দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ আজকের ব্যস্ত জীবনে আমরা কী খাচ্ছি, কতটা খাচ্ছি—সেই নিয়ে সচেতনতা অনেক কম। অনেক সময় খুব সাধারণ কিছু খাবারই আমাদের অজান্তে শরীরের ভেতরে ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিডনি আমাদের শরীরের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেটি প্রতিনিয়ত শরীরকে পরিশ্রুত করে চলেছে। কিন্তু কিছু ভুল খাদ্যাভ্যাস কিডনিতে পাথরের জন্য সবচেয়ে বড় খলনায়ক হিসেবে কাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে, আপনার জানা উচিত কোন জিনিসগুলি কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
কিডনিতে পাথর এড়াতে, প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সবাই এটা জানে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তা করে না। আজকাল বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীও কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন। একদিকে তারা কম জল পান করেন এবং তার উপর তাদের খাদ্যাভ্যাস খুবই খারাপ হয়ে গেছে। আর এই ভূল খাদ্যাভ্যাসের ফলেই কিডনিতে জমতে পারে পাথর ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবার গুলি নিঃশব্দে আপনার কিডনির ক্ষতি করছে-
১)অতিরিক্ত লবণ – অতিরিক্ত লবণ কিডনিতে পাথরের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। অতএব, উচ্চ লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ সীমিত করুন। পিৎজা, বার্গার, চিপস, প্যাকেটজাত ভুজিয়া, প্যাকেটজাত খাবার, হিমায়িত খাবার, টিনজাত স্যুপ ইত্যাদিতে উচ্চ লবণ থাকে। অতএব, এই জিনিসগুলি খুব কম খান অথবা প্রায় একেবারেই খান।
২)প্রাণীজ প্রোটিন- প্রোটিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রাণীজ মাংস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন অতিরিক্ত গ্রহণ খুবই ক্ষতিকর। লাল মাংস অর্থাৎ প্রাণীজ মাংস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন খুবই বিপজ্জনক। এটি বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে যার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আপনি যদি প্রাণীজ প্রোটিনের পরিবর্তে উদ্ভিদজাত প্রোটিন গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি আরও বেশি উপকার পাবেন।
৩)মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন- গ্রীষ্ম হোক বা শীত, আজকাল তরুণরা কোল্ড ড্রিঙ্কস, ডায়েট সোডা, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি পান করার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। মিষ্টি পানীয় কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। খুব বেশি মিষ্টি চা পান করলেও কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এই সবের ব্যবহার কমিয়ে দিন এবং ভেষজ চা ব্যবহার করুন।
৪)কিছু ওষুধ - যদি আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অনেক বেশি ভিটামিন সি ট্যাবলেট খান, তাহলে শরীরে অক্সালেট তৈরির ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত অন্যান্য ওষুধ গ্রহণের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না।
৫)বোতলজাত ফলের রস —
এই সব পানীয়ে থাকে ফ্রুক্টোজ, যা কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে তোলে।
ফ্রুক্টোজ বিপাক প্রক্রিয়ায় গিয়ে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমায়, ফলে ইউরিক অ্যাসিড পাথরের ঝুঁকি তৈরি হয়।
এছাড়াও, এসব পানীয় কিডনি থেকে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় — যা ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন এক বা একাধিক সোডা পান করেন, তাঁদের কিডনি স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা ২৩% বেশি।
আমরা অনেক সময় না জেনে বা অবহেলায় এই ধরনের কিছু খাবার খেয়ে থাকি, যেগুলো আমাদের কিডনির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। মিষ্টি পানীয়, অতিরিক্ত লবণ, প্রাণীজ প্রোটিন—এইসব খাবার নিয়মিত ও মাত্রার অতিরিক্ত গ্রহণ কিডনিতে পাথর তৈরি সহ নানা জটিলতা বাড়িয়ে তোলে। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন, খাবার বাছাই করুন বুঝে শুনে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পানই পারে কিডনিকে সুস্থ রাখতে।