International

3 months ago

Bangladesh:জল আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি বাংলাদেশের বিশিষ্টজনের

Prominent Bangladeshi demand India's trial in international court for water invasion
Prominent Bangladeshi demand India's trial in international court for water invasion

 

ফেনী (বাংলাদেশ), ৭ সেপ্টেম্বর  : নদীর বাঁধ কেটে ফেণি সহ দেশের ১১টি জেলাকে বন্যায় ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জল আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা।

 ফেণিতে ‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশগ্ৰহণ করা তাঁরা এ দাবি জানান। ফেণির শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে ফেণির নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসী’। দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র-জনতা সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছেন।

কর্মসূচিতে পৌরোহিত্য করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। কর্মসূচি থেকে ‘১১ দফা ফেনী ঘোষণা’ তুলে ধরেন দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শাহাদাত হোসাইন।

আয়োজক ‘আমরা ফেনীবাসী’র অন্যতম উদ্যোক্তা বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় স্ট্রাইক কর্মসূচিতে বক্তব্য পেশ করেন নদী ও জল বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ এজাজ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাপা-র যুগ্ম-সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) প্রাক্তন সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, নারী নেত্রী নুর তানজিলা রহমান, ফেনী প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি আব্দুর রহিম, দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফ রিজভি, ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক এমদাদ হোসাইন, কবি ও সমাজকর্মী ফজলুল হক, সমাজকর্মী আমের মক্কি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এর ফেনী জেলার সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ইমাম হোসেন, কবি ও সমাজকর্মী আলাউদ্দিন আদর।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক লিয়াকত আলি ভুইয়াঁ। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা ফেনীবাসী প্লাটফর্মের অন্যতম উদ্যোক্তা কেফায়েত শাকিল। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আরেক উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ হাসান।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এই বন্যা শুধুই প্রাকৃতিক নয়, ভারত কোনওভাবে এর দায় এড়াতে পারে না। এই বন্যায় ফেনী সহ ১১টি জেলার মানুষ মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে সকল অভিন্ন নদীতে ড্যাম বা বাঁধ অপসারণের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ।

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ভারত চাইলেই যে এক দিনে বাঁধ কেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলে দিতে পারে, এবারের বন্যা তার উদাহরণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ৬৮টি বাঁধ দিয়েছে ভারত। প্রতিটির হিসাব ভারতকে দিতে হবে।

জল বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারত দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফাঁরাক্কায় বাঁধ দিতে পারেনি। শেখ মুজিবের শাসনামলে ভারত এই বাঁধ দিতে সক্ষম হয়। ফেনী নদীর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। এ দেশে দিল্লির আধিপত্যবাদের প্রোডাক্ট ছিলেন শেখ হাসিনা (বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী)। দেশে উন্নয়নের বয়ান হাসিনার ছিল না, এটি ছিল মোদীর (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) শেখানো বুলি। উন্নয়নের নামে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা।

মিহির বিশ্বাস বলেন, ফেনীর মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে জানে। ভারতীয় জল আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও ফেনীবাসী হারবে না। ভারতকে জল নিয়ে বৈষম্যহীন আচরণের আহ্বান জানান তিনি।

হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, দেশের এবারের বন্যা যতটা না-প্রাকৃতিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। জল আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি করেন তিনি।

সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ বলেন, ভারত শুধু জলসন্ত্রাস নয়, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা, এ দেশের ভোটাধিকার হরণ ও বাণিজ্য আগ্রাসন চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আচরণ না পাল্টালে ভারতকে এর মূল্য দিতে হবে।

‘১১ দফা ফেনী ঘোষণা’ গুলি যথাক্রমে (১) আন্তঃসীমান্তীয় সব নদী থেকে ড্যাম/ব্যারেজ বা যে নামেই ডাকা হোক না-কেন, (২) তা অপসারণ করতে হবে, এবারের বন্যার জন্য ফেনীর পরশুরামে ভারতের ইচ্ছাকৃত বাঁধ কেটে দেওয়া বহুলাংশে দায়ী। এজন্য জাতিসংঘের সহায়তায় ভারতকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে, (৩) মুহুরির চরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের কেটে দেওয়া সুরক্ষা বাঁধটি অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ করতে হবে, (৪) বাংলাদেশের জলের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে জল উত্তোলন চলবে না, (৫) বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি নাগরিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, (৬) কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে, (৭) শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে অতি দ্রুত তা মেরামত করতে হবে, (৮) নদীভাঙন রোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা চাই। মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপ নিতে হবে, (৯) বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনেরও দায় আছে, এজন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, (১০) উন্নয়নের নামে জলাধারে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। ভরাট করা খাল ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, (১১) নদী ও পরিবেশ দূষণ রোধ এবং বনভূমি উজাড় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চাই।

স্থানীয় কয়কেটি যুব সংগঠনও এতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার, ইয়ুথ নেট গ্লোবাল ফেনী শাখা, ইকো রেভ্যুলেশন, ফেনী ছাত্র ও যুব সমিতি, লস্কর হাট ব্লাড ডোনেট অ্যাসোসিয়েশন, মির্জা ফাউন্ডেশন, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ), প্রয়াস, আমরাই আগামী ও ফেনী ফ্লাড রেসপন্স টিম।

You might also like!