দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলা মানেই লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান। আর সেই লোক সংস্কৃতি জুড়ে রয়েছে না না লোকায়ত দেবদেবীর মাহাত্ম্যগাথা। তেমনই এক লোকায়ত দেবী মাহাত্ম্যঘেরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হল রান্নাপুজো। যার মধ্যে প্রতিফলিত হয় বাংলার লোক সাহিত্য ও বাংলায় খাদ্যাভ্যাস।
মূলত বাংলার গ্রাম গঞ্জে ভাদ্রের শেষে সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। মূলত মনসা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল এই রান্নাপুজো বা অরন্ধন। গ্রাম বাংলায় এখনও অনেক বাড়িতেই এই অরন্ধন পালন করা হয়। ভাদ্রের শেষ দিন অরন্ধন পালন করা অথবা স্থানভেদে ভাদ্রের শেষ দিনে রান্না করে আশ্বিনে খাওয়া এই পুজোর অন্যতম রীতি।
সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন হয় এই পুজো। রান্নাঘর পরিষ্কার করে হেঁশেলের এককোণে শালুক ,কাশ ফুল, ফণিমনসা গাছের ডাল সাজিয়ে পুজো করা হয়। সেই সঙ্গে বসানো হয় মনসার বিশেষ ঘট।সাথে চলে দেদার রান্নাবান্না। মরশুমি শাক, সবজি, মাছ এসব দিয়েই পুজো হয়। সেই তালিকায় থাকে বিভিন্ন ভাজা। যেমন কলাভাজা, বেগুন ভাজা, আলু ভাজা, শুকনো মুসুর ডাল, ইলিস মাছ ভাজা, চিংড়ি মাছ ভাজা, কচু শাক, ওলের বড়া, বেসনের বড়া, বেগুনি, পায়েস, মালপোয়া, চালতার চাটনি ও পিঠে বানানো হয় এইদিন।
বর্ষায় সাপের উপদ্রব বাড়ে। এবছর বর্ষায় তেমন বৃষ্টি না হলেও ভাদ্রে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আর তাই ভাদ্র মাস শেষ হওয়ার আগের দিনই করা হয় মা মনসার আরাধনা। দেবীর প্রতীক হিসেবে সিঁদুর-তেল দিয়ে পুজো করা হয় রান্নাঘর আর উনুনে।
যদিও কালের প্রবাহের সাথে বাংলার এই লোকায়ত সংস্কৃতি হারাতে চলেছে। মাটির প্রলেপ দেওয়া নিকোনো উঁনুন আর রান্নাঘরের বদলে আমাদের জীবনে স্থান করে নিয়েছে মডিউলার কিচেন। তবে বাংলার গ্রামে এখনো মহাসমারোহে পালিত হয় এই উৎসব।