দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- মহালয়া হল পিতৃপক্ষের অবসাদ, দেবীপক্ষের আরম্ভ। আর সেই দিনেই পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে দান করা হয় জল, ফল। কিন্তু কেন করা হয় এই তর্পণ? বিভিন্ন পুরানে এর ব্যাখ্যা তো আছেই,তবে এর একটি অনুষঙ্গ কাহিনী আছে মহাভারতে। তাই কথিত আছে, 'যা আছে ভারতে', তাই আছে 'মহাভারতে।'
পুরাণ মতে, মহাভারতে কর্ণ দাতা কর্ণ হিসাবেই পরিচিত। তাঁর কাছ থেকে দান চেয়ে কেউ কখনো খালি হাতে ফেরেন নি। তাই অর্জুনের হাতে বধ হয়ে কর্ণের স্বাভাবিক স্থান হলো স্বর্গে। কর্ণ স্বর্গে পৌঁছানোর পরে তিনি দেখলেন তাঁর খাদ্য হিসাবে তাঁকে দেওয়া হয়েছে সোনা, রুপো সহ বহু মূল্যবান সামগ্রী। কিন্তু নেই কোনো খাদ্য সামগ্রী।
ক্ষুদায় কাতর কর্ণ হয়ে তখন স্বর্গে খাদ্য চাইলে তাঁকে জানানো হয়,কর্ণ কোনও দিনই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য বা জল দান করেননি। তিনি সকলকে শুধু সোনা এবং রত্নই দান করেছেন। সেই কারণেই স্বর্গে আসার পর তাঁকেও সোনা বা রত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। সব শুনে কর্ণ স্বীকার করলেন, তিনি পিতৃপুরুষ সম্পর্কে সত্যিই অবহিত ছিলেন না। তাই পিতৃপুরুষকে অন্ন এবং জল দান করেননি তিনি। তখনই কর্ণকে এক পক্ষকালের জন্য মর্ত্য পাঠানো হয় পূর্ব পুরুষদের জল দানের জন্য। যে সময়ে কর্ণকে পৃথিবীতে পাঠানো হল সেই সময়কালটি ছিল এই পিতৃপক্ষ। ফলে পিতৃপক্ষ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
মহালয়া হল পিতৃপক্ষ দেবীপক্ষের সন্ধিদিন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা র্পযন্ত (যা আশ্বিন মাসে পড়ে) সময় পিতৃপক্ষ। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ক'দিন মনুষ্যলোকের নিকটে আসেন। এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করাই রীতি। লোকবিশ্বাস, এই সময়ে আত্মাদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়। এই বিশ্বাস থেকেই গোটা (পিতৃ)পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়, তর্পণ করা হয়। মর্ত্যে ১৫ দিন ধরে এই স্মরণ-তর্পণ করার জন্যই পাঠানো হয়েছিল কর্ণকে।