দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বর্ষার দিনে ভাজাভুজি আর খিচুড়ি-ইলিশ মানেই বাঙালির প্লেটজোড়া সুখ। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি, আর ঘরে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ—এই চিত্র যেন মন ভালো করে দেয়। তবে এই রোম্যান্টিক ছবির আড়ালে যে সমস্যা লুকিয়ে থাকে, তা হল—লিভারের অতিরিক্ত চাপ ও সংক্রমণের আশঙ্কা। বর্ষাকালে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া, বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি, সঙ্গে জল ও খাদ্যদূষণ—সব মিলিয়ে শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এই সময় হেপাটাইটিস A ও E, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে, যেগুলোর সরাসরি প্রভাব পড়ে লিভারের উপর। তার উপর হজমের গতি মন্থর হওয়ায় খাবার ঠিক মতো ভাঙে না—ফলে শরীরে জমে যেতে থাকে বিষাক্ত বর্জ্য। তাই বর্ষায় শুধু রসনা নয়, নজর দিন লিভারের সুস্থতা রক্ষাতেও। ডাক্তাররা বলছেন, খাদ্য তালিকায় কয়েকটি নির্দিষ্ট খাবার রাখলেই বর্ষার সংক্রমণ রোধ করে লিভারকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
∆ লিভার-বান্ধব ৬টি খাবার, যেগুলি বর্ষায় রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়:
১। হলুদ: হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান হল কারকিউমিন। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী গুণসম্পন্ন যৌগ। কারকিউমিন লিভারের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি পিত্ত উৎপাদনে সাহায্য করে, যা হজমে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ নির্গমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে কারকিউমিন লিভারে চর্বি জমতে দেয় না। একইসঙ্গে তা লিভারের নতুন কোষ গঠনে সহায়ক।
২। সবুজ শাকসবজি: কলমি শাক, পুঁইশাক, কচু, থানকুনি, পালং শাক, বাঁধাকপি প্রভৃতি সবুজ শাকসবজি ভিটামিন (A, C, K), খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এগুলিতে উচ্চ মাত্রার নাইট্রেট এবং পলিফেনল থাকে যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমগুলোর উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণে লিভারের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে উন্নত করে এই সবজিগুলি।
৩। সাইট্রাস ফল: মোসাম্বি, কমলালেবু, কাগজিলেবু প্রভৃতি সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফল পিত্ত উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত ও লিভারকে বিষমুক্ত করে। এগুলিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
৪। আদা: আদার মধ্যে থাকা জিঞ্জেরল এবং শোগাওল নামক শক্তিশালী যৌগগুলি প্রদাহ-বিরোধী। একইসঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আদা আমাদের হজমে সহায়ক এনজাইমগুলির উৎপাদনকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে বদহজম, পেট ফোলাভাব ও গ্যাসের সমস্যা কমে। লিভার থেকে চর্বি ও বিষাক্ত পদার্থ বের করার পাশাপাশি লিভারের প্রদাহ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫। পেঁপে: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফাইবার এবং পাপাইন নামক একটি এনজাইম থাকে। পাপাইন প্রোটিন ও ফ্যাট হজমে সহায়ক। পেঁপে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। লিভারের কোষকে সুস্থ রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাঁচা পেঁপে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতেও কার্যকরী। পেঁপেতে থাকা কিছু উপাদান যেমন ড্যানডেলিওন ও মিল্ক থিসল লিভারকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
৬। ডিমের সাদা অংশ: ডিমের কুসুমে চর্বি বেশি থাকলেও, সাদা অংশ প্রোটিনে ভরপুর এবং লিভারের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। বর্ষায় হালকা সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর।
∆ কী খাবেন না এই সময়ে?
১। কাঁচা খাবার বা কেটে রাখা ফল।
২। রাস্তার খাবার।
৩। অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার।
৪। সংরক্ষিত ও প্রসেসড খাবার।
বর্ষা মানেই শুধু ভোজনবিলাস নয়, বরং স্বাস্থ্য সচেতনতাও জরুরি। স্মরণে রাখুন—লিভার ভালো তো শরীর ভালো। তাই ইলিশ বা পকোড়া খাওয়ার মাঝে একটু জায়গা করে দিন লিভারবান্ধব খাবারগুলির জন্যও। বর্ষার আড়ালে থাকা সংক্রমণ যেন রসনার স্বাদকে মাটি না করে দেয়—সেই দিকেই থাকুক নজর।