে যাচ্ছে। শিরোনামায় লেখা, “স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময়”। গানের মাঝেই অত্যন্ত শ্রুতিকটূভাবে যুক্ত করা হয়েছে কুকুরের যন্ত্রনার স্বর।
প্রসঙ্গত, বঙ্গমাতা সম্পর্কে গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে লেখেন। বাউল গায়ক গগন হরকরার গান "আমি কোথায় পাব তারে" থেকে এই গানের সুর ও সঙ্গীত উদ্ভূত।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে এই পোস্ট সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার মধ্যে ১৬ লক্ষ নেটনাগরিক দেখেছেন। মন্তব্য করেছেন ৪ হাজার ২০০ জন, শেয়ার হয়েছে ৮ হাজার ৩০০।
মাজহারুল হাসান লিখেছেন, “জাতীয় সংগীত কে এভাবে প্রদর্শন করা খুবই অপমান জনক, একে আইনের আওতায় আনা উচিত।” এফ এ ফারুক লিখেছেন, “এই পোস্টকারীকে আইনের আওতায় এনে সরকারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।” মহসিন আলি লিখেছেন, “পোস্টকারী জাতীয় সংগীতের অপমান না করেছেন।”
মহম্মদ আসাদুজ্জামান লিখেছেন, “কোন মৌসুমে আর কাদের প্রজননে এইসব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্ম হয়? নিজের বাপ মাকে ব্যবহার করে ভিডিও বানাইছে।” মহম্মদ সাকিল চৌধুরী লিখেছেন, “রাজাকারের বাচ্ছাদের কাছে এটা কোন ব্যাপার না।” আব্দুর রসিম লিখেছেন, “সে যেই হোক দেশদ্রোহী।”
মহম্মদ রাজীব মতবর লিখেছেন, “এই দেশে এবং এই দেশের ভাষার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়ে, সেই ভাষার অপমান। একে আইনের আওতায় আনা হোক।” মহম্মদ ইয়াসিন হামিদ লিখেছেন, “জাতীয় সংগীতকে অপমান করা উচিত হয়নি। আমরা চাই আপনি গ্রেফতার হন। ইনশাল্লাহ অতি দ্রুত হবে।”
মনিরুল ইসলাম লিখেছেন, “একে আইনের আওতায় আনা হক”। ৬২ জন এই মন্তব্যকে লাইক দিয়েছেন। আরিয়ান রিফাৎ মনিরুলকে লিখেছেন, “দেশে আইন থাকলে তো আইনের আওতায় আনবে। আইনই যদি না থাকে তাহলে”। আবার জারিন হিমু মনিরুলকে লিখেছেন, “মূর্খ আপনি!”
অন্যদিকে, ফারহান খান লিখেছেন, “ভারতীয় সংগীত বাংলাদেশের জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে ভারত। তাছাড়া এই গান বিরোধিতা করে লেখা হয়েছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের না।” কিবরিয়া ওমি তাঁকে সমর্থন করে লিখেছেন, “ঠিক বলছেন”। ফারহান খান অপর মন্তব্যে লিখেছেন, “এটা ভারতীয় সংগীত।”
মহম্মদ লিও হক লিখেছেন, “এই ভিডিওটা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়েছে।” তাঁর বিরোধিতা করে ফাহিন আহমেদ লিখেছেন, “তার মানে হুদাই কোনো কাজ নাই, কাম নাই। তীব্র রোদে বাচ্চাদের রোদের দাঁড় করিয়ে সঙ্গীত গাইতে হবে - এইটা তোমার দেশ মাতা কখনো বলেছিলো?” আবার ফাহিম আহমেদ লিখেছেন, “আমার দেশ তো আমায় এটা বলেনি! স্যার ম্যাডামরা ছায়ায় দাড়িয়ে বাচ্চাদের কড়া রোদে দাড় করিয়ে বিনা কারণে অসুস্থ করে তোলা! এটা কোন ধরনের সভ্যতা!
দেশ কি তার জনগনের শান্তি সুবিধার চেয়েও উত্তম?”
শামিম মিয়া লিখেছেন, “বিষাক্ত মানুষ যারা বলচে এটা এমন করা মানে জাতীয় সংগীত কে অসম্মান করা তাহলে আমি বলবো এটা গাওয়া মানে ইসলামকে অসম্মান করা, আল্লাহকে অসম্মান করা।”
মন্তব্য করেছেন অনেক হিন্দুও। রিম্পা নাথ লিখেছেন, “আপনারা বাংলাদেশীরা তো এতো নিজের দেশ নিয়ে বড়াই করেন তা আপনারা যদি নিজের দেশকেই, নিজের দেশের জাতীয় সংগীতকেই যদি এভাবে অবমাননা করেন তাহলে আপনাদের কি মনে হয় না যে নিজেরা নিজেদের ছোট করছেনই, সাথে অন্য দেশের জনগণকেও আপনাদের জাতীয় সংগীত, আপনাদের দেশকে ছোট করতে অপমান করতে উস্কে দিচ্ছেন! আর যা কিছুই হোক, অন্তত নিজের দেশকে এবং নিজের দেশের জাতীয় সংগীতকে সশ্রদ্ধ সম্মান জানাতে শিখুন। আমি ভারতীয় কিন্তু এই পোস্টটা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগলো। আফটার অল গানটা রবীন্দ্রসঙ্গীতও। তাছাড়া আমরা ভারতীয়রা কিন্তু এই রকম কখনই করিনা, আমারা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই আগে আমাদের দেশকে ভালবাসি।” এটিতে লাইক দিয়েছেন ৩০৬ জন। এঁদের মধ্যে আছেন ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশেরই মানুষ।
টিএস সাহা লিখেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথের লেখা না হয়ে যদি অন্য কোনো মুস্লিম লেখকের লেখা হতো তবে বোধহয় এইরকম অপমানজনক পোস্ট দেখতে হোতো না।”
বাংলাদেশ সরকার এই পোস্টের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? সোমবার সন্ধ্যা সওয়া ছ’টায় কলকাতাস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াসকে এই প্রতিবেদক লেখেন, “খবর করছি এটা নিয়ে। এটি আপনাদের নজরে এসেছে? আপনাদের কোনও মতামত পেলে খবরের সঙ্গে যুক্ত করব। না পেলেও, সেটার উল্লেখ করব।”