দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ এ কোন সায়েন্স ফিকশনের এলিয়েনের কাণ্ড নয়, এখন সত্যিই কলকাতাতেই এসে গেছে রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে হাঁটুর সার্জারি। শহরে এসে গেছে কিউডিস অ্যাক্টিভ রোবোটিক সিস্টেম। পারদর্শী চিকিৎসক ও রোবোট অ্যাসিস্ট্যান্টের যুগলবন্দিতে হাঁটুর প্রতিস্থাপন এখন আরো বেশি সহজ সরল ও নিরাপদ। জানালেন বেলভিউ ক্লিনিকের রিপ্লেসমেন্ট বিভাগের ডাইরেক্টর অর্থোপেডিক ও রিপ্লেসমেন্ট সার্জন ডাঃ সন্তোষ কুমার।
ডাঃ কুমার : বিষয়টা একেবারেই সেইরকম নয়। প্লেনে যেমন অটোপাইলট
থাকলেও পাইলটকেই সতর্ক থাকতে হয়। একইরকম ব্যবস্থা এখানেও। রোবট শুধুমাত্র এক বিশেষ
ধরণের যন্ত্র। এই যন্ত্রের পিছনে যে রিপ্লেসমেন্ট সার্জন বসে থাকেন তিনিই মুখ্য ভূমিকা
পালন করেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে গত এগারো বছরে দশ হাজারেরও বেশি রিপ্লেসমেন্ট
সার্জারি করে বোঝা গেছে রোবটের যান্ত্রিক দায়িত্ববোধ ও অতিমানবীয় ক্ষমতার যুগ্ম মিলনে
রোবোটিক নি-জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট কিন্তু সাধারণ সার্জারি থেকে বহুগুণে সহজ, সফল ও নিরাপদ।
অবশ্য এটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাতে বলতে পারি।
ডাঃ কুমার : নিশ্চয়ই। সাধারণ সার্জারি থেকে রোবোটিক সার্জারির বহু গুণ সুবিধা পাওয়া যায়, কারণ রোবটের যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স চালিত যান্ত্রিক মস্তিষ্ক আছে সেটা মুহূর্তের মধ্যেই মিলিমিটারের কয়েক সহস্রাংশ পর্যন্ত হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর ফলে হাড়ের সাথে প্রস্থেসিসের ফিটিংস সাধারণ কম্পিউটারাইজড সার্জারির থেকে অনেক গুণ নিখুঁত ও সূক্ষ। আবার একই কারণে হাড় ও সফট টিস্যু অল্প পরিমাণে কাটা হয়। ফলে রক্তপাত প্রায় হয় না বললেই চলে, তাছাড়া পোস্ট অপারেটিভ পেনও কম হয়। এরফলে, রোগীও দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। পর্যবেক্ষণ শক্তি খুব তীক্ষ্ণ বলে, সাধারণ সার্জারি থেকে রোবটিক সার্জারিতে প্রস্থেসিসের অ্যালাইনমেন্ট অনেক বেশী সঠিক হয়। রোবটিক সার্জারিতে প্রস্থেসিসের আয়ুস্কাল অনেক বেড়ে যায় বলে রোগী পূর্বের ন্যায় কাজ করতে সক্ষম হয়।
ডাঃ কুমার : রোবট নিয়ে আধুনিক সিনেমায় রূপকথার অনেক অসম্ভবই
সম্ভব হয়ে ওঠে। তবে বাস্তবের রোবট আসলে একটা যন্ত্র মাত্র। আর ওই যন্ত্রের পিছনের মূল
ভূমিকা পালন করেন এক্ষেত্রে তিনি একজন রিপ্লেসমেন্ট সার্জন।
ডাঃ কুমার : সার্জারির আগের প্রস্তুতি ও সার্জারির পরে সুশ্রুষা,
একই রকম থাকে। রোগীর শরীরের অ্যানেস্থিশিয়া ও অপারেশনের উপযুক্ত কিনা এবং শরীরে কোন
সংক্রমণ আছে কিনা সেটা জানতে সার্জারির আগে কিছু ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট ও সামগ্রিক
মেডিকেল চেকআপ করা হয়। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা হার্টের অসুখ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে
হয়। একইভাবে ব্লাড থিনারের মত কয়েকটি ওষুধও বন্ধ করতে হয়। তবে দাঁত, ত্বক ও প্রস্রাবের
কোন সংক্রমণ বা অসুখ নি রিপ্লেসমেন্টের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
ডাঃ কুমার : নিশ্চয়ই। আগেই কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেকনোলজি চালিত অর্থোপাইলট সিস্টেমের উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে চিকিৎসকের দক্ষতা ও পারদর্শিতার যোগসূত্রে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট প্রায় একশো শতাংশই সফল হয়ে উঠত। আর এখন তা রোবটের সাহায্যে এই অপারেশন আরো বেশি সফলতম হয়ে উঠেছে। রোগীর শরীর ঠিক থাকলেও পেশী সবল থাকলে রিপ্লেসমেন্টের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কোন অসুবিধাই থাকে না।
ডাঃ কুমার : নিশ্চয়ই। রোবোর্টের সাহায্যে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টে
একদিকে যেমন প্রস্থেসিস ভালো থাকে আবার অন্যদিকে নড়চড়া, চলাফেরা অনেক সহজে করতে পারা
যায়। শরীর ও পেশী ঠিক থাকলে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের পর সিঁড়িতে ওঠানামা, মর্নিংওয়াক,
বাজার করা, বাসে যাতায়াত এমনকী গাড়ী চালানো সব কাজই ভালভাবে, সহজেই করা যায়। তবে পোষ্ট
অপারেটিভ নিয়ম মেনে চলতেই হবে।
ডাঃ কুমার : সাধারণ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ও রোবোটিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের খরচ প্রায় একই। এটাই বড়ো সুবিধা, এছাড়াও এই জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির খরচ এখন মধ্যবিত্তের নাগালের ভিতরেই সীমাবদ্ধ। দুটি হাঁটু, একই অর্থে রিপ্লেসমেন্টের খরচ অনেকটাই কম হয়। তাছাড়াও এখন মেডিক্লেমেরও সুবিধা আছে। এত সুবিধার মধ্যে রোবোটিক সার্জারি করাই শ্রেয়। এখন আর ব্যাথায় কষ্ট পেয়ে স্বাভাবিক জীবনকে হারিয়ে না ফেলে রিপ্লেসমেন্টের সাহায্যে আবার পুনরায় আগের জীবনে ফিরে যান।