Business

1 year ago

Bandhan Bank : বন্ধন ব্যাঙ্ক! ব্যাঙ্কিং জগতের এক অনন্য অধ্যায়

Chandra Sekhar Ghosh and his Dream Project Bandhan Bank (File Picture )
Chandra Sekhar Ghosh and his Dream Project Bandhan Bank (File Picture )

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বর্তমান সময়ে যে খানে খবরের পাতা খুললেই চিটফ্যান্ড ও মানি লন্ডারিং-র মত নানা শব্দ দৃষ্টি গোচর হয়, যখন খবর কাগজের পাতায় পাতায় আর্থিক তছরুপের ঘটনা উঠে আসছে সেখানে আর্থিক স্বাবলম্বিতা ও ভরসার অন্যত্তম স্তম্ভ হিসাবে দাড়িয়ে রয়েছে বন্ধন ব্যাঙ্ক। বন্ধন ব্যাঙ্ক হল একটি বিশিষ্ট ভারতীয় বেসরকারী ব্যাঙ্ক। চন্দ্র শেখর ঘোষের হাত ধরে এই ব্যাঙ্কের সূচনা হয়। ইংলিশ-এ একটি কথার খুব চল আছে- " Slow but steady" বন্ধন ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এই কথাটি একেবারে যথপোযুক্ত। ক্ষুদ্র অনামী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে ভারতের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান ব্যাঙ্কগুলির একটিতে পরিণত হয়েছে৷ 

আগরতলার রিফিউজি কলোনির এক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন বন্ধনের প্রতিষ্ঠাতা তথা কর্ণধার চন্দ্র শেখর ঘোষ। তার সকাল শুরু হয় তার বাবাকে স্কুলে যাওয়ার আগে তার ছোট্ট মিষ্টির দোকানে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে।আগরতলায় স্কুলপাঠ শেষে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে যান এবং  1985 সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে যোগদান করেন।এই সময়ে তিনি পিতৃহারা হন এবং পুনরায় ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বেশ কয়েকটি এনজিওতে কাজ শুরু করেন। এবং এই সময় কলকাতা সহ বাংলার শহরতলির অঞ্চলে অবস্থিত দরিদ্র পরিবার গুলির সাহায্যার্থে স্বল্প ঋনে ক্ষুদ্রমাত্রায় ঋন প্রদানের কাজ শুরু করেন। 


এই ঋন প্রদান ও সুদ গ্রহনের মধ্যে দিয়েই 2001 সালে বন্ধন ব্যাঙ্কের যাত্রা শুরু হয়। বন্ধন আর্থিক পরিষেবা (BFS) নামে একটি অলাভজনক ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা হিসাবে শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, বাঁধন প্রাথমিকভাবে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে, বিশেষত মহিলাদের, যাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেসের অভাব ছিল, মাইক্রোলোন প্রদানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষুদ্রঋণ মডেলটি সফল প্রমাণিত হয়েছে,বর্তমান সময়ে সংস্থাটি পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ক্রমাগতভাবে তার কার্যক্রম প্রসারিত করে চলেছে।বন্ধনের যাত্রাকে অব্যাহত ও প্রগতিময় করতে যোগ্য সহধর্মিনী ও সহযোগীর মতই স্বামীর সঙ্গে যোগ দেন নীলিমা ঘোঘ। নিলীমা দেবী বুঝতে পারেন মানুষের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বাস্তবতা বোঝার মধ্যেই বন্ধনের সফলতা নিহিত রয়েছে। মূলত অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় মূলধারার ব্যাঙ্কগুলি গ্রামীণ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু বন্ধনের লক্ষ্য ছিল শহর হোক বা গ্রাম সকলের কাছে ব্যাঙ্কিং সুবিধাকে উপলব্ধিকরন, এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই স্বামী-স্ত্রী জুটি বেঁধে একত্রে কাজ করতে শুরু করেন। 

