দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ডেঙ্গু হল একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। মুলত এডিস প্রজাতির মশার কামড়ে এটি হয়ে থাকে। তবে এটির সংক্রমণ তখনই ঘটে যখন মশা একটি সংক্রমিত কোনো ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে অ-সংক্রমিত কোনো ব্যক্তিকে কামড় দেয়। এটির উপসর্গ সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরের মতনই। বর্তমানে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডেঙ্গু। কিন্তু কেনো ভয়াবহ হয়ে উঠছে এই ডেঙ্গু? এর প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব?
লক্ষণগুলি সাধারণত মশার কামড়ের ৪ থেকে ৭ দিন পরে দেখা যায় এবং ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে, লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সবসময় দেখা যায় না, বিশেষ করে হালকা সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
১) ১০৪-ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উচ্চ জ্বর যা হঠাৎ করে হচ্ছে।
২) প্রচন্ড মাথাব্যথা।
৩) বমি বমি ভাব এবং বমি।
৪) শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি।
৫) গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
৬) শরীরে হাড়, জয়েন্টে ব্যথা।
৭) নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত। এটি বেশিরভাগই হালকা।
৮) ত্বকে সহজে ক্ষত। কখনও কখনও, ত্বকের নীচে সূক্ষ্ম পাত্রগুলি ক্ষতের মতো দেখা দেয়। এটি কোনো আঘাত ছাড়াই ঘটতে পারে।
৯) ক্লান্তি
১০) চোখের মণির পিছনে ব্যথা।
ডেঙ্গু জ্বর বয়স্ক শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করে। এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS) নামে পরিচিত। নিম্নলিখিত ডিএসএস এর সাধারণ লক্ষণগুলি দেখা যায়:
১) মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
২) ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালী।
৩) রক্তনালী থেকে রক্ত বের হওয়া।
৪) বমি, প্রস্রাব এবং মলে রক্ত।
৫) লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের ক্ষতি।
৬) রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়।
৭) ফ্যাটিলিভার বা জন্ডিসের প্রবণতা।
৮) পেটে প্রচণ্ড ব্যথা।
৯) ঠান্ডা এবং ফ্যাকাশে চেহারা চামড়া।
১০) নাক ও মাড়ি থেকে রক্তপাত।
১১) সংবহনতন্ত্রের ব্যর্থতা।
১২) খিটখিটে এবং অস্থির আচরণ।
১৩) শ্বাস নিতে অসুবিধা, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস।
আপনার যদি উপরের উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি থাকে তবে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ডেঙ্গুর পরীক্ষা করুন।
এই রোগের কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। যেহেতু জ্বরের কারণে শরীরে প্রবল ব্যাথা হয় সেক্ষেত্রে অ্যাসিটামিনোফেন-ভিত্তিক ব্যথানাশক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে কারণ অ্যাসপিরিন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ডেঙ্গু সংক্রমণ এড়াতে আপনাকে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে এবং এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। যদি আপনার জ্বর আসে এবং ১-২ দিনে না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন অথবা হাসপাতালে যান।
আপনার জ্বর না কমার কারণ আপনার শরীরের অভ্যন্তরে কোনো হেমারেজ(ক্ষত)। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে সাথে স্যালাইন প্রদান, প্লাজমা স্থানান্তর এবং আপনার রক্তচাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ দরকার।
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের অন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। গবেষকরা এটি নিয়ে কাজ করছেন। ডেঙ্গু জ্বরের কারণগুলোকে প্রতিরোধই একমাত্র প্রতিরোধ। এছাড়াও মশার বংশবৃদ্ধি দমন এবং মশার কামড় এড়িয়ে চলাই একমাত্র উপায়।
১) চেষ্টা করুন সুতি, লিনেন বা ডেনিমের মতো মোটা কাপড় পরার। এতে মশার কামড়ের ঝুঁকি কমে যায়। পরিপূর্ণ পোশাক পরে আপনার ত্বক যতটা সম্ভব ঢেকে রাখুন।
২) মশার বংশবৃদ্ধি দমন। নিজের পারিপার্শ্বিক এলাকা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন। এডিস মশা কৃত্রিম পাত্র যেমন বালতি, পুরনো টায়ার, টিউব, নারকেলের খোসা ইত্যাদি জলে ডিম পাড়ে। মশার বংশবৃদ্ধি এড়াতে, যে কোনও পাত্রকে ঢেকে রাখুন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
৩) রাতে মশারির ব্যবহার করুন। ডেঙ্গু মশা খুব ভোরে বা গভীর সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকে। যাইহোক, তারা আপনাকে রাতেও কামড় দিতে পারে।