ঢাকা, ১৬ জুলাই : কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্বাধীনতা-বিরোধী অপশক্তি কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ভুলপথে পরিচালিত করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার পাশাপাশি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, এ ধরনের ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)।
গণমাধ্যমে পাঠানো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-র মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এসএম মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদ, ২ লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন বলেই আজ স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করছি। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। সাম্প্রতিককালে দেশের স্বাধীনতা-বিরোধী কুচক্রী মহল কর্তৃক কোটা ব্যবস্থা নিয়ে অপপ্রচার রটিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার পাশাপাশি জনগণের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টার বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-এর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ঘটনায় দেশের প্রাচীনতম ও প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা-র বিষয়টি দেশের উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন কোনও বিষয়ে আন্দোলন করা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের শামিল। স্বাধীনতার মহান আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে উন্নত জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলিষ্ঠ ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে, দেশবাসী এটাই প্রত্যাশা করে। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মুখ থেকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী কুৎসিত স্লোগান উচ্চারিত হওয়ার বিষয়টি কোনওভাবেই কাম্য নয়। লাখো শহিদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকারের কোনও স্থান নেই। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রেক্ষাপটে ‘রাজাকার’ শব্দটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য বিধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের মুখে 'আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার' স্লোগান শুনে আশংকা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতা-বিরোধী বিভিন্ন অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে দেশবিরোধী অপচক্র দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী বিভিন্ন ধরনের কুৎসিত স্লোগান দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করছে। একই সাথে তারা দেশব্যাপী সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধা প্রদানের মাধ্যমে দেশের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এই ঘটনা সারা দেশের প্রকৌশলীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
আইইবি-র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এসএম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশ-বিরোধী স্লোগান দিয়ে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও দেশের জনগণের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে দেশের প্রকৌশলীরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করতে বদ্ধ পরিকর। একই সাথে আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ না বাড়িয়ে শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আইইবি আশা করে, অচিরেই উদ্ভুত পরিস্থিতির অবসান ঘটবে।