বছরের পর বছর ধরে, বন্ধন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস দারিদ্র্য বিমোচনে এবং নারীদের আর্থিক সহায়তা এবং উদ্যোক্তা সুযোগ প্রদান করে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য তার প্রচেষ্টার জন্য স্বীকৃতি অর্জন করেছে। প্রসঙ্গত, চন্দ্র শেখরের ফাইন্যান্স বা ম্যানেজমেন্টে কোনো ডিগ্রি ছিল না, কিন্তু তিনি বলেছেন যে দরিদ্রদের জন্য একটি সঠিক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ধারণা তার কাছে এসেছিল যখন তিনি ব্র্যাকের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন।বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম এলাকায় কাজ করা আমাকে দরিদ্রদের জন্য একটি সঠিক আর্থিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার সম্পর্কে একটি প্রছন্ন ধারনা তৈরী হয়, ভারতে কাজ করার সময় প্রান্তিক মানুষের চাহিদা সম্পর্কে  ক্রমেই একটি সম্যক ধারনা তৈরী হয়। গরিব, কৃষক এবং দৈনিক মজুরি শ্রমিকদের অসাধু স্থানীয় মহাজনদের শোষণ থেকে বাঁচাতে একটি সংগঠিত অর্থঋণ ব্যবস্থার বৃহত্তর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন চন্দ্র শেখর ঘোষ। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ব্যাঙ্ক এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে একটি লিঙ্ক হিসাবে কাজ করার। 2006 সালে, চন্দ্র শেখর বন্ধনকে একটি নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থায় (NBFC) পরিণত করেন, যার নাম বন্ধন ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড। তারপরে, তিনি পিছনে ফিরে তাকাননি এবং তার স্ত্রীর অবিচ্ছিন্ন সমর্থনে তার সাফল্যের গল্প লিখে চলেছেন। 

তবে এই যাত্রাপথ তেমন মসৃন ছিল না, চন্দ্র শেখর এবং নীলিমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি ছিল দরিদ্র মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করা। চন্দ্র শেখর এবং নীলিমা দ্বারে দ্বারে গিয়ে গ্রামবাসীদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতেন এবং তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতেন। তারা মাঝে মাঝে মহাজনদের কাছ থেকে হুমকি পেতেন, কিন্তু তা তাদের লক্ষ্যকে বিচলিত করেনি বরং জেদ ও মনোবলকে আরো বলিষ্ঠ করে তুলেছিল। তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিঃশর্ত সমর্থন আমাদের সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল এবং গ্রামের মহিলাদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিশ্বাস ও ভরসা গড়ে ওঠে। 

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল ছোট ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে তহবিল সংগ্রহ করা। চন্দ্র শেখর স্মরণ করিয়ে দেন যে কোনও ব্যাঙ্ক তাদের ঋণ দেবে না। "আমি আমার প্রস্তাব নিয়ে তহবিলের জন্য মরিয়া হয়ে প্রতিটি ব্যাঙ্কের দরজায় কড়া নাড়ছিলাম, যখন ভারতের ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন বোর্ডের (সিডবিআই) নির্বাহী পরিচালক, ব্রিজ মোহন, বন্ধনে আস্থা দেখিয়েছিলেন এবং 2002 সালে 20 লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। এটাই ছিল বন্ধন পরিবারের বড় সাফল্য। পরে ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন (IFC) এবং SIDBI বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠে এবং বন্ধনে ইক্যুইটি তুলে নেয়। অনেক ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধনকে মাইক্রোলেন্ডিংয়ের জন্য অর্থায়ন শুরু করেছে। আজ কোম্পানির 13,000 এরও বেশি কর্মচারী সারা দেশ জুড়ে সাধারন মানুষ ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। 

