দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ সন্দেশখালির জেলিয়াখালির আদিবাসী মহিলারা দেখিয়েছিলেন রাস্তা। পথে নেমেছিলেন ঝাঁটা, লাঠি ও বাঁশ হাতে হাজার সংখ্যক মহিলারা। থানা ঘেরাও করে জন সমক্ষেই আঙুল তুলেছিলেন শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে। সন্দেশখালির একাধিক প্রত্যন্ত এলাকায় জ্বলছিল রোষের আগুন। এর মধ্যেই একটি এলাকা হল বেড়মজুর। এতদিন চুপ ছিল এই এলাকা তবে এবার রোষের আগুনে সেই অঞ্চলও ফুঁসতে শুরু করেছে। এতদিন ধরে অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, যাঁরা অত্যাচারিত হয়েছিলেন, সেই গ্রামবাসীরা এবার আগুন ধরাচ্ছেন শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের দখল করা মাছের ভেড়ি. জমিতে। ঝাঁপ, লাঠি হাতে শয়ে শয়ে গ্রামের মহিলা রাস্তায় নেমেছেন। নজিরবিহীন দৃশ্য দেখা গেল বেড়মজুর এলাকায়।
এই বেড়মজুরের তেভাগাই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণক্ষরে লেখা। কিন্তু তেভাগা আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের পরিবারের সদস্যদেরও জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিবু-উত্তম-শাহজাহানদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে বেড়মজুরের কাছাড়িবাড়িতে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ অজিত মাইতি, তোয়েব মোল্লার মাছের ভেড়ির আলাঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। হাতে একটা বেড়া লাঠি, গাছের ডাল নিয়েও মহিলারা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এমনকি আবাস নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারী এক মহিলা বলেছেন, “ঘর দেয়নি ওরা। শুধু ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছে। ওই ডাক্তার সিরাজউদ্দিন, অজিত মাইতি, তোয়েব মোল্লারা।” কোলে বাচ্চা নিয়েই আরেক মহিলা বললেন, “ভোট দিতে গেলে, আমাদের হাত থেকে স্লিপ কেড়ে নেয় ওরা। কেন বলুন তো, আমাদের কি ভোট দেওয়ারও অধিকার নেই।” আরেক মহিলা বলেন, “স্বপন বাড়ুই, নান্টু বড়াই জব কার্ডের টাকা মেরে দিয়েছে। মেয়েদের টাকা মেরে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে প্রকাশ্যে আমাদেরকে গাছে বাঁধছে।”
গ্রামের আরেকজন মহিলার অভিযোগ, “আয়লার সময়ে বাঁধ দেওয়ার জন্য জমি নিয়েছিল। সরকার বলে দিয়েছিল যাদের তারা ফেরত পাবে। কিন্তু সিরাজ ডাক্তার সেই জমিও দখল করে নেয়।” ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা। বেড়মজুরে দক্ষিণ এডিজি। জেলাশাসকের সঙ্গে ফোনে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীদের কথা বলিয়ে দেন ADG দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার। গ্রামবাসীদের তিনি আশ্বস্ত করেন, “আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলাম। সবাই সবার জমি ফেরত পাবেন। এখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সবাই ঘরে যান। প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখুন। বিচার পাবেন।” এখন জমি আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে। শিবু-উত্তম এখন গারদের পিছনে, শেখ শাহজাহান এখনও ধরা পড়েনি। এখন সেই ‘বাঘের’ জালে পড়ার আশায় গ্রামবাসীরা।