দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: মন খারাপ যেন আমাদের সবসময়ের সঙ্গী। নতুন দিন শুরু হয়, সময় এগিয়ে যায় কিন্তু বিরক্তি,মন খারাপ যেন চিরাচরিত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যাওয়া হয় ঠিকই কিন্তু মন হয়ে থাকে বিষন্ন। বিষন্নতা যেন আপনার সর্বক্ষণের মিত্র হয়ে ওঠে। মহামারীর আকার যে নিতে পারে ডিপ্রেশন তা নিয়ে অনেক আগেই সতর্ক করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি দুঃখ, হতাশার বৃদ্ধি, কাজকর্মে অনীহা, মানসিক প্রফুল্লতাকে প্রভাবিত করা সহ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায়।
সবসময় জীবনধারা বদলালেই যে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাবেন তা নয় তবে অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ জীবনধারা আপনাকে মানসিক প্রফুল্লতাকে অটুট রাখবে। মানসিকতাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। জেনে নিন কয়েকটি উপায়,
১) নিত্যদিন ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন মানসিক চাপ কমানো এবং মেজাজ ভালো রাখার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যকে ইতিবাচক প্রভাবিত করে। এন্ডোরফিন 'ফিল গুড' হরমোন হিসেবে পরিচিত। এই হরমোন মেজাজ ভালো রাখতে পারে এবং বিষন্নতার লক্ষণ কমাতে পারে।
২) স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস: ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য মস্তিষ্ককে সর্বোত্তম উপায় পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে ফলত বিষণ্ণতার ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।
৩) চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা: দীর্ঘস্থায়ী চাপ হতাশার সৃষ্টি করে তাই প্রেসার কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজুন। নানান রিলাক্সেশন কৌশলে অভ্যাস করুন নিজেকে।নিজের শখকে প্রাধান্য দিন। ধ্যান,গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, গান শোনা, শরীর চর্চা এমন কাজে প্রতিনিয়ত নিজেকে লিপ্ত রাখুন।
৪) পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন পর্যাপ্ত সময় ঘুমানো শারীরিক সুস্থতার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার বিষন্নতাকে দূরে রাখতে সহায়ক, নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী মেনে চলুন। ঘুমের অভাব হলে মেজাজ খারাপ হতে বাধ্য।প্রতিরাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম আপনার দরকার। মনে রাখবেন, ঘুমহীনতা ডিপ্রেশনকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়, তাই সতর্ক হোন।
৫) মদ্যপান নিয়ন্ত্রণে রাখুন: মানুষ ডিপ্রেশন ভুলতে, সাময়িক আনন্দ পেতে মদ্যপানকে সর্বোত্তম বন্ধু ভেবে নেন। অথচ অ্যালকোহল হতাশা জনক এবং নেতিবাচকভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তাই মদ্যপান কমিয়ে দিন, নতুবা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিন। দেখবেন,আপনি মানসিকভাবে ভালো থাকবেন।
৬) ধূমপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান এবং ডিপ্রেশনের ঝুঁকির মধ্যে যোগসূত্র পেয়েছেন গবেষকরা। ধূমপান এড়িয়ে চলুন, সম্ভব হলে ছেড়ে দিন তবেই আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের সামগ্ৰিকভাবে উন্নতি হবে।
৭) সামাজিকীকরণ: বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সামাজিক কাজকর্মে জড়িত হলে একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি দূরে সরে যায়। ডিপ্রেশনের অন্যতম সাধারণ লক্ষণই নিজেকে একাকিত্বে গ্রাস করা, অপর কেউ আপনার পরিস্থিতি বুঝছেনা এই অনুভূতি উপলব্ধি করা। তাই বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা যেকোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলুন তবেই আপনি মানসিকভাবে ইতিবাচক রাখবে।
৮) মানসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন: যদি ক্রমাগত দুঃখ যন্ত্রণা আপনাকে গ্রাস করে,সবকিছুতে অনীহা দেখা যায়,সেক্ষেত্রে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা ক্রমেই লাগামছাড়া হতে থাকে। তাই পেশাদার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন ভালো থাকার পথ খুঁজে নিন।
সর্বোপরি, নিজেকে চেনার জন্য,নিজেকে ভালো রাখার জন্য, মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার প্রত্যয় নিয়ে বেঁচে থাকতে মেনে চলুন উপরিউক্ত নিয়ম গুলি। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখুন।