দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: চারপাশে পরিবেশ দূষণ আর শ্রাবণের অবিরাম বৃষ্টি—দুয়ের জেরে নাকাল শহরবাসী। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর। সর্দি-কাশি, বুকে কফ জমে থাকা, শ্বাসকষ্ট—এসব এখন ঘরে ঘরে সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফুসফুসের ওপর অতিরিক্ত চাপ, যা থেকে সহজেই বাড়তে পারে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রবণতা। এই অবস্থায় ওষুধের উপর নির্ভর না করে, বরং প্রাকৃতিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন উপায়ে ফুসফুসের যত্ন নেওয়াই শ্রেয়। আর সেই দিক থেকে যোগব্যায়াম বা প্রণায়াম হতে পারে অত্যন্ত কার্যকরী এক উপায়। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নিয়মিত কিছু নির্দিষ্ট যোগাভ্যাস করলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে, নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ক্ষমতা উন্নত হয়, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও মজবুত হয়।
∆ ফুসফুস সুস্থ রাখতে যে ৩টি যোগাভ্যাস অত্যন্ত উপকারী:
• ভুজঙ্গাসন—
১. প্রথমে পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন।
২. পা দুটো সোজা করে রাখুন এবং পায়ের পাতা মেঝের দিকে মুখ করে রাখুন।
৩. হাতের তালু কাঁধের ঠিক নিচে মেঝের উপর রাখুন। কনুই আপনার শরীরের কাছাকাছি রাখুন।
৪. শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে আপনার মাথা এবং বুক মাটি থেকে উপরে তুলুন। আপনার নাভি যেন মেঝের সঙ্গে লেগে থাকে।
৫. হাত সোজা রাখুন এবং মেরুদণ্ডকে বাঁকিয়ে উপরের দিকে ধরে রাখুন। কাঁধ শিথিল রাখুন এবং মুখ সামনের দিকে সোজা রাখুন।
৬. এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে থাকুন।
৭. শ্বাস ছাড়ুন এবং ধীরে ধীরে আপনার বুক এবং মাথা মেঝের দিকে নামিয়ে আনুন।
• মৎস্যাসন—
১. প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন।
২. পা দুটো সোজা করে রাখুন এবং হাত শরীরের পাশে রাখুন।
৩. হাতের তালু আপনার নিতম্বের নিচে রাখুন, তালু নিচের দিকে মুখ করে থাকবে।
৪. শ্বাস নিন এবং বুক ও মাথা মাটি থেকে উপরে তুলুন, এই সময় পিঠ ধনুকের মতো বাঁকাতে হবে।
৫. ধীরে ধীরে মাথার তালু মেঝের উপর রাখুন। এতে আপনার গলা প্রসারিত হবে।
৬. পা এবং নিতম্ব মেঝের উপর স্থির রাখুন।
৭. এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে থাকুন।
৮. শ্বাস ছাড়ুন এবং ধীরে ধীরে আপনার শরীর মেঝেতে নামিয়ে আনুন।
• ত্রিকোণাসন—
১. প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং দু'পায়ের মধ্যে প্রায় তিন থেকে চার ফুটের দূরত্ব রাখুন।
২. ডান পা ৯০ ডিগ্রি এবং বাম পা সামান্য ভিতরের দিকে ঘোরান।
৩. এবার হাত দু'টো কাঁধের উচ্চতায় দুপাশে সোজা করে ছড়িয়ে দিন।
৪. শ্বাস ছাড়ুন এবং ধীরে ধীরে ডান হাত দিয়ে বাম পায়ের পাতা অথবা স্পর্শ করার জন্য নিচের দিকে ঝুঁকুন। আপনার বাম হাত উপরের দিকে সোজা করে তুলুন।
৫. এই সময় আপনার দৃষ্টি আপনার বাম হাতের দিকে থাকবে।
৬. আপনার শরীর যেন একদিকে বাঁকানো থাকে, সামনের দিকে বা পিছনের দিকে ঝুঁকে না থাকে।
৭. এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে থাকুন।
৮. শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
৯. একইভাবে বাম দিকেও করুন।
তবে মনে রাখা জরুরি, এই যোগাসনগুলি **ওষুধের বিকল্প নয়**। যদি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় বা উপসর্গ গুরুতর হয়, তাহলে অবিলম্বে **চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়**। তাছাড়া, যোগাভ্যাস করার সময় যদি কোনওরকম **অস্বস্তি বা শারীরিক সমস্যা** অনুভব করেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই অনুশীলন বন্ধ করুন এবং প্রয়োজনে **প্রশিক্ষিত যোগশিক্ষকের পরামর্শ নিন**। নিরাপদে চর্চা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।