দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : ঘরের মেঝেয় বিছানার উপর পড়ে রয়েছে দুই শিশুর নিথর দেহ—একজন মাত্র সাত বছরের, অন্যজনের বয়স দুই। তাদের ঠিক পাশেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল এক প্রৌঢ়কে। শুক্রবার গুজরাতের সুরাতে এই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইল গোটা এলাকা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নিজের দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন ওই ব্যক্তি। তদন্তকারীদের হাতে এসেছে একটি আট পাতার সুইসাইড নোট, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন আত্মহত্যার কারণ। সেই চিঠির ভিত্তিতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাঁর স্ত্রী ও স্ত্রীর প্রেমিককে।
মৃতের নাম অল্পেশ সোলাঙ্কি। তিনি শিক্ষকতার কাজ করতেন। শুক্রবার ঘর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় অল্পেশের দুই সন্তানের দেহও। পুলিশ সূত্রে খবর, স্ত্রী ফাল্গুনীর সঙ্গে শৈশব থেকেই প্রেম ছিল অল্পেশের। তার পর তাঁরা বিয়েও করেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ফাল্গুনী এবং অল্পেশের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় ফাল্গুনীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। চিঠিতে সেই টানাপড়েনের কথাও উল্লেখ করেছেন অল্পেশ। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পেরেছে, অল্পেশের স্ত্রী জেলা পরিষদের অফিসে কেরানির কাজ করেন। সেখানে নরেশ রাঠৌর নামে এক অফিসারের সঙ্গে তাঁর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার বছর ধরে সেই সম্পর্ক তাঁদের। অল্পেশের প্রথম থেকেই একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মনের ভুল ভেবে প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। তবে সেই সন্দেহ ক্রমে বাড়তে থাকে ফাল্গুনীর আচার-আচরণে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ফাল্গুনীর গতিবিধির উপর নজর রাখা শুরু করেন অল্পেশ। ফোনের কল রেকর্ড ঘেঁটে দেখেন। সেখানে জানতে পারেন রাঠৌরের সঙ্গে প্রতি দিন নিয়মিত ফোনে কথা হয় তাঁর। স্ত্রীর এই সম্পর্কের কথা জানার পর থেকেই নেশায় ডুবে যান অল্পেশ। তা নিয়ে ফাল্গুনীর সঙ্গে অশান্তিও হতে শুরু করে। গত জুনে দু’টি ডায়েরি কিনে আনেন অল্পেশ। গত দু’মাস ধরে সেখানেই সমস্ত ঘটনা লিখে রেখেছেন অল্পেশ। দু’টি ডায়েরির একটিতে তাঁর নিজের সম্পর্কে এবং পরিবার সম্পর্কে লিখেছেন। অন্যটিতে, স্ত্রী ফাল্গুনীকে নিয়ে লিখেছেন। দু’টি ডায়েরির একটিতে আট পাতা জুড়ে সুইসাইড নোট লিখেছেন। সেখানে তাঁর মৃত্যুর জন্য স্ত্রী এবং তাঁর প্রেমিককে দায়ী করে গিয়েছেন অল্পেশ। তিনি দাবি করেছেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে আমাকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করত ফাল্গুনী। আমার গায়ের রং, আমার চেহারা— ইত্যাদি নিয়ে নানা ভাবে অপমান করত। বলত, আমার মতো সুন্দরী মেয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে, এটা তোমার সৌভাগ্য।’’