দুর্গাপুর : 'রোহিঙ্গাদের ভালো লাগে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যের সিএএ লাগুতে আপত্তি। বাংলাদেশে পাকিস্তানি পুলিশ যেভাবে অত্যাচার করে সনাতনীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। ঠিক সেভাবেই সন্দেশখালিতে পাকিস্তানি পুলিশের মতই রাজ্য পুলিশ আচরন করছে।' দামোদর নদী তীরবর্তী বড়জোড়া মানাচরে এক জনসভা থেকে রাজ্য পুলিশ ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে আক্রমন করলেন বিজেপি সাংসদ তথা বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। একই সঙ্গে দামোদরে অবৈধ বালি পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন তিনি।
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষন ঘোষনা হয়ে গেছে। কয়েকদিন পরই ভোট। ইতিমধ্যে সব রাজনৈতিকদলগুলির প্রচার পর্ব চলছে জোরকদমে। বিষ্ণুপুর লোকসভার বড়জোড়া মানাচরে বিজেপির পথসভা ছিল। ওই পথসভায় প্রধান বক্তা ছিল সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। এদিন বক্তব্যের আগাগোড়া ছিল রাজ্য পুলিশ ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কড়া আক্রমন। এদিন তিনি সভার আশপাশে কর্তব্যরত পুলিশ দেখে ধন্যবাদ জানান। আবার একইসঙ্গে আক্রমন করে বলেন," পুলিশ বিজেপির মিটিংয়ে থাকে না। পুলিশ তো তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে থাকে। আর বিজেপি কর্মীদের ধরার জন্য থাকে। পুলিশ তো বালির টাকা তোলার জন্য চিন্তাভাবনা করে।"
উল্লেখ্য, দামেদর নদের উত্তর প্রান্তে পানাগড়- দুর্গাপুর সংলগ্ন মানাচর। ভৌগলিক মানচিত্রে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও সোনামুখী ব্লকের অন্তর্গত। বড়জোড়া ব্লকের ঘুটগড়িয়া পঞ্চায়েতের সিতারামপুর, বড়জোড়া পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপল্লী, বরিশাল পাড়া, পল্লীশ্রী কলোনী, পখন্না পঞ্চায়েতের বড় মানা, পশ্চিম পাড়া, ঢাকা পাড়া, ভৈরবপুর, ভৈরবপুর মানা, সোনামুখী ব্লকের রাঙামাটি পঞ্চায়েতের ডিহিপাড়া উত্তর মানাচর, লালবাবা মানাচর। সব মিলিয়ে ১১ টি গ্রাম সাংসদ রয়েছে। প্রায় ১২ হাজার ভোটার সংখ্যা। সবই পুর্ব বঙ্গ থেকে আগত বাসিন্দা। প্রায় ৫০- ৬০ বছর ধরে নদীর বুকে বসবাস করছে। নদী তিরবর্তী গ্রামবাসীদের কৃষির ওপর নির্ভরশীল জীবিকা। নদীর চরকে উর্বর করে চাষাবাদ করে তুলেছে
গত কয়েকমাস ধরে বড়জোড়ার পল্লীশ্রী, চকবাজার, বরিশাল মানাচরে বালিবোঝাই লরি ডাম্পার যাতায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে এলাকাবাসী। অভিযোগ, দামোদর থেকে ওভারলোডিং বালি বোঝাই ১৬ চাকার লরি ডাম্পার যাতায়াতে রাস্তা ভেঙে পড়ছে। অবৈধ উপায়ে মেশিন দিয়ে বালি তোলার জেরে নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে নদীর পাড়। ফলে বর্ষায় নদীতে জল ছাড়লেই প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা গোটা এলাকা। ইতিমধ্যে আন্দোলনও শুরু করেছে গ্রামবাসীরা। এদিন পথসভা থেকে সৌমিত্র খাঁ বড়জোড়া থানার আইসিকে নিশানা করে বলেন," বালির টাকা তোলার জন্য বড়জোড়া থানার আইসি ২ কোটি টাকার রফা করেছে। তারজন্য গ্রামবাসীদের হুমকি দেয়, রাস্তা খারাপ হলে হতে পারে। মানাচরের বাসিন্দাদের চাকর মনে করেন তিনি। পুলিশের মদতে গ্রামের রাস্তায় ৪৭-৫০ টন বালি বোঝাই লরি যাতায়াত করছে। পঞ্চায়েত ভোটেও কারচুপি করেছেন তিনি।" এদিন তিনি সন্দেশখালির ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,"রোহিঙ্গাদের ভালো লাগে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যের সিএএ লাগুতে আপত্তি। বাংলাদেশে পাকিস্তানি পুলিশ যেভাবে অত্যাচার করে সনাতনীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। ঠিক সেভাবেই সন্দেশখালিতে পাকিস্তানি পুলিশের মতই রাজ্য পুলিশ আচরন করছে।"
এদিন তার কাজের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন," গত ৫ বছর ১৩ টা প্রকল্প করা হয়েছে। বাঁকুড়া মশাগ্রাম রেলপথ। দামোদরের পাড় বাঁধানো। পলাশডাঙায় ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে স্টেডিয়াম করা হয়েছে। বিষ্ণুপুরের প্রাচীন শিব মন্দিরের সংস্কার সহ প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন," বড়জোড়া বাজারের সড়কে নিত্য যানজট। আমি উড়ালপুল তৈরীর উদ্যোগী হয়েছি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই উড়ালপুল তৈরীতে সহমত নন। কারন তাতে বিজেপির সুনাম হবে।" তিনি আরও বলেন," আগামী দিনে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে খড়গপুর- মোরগ্রাম হাইওয়ে হবে। আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে এনএইচ-৬০ ফোর লেন সম্প্রসারন হবে। দুর্গাপুর ব্যারেজে যানজট ঠেকাতে আরও একটি সেতু করা হবে। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে আরও বলেন," বেলিয়াতোড় - দুর্গাপুর রেললাইন করা হবে।" মানাচরে আলাদা পঞ্চায়েত গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"
মানচরবাসীকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পঞ্চায়েতে আসতে হয়। বড়জোড়া, সোনামুখীতে ব্লকে কাজ করতে আসতে হয়। তাই মানচরে নতুন পঞ্চায়েত করা হোক। আলাদা পঞ্চায়েত করা হলে এলাকার মানুষদের হয়রানি কমবে। আগামী ২০২৬ ভোগলিক রুটম্যাপের জন বিন্যাস হবে। তখন আলাদা পঞ্চায়েতের জন্য দাবী জানানো হবে।"