2014 সালে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) থেকে একটি ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়ার মাধ্যমে বন্ধন ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস আরো একধাপ এগিয়ে যায়, লাইসেন্সের মাধ্যমে, বান্ধন নিজেকে একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরিত করে। এই রুপান্তর নিসন্দেহে তার বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। 23 আগস্ট, 2015 তারিখে, বন্ধন ব্যাঙ্ক আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্ক হিসাবে নিজের উড়ান শুরু করে। উল্লেখ্য, আরবিআই 2013 সালের জুলাই মাসে 27টি আবেদন পেয়েছিল, যার মধ্যে টাটা সন্স এবং ভিডিওকন গ্রুপ তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে দেওয়া হয়, 25 জন প্রতিযোগীকে লড়াইয়ে রেখেছিল আরবিআই । অনিল আম্বানি গ্রুপ, আদিত্য বিড়লা গ্রুপ, বাজাজ ফাইন্যান্স, মুথুট ফাইন্যান্স, রেলিগেয়ার এন্টারপ্রাইজ, শ্রীরাম ক্যাপিটাল, স্রেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ম্যাগমা ফাইন্যান্স ছিল এই তালিকায়। মূলত,আর্থিক বিবৃতি, তাদের ব্যবসা চালানোর 10 বছরের ট্র্যাক রেকর্ড, ব্যাঙ্কের জন্য প্রস্তাবিত ব্যবসায়িক মডেল, ব্যাঙ্ক চালানোর দক্ষতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে এই লাইসেন্স প্রদান করে থাকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যেদিন আরবিআই তার ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স ঘোষণা করেছিল, চন্দ্র শেখর বাবুর কাছে একটি বিশেষ দিন ছিল। যারা তাদের সাথে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের পিছনে ফলে এগিয়ে যাওয়া কুরুক্ষেত্রে জয় লাভের থেকে কম কিছু সুখকর ছিল না। 


উল্লেখ্য বন্ধন ব্যাঙ্কিং সার্ভিস শুরু থেকে  আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ (এসএমই) সহ সমাজের ব্যাঙ্কবিহীন এবং আন্ডারব্যাঙ্কিংহীন অংশগুলিকে সেবা প্রদান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে যথেষ্ঠ সচেতনতার সাথে কাজ করে চলেছে। বর্তমানে ভারত জুড়ে তার শাখাগুলির নেটওয়ার্ক দ্রুত প্রসারিত হতে শুরু করে। খুচরা ব্যাঙ্কিং, কর্পোরেট ব্যাঙ্কিং, কৃষি ব্যাঙ্কিং এবং ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং সলিউশন-র সাথে সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকার বজায় রেখে এটি তার অফারগুলিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার দিকেও বিশেষ যত্নশীল।  

বন্ধন নিজের পরিষেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে নিজের আলাদা একটি পরিচিতি তৈরী করেছে। তার এই প্রতিষ্ঠা ও প্রগতি এবং আর্থিক ভাবে  সমাজকে অগ্রগতি প্রদানের জন্য সন্মানিত করেছে ভারতের বহু নামীদামী নামজাদা প্রতিষ্ঠান। 

* 14 ফেব্রুয়ারি, 2015 তারিখে অ্যাসোসিয়েশন অফ কর্পোরেট অ্যাডভাইজারস অ্যান্ড এক্সিকিউটিভস দ্বারা উপস্থাপিত ETBC অ্যাওয়ার্ডস জিতেছে( সর্বোচ্চ চাকরির সৃষ্টিকর্তা' বিভাগে) 

* দ্য ইকোনমিক টাইমস কর্তৃক 2014 সালের সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার দেওয়া হয় চন্দ্র শেখর ঘোষকে

* 15 নভেম্বর, 2014-এ মুম্বাইয়ে বোম্বে ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দ্বারা 'ফিনান্স ম্যান অফ দ্য ইয়ার' দেওয়া হয় চন্দ্র শেখর বাবুকে

* ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিট চলাকালীন 5 নভেম্বর, 2014-এ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক বন্ধন-কে একটি গ্লোবাল গ্রোথ কোম্পানির সম্মান লাভ করে।

