দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ দ্রুত এগোচ্ছে ভোটের দিন। তার সঙ্গেই যেন পাল্লা দিয়ে চড়ছে পারদ। বিশেষত দক্ষিণবঙ্গে যে গতিতে তাপমাত্রা চড়ছে, তাতে আশঙ্কা বাড়ছে ভোটদাতা থেকে প্রার্থী হয়ে ভোটকর্মী — প্রায় সকলেরই। উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা অবশ্য দক্ষিণের তুলনায় এখনও অনেকটা মৃদু। নিয়মিত বৃষ্টিও হচ্ছে। কিন্তু তার লেশমাত্রও দক্ষিণে নেই। বাঁচোয়া একটাই, পরশু, শুক্রবার যে তিন কেন্দ্রে ভোট, তার সবগুলিই উত্তরবঙ্গে।
তবে ভয়াবহ গরম থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের মতো করে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে ফেলেছেন লোকসভা ভোটের ক্যান্ডিডেটরা। আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার কোনও আশা নেই। কী করেই বা থাকবে! ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে আগামী পাঁচদিন দ্বিতীয় দফায় তাপপ্রবাহ চলতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের।
এক বছর আগে এই এপ্রিলেই কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘর পেরিয়েছিল পাঁচ দিন। সে দিক থেকে অন্যতম ‘ক্রুয়েলেস্ট মান্থ’ তাকে বলাই যায়। সে বার মুর্শিদাবাদ পৌঁছে গিয়েছিল ৪৪.৩-এ। দক্ষিণবঙ্গে ভোটের পালা শুরুর সময়ে যদি গত বছরের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়? তাই ‘সাবধানে বাঁচে লোকে, এই লেখে আইনে’ আপ্তবাক্যে দুপুরে প্রচার বন্ধ রাখছেন প্রায় সব প্রার্থীই।
বৈশাখ শুরু হতেই বাংলার আবহাওয়ায় নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। আবহবিদরা মনে করছেন, এটা নিছক ট্রেলার। ১৯ এপ্রিল উত্তরবঙ্গ যখন প্রথম দফার ভোট দেবে, তখন দক্ষিণের ১১টি জেলায় তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিচ্ছেন আবহবিদরা। গত দু’দিনে দুর্বার গতিতে দক্ষিণবঙ্গের দখল নিয়েছে ভয়াবহ গরম। রবিবার রাজ্যের চার এবং সোমবার সাত জায়গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছুঁয়েছিল। মঙ্গলবার সেই সংখ্যা পৌঁছয় ১৪-তে। এ দিন কলকাতা (৩৯.৪) ৪০ ডিগ্রির দরজায় থামলেও সংলগ্ন দমদম, সল্টলেক এবং ব্যারাকপুর ৪০ ডিগ্রি পেরিয়ে গিয়েছে।
রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলির পরিস্থিতি তুলনায় আরও বেশি ভয়াবহ। মঙ্গলবার পানাগড় (৪২.৮) পৌঁছে গিয়েছে ৪৩ ডিগ্রির দরজায়। রাজ্যের যে ১৪টি জায়গার এ দিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার করেছে, তার মধ্যে ন’টিই রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে।
প্রবল গরমে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম বর্ধমানে বেলা বাড়লেই পথঘাট জনশূন্য হতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ শরীর ঠান্ডা রাখতে শরণ নিয়েছেন পান্তা ভাত, টকের ডাল এবং যতটা সম্ভব কম মশলাদার খাবারের। আর ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তাঁদেরই দুয়ারে ঘুরতে থাকা রাজনীতিবিদদের মেনু এবং জীবনযাত্রাও সেই ধাঁচে বদলেছে। সকাল সকাল শুরু হওয়া প্রচারে ছেদ পড়ছে বেলা বাড়তেই। তারপর আবার প্রচার শুরু হচ্ছে রোদ পড়ার পর।
এ প্রসঙ্গে মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল বা পুরুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর কথা উল্লেখ করা যায়। অগ্নিমিত্রা বলছেন, ‘দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য প্রচার বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’ শান্তিরাম জানান, প্রচারে বেরিয়ে দলীয় কর্মীরা খুবই সমস্যায় পড়ছেন বলে সকাল ও সন্ধেয় ক্যাম্পেনিংয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে রোদ লেগে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়।
শুধু যে প্রচারের সময় পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা নয়। প্রার্থীদের অনেকে ডায়েটেও বদল এনেছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ শুধু নিজের জন্য নয়, তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের বাসিন্দাদেরও গরমে ভালো থাকতে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, ‘রঙিন পানীয় নয়, বেশি করে জল খান। প্লেন ডাল-ভাত, তরকারি খান।’ শুধু প্রচার নয়, চড়া রোদ থেকে নিজেকে বাঁচানোর ব্যাপারটাও ভোলেননি কোনও কোনও প্রার্থী। এঁদের মধ্যে অন্যতম হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সারা জীবন মেক-আপ করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম, রাজনীতিতে এসে আর তার দরকার হবে না। কিন্তু যা সাংঘাতিক রোদ, তাতে মেক-আপ না করলে চামড়া পুড়ে যাবে। তাই সেটা করতেই হচ্ছে।’