West Bengal

7 months ago

Uttarpara News: গৃহকর্তার মৃত্যুতে ঘরবন্দি হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা স্ত্রী ছেলেমেয়ের! চাঞ্চল্য উত্তরপাড়া পুরসভার এলাকায়

Uttarpara News
Uttarpara News

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ পরিবারের সদস্যদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল গৃহকর্তার মৃত্যুতে। আর্থিক অনটনের ঘেরাটোপে লড়তে থাকা বৃদ্ধের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা খেতে না-পেয়ে মৃত্যুর জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন গত ২২ দিন ধরে। এই কথা ছড়িয়ে পড়তেই আলোড়ন ছড়াল উত্তরপাড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে। ঘটনার খবর পেয়ে উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব স্থানীয় কাউন্সিলার উৎপলাদিত্য চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সেখানে হাজির হন। পুলিশের সহযোগিতায় বন্ধ ঘরের দরজার তালা ভেঙে তিন জনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁরা।
পরিবারের কর্তা গগনবরণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় চলতি মাসের গোড়ায়। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী গগনবরণ স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের দোতলা বাড়িতে সপরিবারে ছিল তাঁর বাস।  গত ৪ ফেব্রুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী শ্যামলী অবিবাহিত ছেলে সৌরভ ও মেয়ে চুমকিকে নিয়ে কি করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। 
পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ছেলে ও মেয়ে উচ্চশিক্ষিত হলেও তেমন কোনও কাজ করতেন না। চুমকি কিছুদিন গৃহশিক্ষকতা করলেও অনেক দিন ধরেই সব কাজকর্ম বন্ধ করে দেন। পাড়ায় থাকলেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না মুখোপাধ্যায় পরিবারের কেউই। গগনবরণের মৃত্যুর পর পাড়া পড়শিদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ক্ষীণ হয়।
এ দিন ঘরের দরজা ভাঙার পর দেখা যায় নীচের ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন সৌরভ ও চুমকি। শীর্ণ হয়ে পড়া শরীরে চলার শক্তিও ছিল না ভাই-বোনের। সেই তুলনায় খানিক ভালো অবস্থায় ছিলেন শ্যামলী। লোকজন দেখে হাতে ভর দিয়ে ছেলেমেয়ের সামনে দাঁড়ান বৃদ্ধা। স্বাস্থ্যকর্মীরা তিনজনকেই উদ্ধার করে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান।
একটা সময় অবস্থাপন্ন, সম্ভ্রান্ত পরিবারটির এমন দৈন্যদশায় বিস্মিত গোটা মহল্লা। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন বাড়ির কর্তা মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েক কয়েকদিন দেখা যায় বাড়ির বাইরে। তার পর শ্যামলী ও তাঁর ছেলেমেয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে ঘরেই থাকতেন। এ দিন এক আত্মীয়া খোঁজ নিতেই পরিবারের ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা জানতে পেরে পুরপ্রধান দিলীপ যাদবকে খবর দেন।
দিলীপ যাদব বলেন, 'গগনবরণবাবুর মৃত্যু হয়েছে এই মাসের গোড়ায়। তার পর থেকেই ওঁর স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা স্বেছায় ঘরবন্দি ছিলেন। ওদের এক আত্মীয়া এ দিন আমার মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোন করেন। খবর পেয়েই স্থানীয় কাউন্সিলারকে নিয়ে ছুটে যাই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গোটা পরিবার কয়েকদিন ধরে অভুক্ত থাকায় দুর্বল হয়ে পড়েছেন।'
দিলীপ জানান, বাড়ি ঘর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মনে হচ্ছে বৃদ্ধের পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত। তিনি আশ্বাস দেন, 'আমি হাসপাতালে গিয়ে পরিবারের খাওয়া ও সুস্থতার যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গীকার করেছি। কেউ খেতে না পেয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করবে, এটা মানুষ হয়ে মানতে পারব না।' 

You might also like!