* 2014 সালে ফোর্বস ইন্ডিয়া লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডের অংশ হিসেবে চন্দ্র শেখর ঘোষকে ‘সামাজিক প্রভাবক  উদ্যোক্তা’ পুরস্কার প্রদান করে। 

* 06 অগাস্ট, 2014-এ নয়া দিল্লিতে AIMA ম্যানেজিং ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ডস 2014-এর দ্বারা 'বর্ষসেরা  উদ্যোক্তা' পুরস্কার পেয়েছেন। 

* 13 ফেব্রুয়ারি, 2014 তারিখে কলকাতায় ‘সেরা CSR আইডিয়া’ বিভাগে অ্যাসোসিয়েশন অফ কর্পোরেট অ্যাডভাইজার অ্যান্ড এক্সিকিউটিভস থেকে ETBC অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। 

* স্কচ ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড 2013 বন্ধন 05 জানুয়ারী, 2013-এ নয়াদিল্লিতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তার উদ্যোগের জন্য এটি পেয়েছে। 

* 22 এপ্রিল, 2011-এ 'সেরা এইচআর অনুশীলন' বিভাগে এই পুরস্কার জিতেছে। 

* স্কচ ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড 2011 বন্ধন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অনুদান-ভিত্তিক, টেকসই সহায়তা প্যারাফারনালিয়া প্রসারিত করার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছে। 

* 26শে অক্টোবর, 2009-এ নয়াদিল্লিতে এইচএসবিসি অ্যাকসেস মাইক্রোফাইন্যান্স ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ডের অংশ হিসেবে বন্ধনকে 'ইন্সটিটিউশন অফ দ্য ইয়ার' পুরস্কার দেওয়া হয়।

* স্কোচ চ্যালেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড বাঁধনকে 19ই মার্চ, 2008-এ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য স্কোচ চ্যালেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড দিয়ে স্বীকৃত করা হয়েছিল। 

* 2007 সালে "সিনিয়র অশোক ফেলো" সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল।

* 2007-এ ফোর্বসের প্রথমবারের মতো বিশ্বের শীর্ষ 50 MFI-এর তালিকানুযায়ী বন্ধন বিশ্বে 2য় এবং ভারতে 1ম স্থান অধিকার করে। 

* প্রো পুওর ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড বন্ধনকে ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা কনসালটেটিভ গ্রুপ টু অ্যাসিস্ট দ্য পুওর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। 

উল্লেখ্য, বন্ধন ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়ার 18 মাসেরও বেশি সময় ধরে, এটি আরবিআই-এর শর্তাবলী মেনে চলে এবং ব্যাঙ্ক হওয়ার জন্য সমস্ত মানদণ্ড সহজেই পূরণ করে। এটি একটি ব্যাংক হিসাবে যাত্রা শুরু করে 23 ডিসেম্বর, 2014 এ,কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে আর্থিক খাত এবং কর্পোরেট ভারতের নিয়ন্ত্রক, নীতিনির্ধারক এবং আলোকিত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে একটি অনুষ্ঠানে বন্ধন ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করেন।বর্তমানে 27টি রাজ্যে 615টি শাখা, 2,022টি ডোরস্টেপ সার্ভিস সেন্টার এবং 205টি এটিএম অবিরত  কাজ করে চলেছে৷ 

এক বছরেরও কম সময়ে, শাখার সংখ্যা 615 এবং 205টি এটিএম-এ প্রসারিত হয়েছে, যার আমানতের পরিমান প্রায় 4,000 কোটি টাকা। ব্যাঙ্কের দুটি বিভাগ রয়েছে — মাইক্রো ব্যাঙ্কিং এবং সাধারণ ব্যাঙ্কিং—এবং এটি বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় এবং ঋণ পণ্য সহ সম্পূর্ণ খুচরা আর্থিক সমাধান প্রদান করে।উল্লেখ্য, বেশিরভাগ ব্যাঙ্ক শহর ও গ্রামীণ অংশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং কর্পোরেট এবং খুচরা খাতে অর্থ স্থাপন করে।বন্ধন ব্যাঙ্ক বৃহৎ কর্পোরেট ঋণ নয় বরং মাইক্রো এবং এমএসএমইতে ঋণের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়। তারা 25,000 টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য প্রসেসিং চার্জও মওকুফ করার মত স্কিম ও প্রদান করে থাকে গ্রাহকদের জন্য।


