ক্যানিং : রাজ্য জুড়ে নতুন বছরের প্রথম স্কুলের দিনে স্পেশাল মেনুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে। সমস্ত স্কুল, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র সর্বত্রই স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য সোমবার দুপুরের খাবারে বাড়তি সংযোজন করতে বলা হয়েছে স্পেশাল মেনুর। তবে এর জন্য কোন বাড়তি অর্থ বরাদ্দ স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে করা হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই নির্দেশিকায়। এতেই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের মধ্যে।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সকল বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মিড-ডে মিলের বিশেষ মেনু পরিবেশন করতে হবে, স্পেশাল মেনু বলতে প্রতি দিনের রুটিন মেনু ব্যতীত কিছু করতে হবে যেমন মাংস, ফল ও মিষ্টি, পায়েস ইত্যাদি। নিজেদের সুবিধা মত করে এই মেনু করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রান্না ও বাচ্চাদের খাওয়ার ছবি তুলে পাঠাতে হবে দুপুর তিনটের মধ্যে।
এই নির্দেশিকা পেয়ে বহু স্কুল নিজেদের সাধ্যমত এদিন স্পেশাল মেনু করার চেষ্টা করছে, আবার অনেক স্কুলই বাড়তি কিছুই করতে পারেনি। ক্যানিং কুমারশা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এদিন পড়ুয়াদের জন্য ডিম ভাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের জন্য পায়েস রান্না করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার মন্ডল বলেন, “ আজ সকালেই মোবাইলে এই সার্কুলার পাই। এরপর স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের ফোন করে বিষয়টা জানাই। এদিন ডিমভাতের পাশাপাশি পড়ুয়াদের জন্য পায়েস রান্নার ব্যবস্থা করা হয়।” ক্যানিং রায়বাঘিনী অবৈতনিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন মণ্ডল বলেন, “ আমরা আজ শুধু ডিম ভাতই খাওয়াতে পেরেছি। ১৭৭ জন পড়ুয়া আমাদের হটাৎ করে এই নির্দেশিকা এসেছে, বাড়তি কোন খরচও মিলবে না। তাই অন্য কোন স্পেশাল মেনু করতে পারিনি।” চুনাখালি হাটখোলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিমাই মালি বলেন, “ এদিন বাচ্চাদের জন্য ডিম ভাতের পাশাপাশি এঁচোর চিংড়ি, ফল, দই, মিষ্টির ব্যবস্থা করেছিলাম।”
সূত্রের খবর, স্পেশাল মেনুর নির্দেশিকা জারি হলেও এরজন্য কোন বাড়তি অর্থ স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে বরাদ্দ করা হয়নি। ফলে বেশিরভাগ স্কুলেই শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের ট্যাঁকের কড়ি খরচ করেই সেই ব্যবস্থা করেছেন। বারুইপুর সীতাকুন্ডু প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষ বলেন, “ সরকার টাকা যখন দেবে না তখন অর্ডার কিভাবে করে? স্কুলের পড়ুয়ারা আমাদের সন্তানের মত। তাদেরকে একদিন আমারা ভালমন্দ খাওয়াতেই পারি। কিন্তু সেই ছবি তুলে আবার পাঠাতে কেন হবে?” এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অজিত কুমার নায়েকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। উনি ফোন ধরেন নি। এসএমএসের উত্তরও দেন নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ব্লকগুলিতে কম বেশি প্রায় সব স্কুলেই মিড-ডে মিলে এদিন স্পেশাল মেনু ছিল বলে জানা গিয়েছে। ক্যানিং ১ ব্লকের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, “আমাদের ব্লকের স্কুলগুলিতে কোথাও পনির, কোথাও বা দই, মিষ্টি, পায়েস হয়েছে পড়ুয়াদের জন্য।” বাসন্তীর বিডিও সঞ্জীব সরকার বলেন, “ সরকারি নির্দেশ মেনেই ব্লকের প্রায় সমস্ত স্কুলেই স্পেশাল মেনু হিসেবে কিছু না কিছু হয়েছে পড়ুয়াদের জন্য।”