বন্ধন ব্যাঙ্ক এখন দক্ষ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রদানের জন্য বর্তমান কর্মীর মধ্যে দক্ষতা-সেটগুলিকে উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করছে।গ্রামীণ দরিদ্র জনগণকে তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলি ব্যাঙ্কে রাখার সুবিধা সম্পর্কে অবহিত করার কাজ করে চলেছে, যাতে চিট ফান্ড সংস্থাগুলির দ্বারা প্রতারিত হওয়ার পরিবর্তে তারা যাতে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে সুরক্ষি ও বড় রিটার্নকে সুনিশ্চিত করতে পারে। চন্দ্র শেখরের সাফল্য লুকিয়ে আছে তার মাটির মানুষ হয়ে নিজেকে পরিচিত করার মধ্যে। এত সফল ব্যবসাদার হওয়ার পরও তিনি তার ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকদের সাথে দেখা করেন, পরামর্শ দেন, ভরসা যোগান। 

বাংলার শিল্প সারা বিশ্বে সমাদৃত ও চর্চিত। সেকথা সকলেরই জানা। বাংলার শিল্প ও শিল্পীদের জন্য আলাদা করে ভাবনা শুরু করেন নিলীমা ঘোষ। বাংলার শিল্প ও শিল্পীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং বন্ধন ক্রিয়েশনস n 2012 স্থাপন করেন। এটি একটি খুচরা চেইন যা গ্রামীণ ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে স্থানীয় তাঁত এবং হস্তশিল্পের দ্বারা উৎপাদিৎ দ্রব্যাদির সরবরাহকে সুনিশ্চিত করবে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও নৈপুণ্যের জন্য বাজারের সংযোগ সহজতর করতে সহায়তা করাই এর লক্ষ্য। বর্তমানে বন্ধন ক্রিয়েশনের পরিচালক হিসাবে অবিরত কাজ করে চলেছেন নীলিমা। 


চন্দ্র শেখর একজন ওয়ার্কহলিক এবং খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। ছুটির দিনে, তিনি তার স্ত্রী এবং ছেলে অংশুমানের সাথে বাড়িতে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। নীলিমা দেবী কাজের জায়গায় ঘোরতর কর্পোরেট হলেও বাড়িতে একেবারে নিপাট হোমমেকার। নীলিমা ও চন্দ্রশেখর ঘোষের একমাত্র পুত্র অংশুমান একজন পেশাদার স্প্রিন্টার, যিনি রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন।আপাতত নিজের পড়াশুনা নিয়েই আছে অংশুমান তিনি বন্ধনে যোগ দিতে চান নাকি অন্য কিছু করতে চান তা তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মত চন্দ্র শেখর বাবুর। 


বন্ধন ব্যাঙ্কের গল্পটি খানিক সিনেমার গল্পের মত হলেও নিসন্দেহে উদ্বুদ্ধমূলক। সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্য করা একটি ক্ষুদ্র সংস্থা থেকে সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবার এই গল্পের সাথে জড়িয়ে রয়েছে একজন ছা-পোষা মধ্যবিত্ত বাঙালির কর্পরেট হয়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছা এবং পরিশ্রম। চন্দ্র শেখর বাবুর বন্ধনের প্রগতির সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্প। বন্ধনের সুবাদে গ্রাম থেকে শহরে শিক্ষিত বেকারের হারে অবশ্যই ফারাক এসেছে, যা ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক একটি দিক। 

You might also like!