দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: একশো দিনের কাজ, সড়ক, সর্বশিক্ষা অভিযান, এবং আবাস যোজনার পর এবার 'জল জীবন মিশনে'ও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের হাজার হাজার ঠিকাদার, মিস্ত্রি, কর্মী, এবং সরবরাহকারীরা প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বকেয়া পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নিজেদের হকের দাবিতে রাজ্যের ঠিকাদারদের সংগঠন এবার দিল্লির রাজপথে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে।২০১৯ সালের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেশের প্রতিটি বাড়িতে স্বচ্ছ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘হর ঘর জল’ স্লোগান সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদির সরকার চালু করেছিল ‘জল জীবন মিশন’। কেন্দ্র ও রাজ্য–দুই সরকার ৫০:৫০ অনুপাতে এই প্রকল্পের ব্যয়ভার বহন করে। কোভিডের জন্য প্রকল্প কিছুটা ঢিমেতালে চললেও ২০২১ থেকে পুরনো ছন্দে এগোতে থাকে এই প্রকল্প। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে প্রাণপাত করছেন যাঁরা, সেই ঠিকাদাররাই গত এক বছর ধরে বিপন্ন। হঠাৎ করেই গত বছর পুজোর পর থেকে এই প্রকল্পে কাজের জন্য কোনও অর্থই পাননি রাজ্যের ঠিকাদাররা। এখনও পর্যন্ত সেই বকেয়ার পরিমাণ ২,৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া যে কাজের বিল এখনও তৈরি হয়নি, তার পরিমাণ আরও প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গত প্রায় ১৩ মাসে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ঠিকাদারদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনের সময় বুথে অস্থায়ী টয়লেট থেকে শুরু করে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে গিয়ে রাজ্যের কাছে বাকি ৩২৫ কোটি।
জেলা স্তরের সরকারি আধিকারিকদের কাছে বারবার দরবার করে কোনো সুরাহা না হওয়ায় এবার সরাসরি রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছে ঠিকাদারদের সংগঠন অল বেঙ্গল পিএইচই কন্ট্রাকটার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিভিল)। গত এপ্রিল ও জুন মাসে জেলা স্তরে আন্দোলনও করেছেন তাঁরা। সংস্থার অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক মানস চট্টোপাধ্যায় জানান, বারবার চেষ্টা করেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন পৌঁছানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী নানা সময়ে নানা মানবিক রূপ দেখিয়েছেন। আশা করছি, এই খবর তাঁর কাছে পৌঁছালে নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা করবেন।" পুজোর আগে বকেয়ার কিছু অংশ হলেও পাওয়ার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ঠিকাদাররা। মানসবাবুর বক্তব্য অনুযায়ী, এই বকেয়া টাকা শুধুমাত্র ঠিকাদারদের নয়, এর সঙ্গে মহাজন, সরবরাহকারী, মিস্ত্রি ও কর্মীদের মতো হাজার হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত। উৎসবের মরসুমে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে।
সংগঠনের একটি সূত্রের দাবি, পুজোর আগে সামান্য কিছু টাকাও যদি পাওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জেলাস্তরে হবে আন্দোলনও। পরবর্তীতে দীপাবলির পর দিল্লিতে এসে আন্দোলনের রূপরেখাও তৈরি হচ্ছে। মন্ত্রীকে চিঠি লিখে তাঁর সময় চাওয়া, মন্ত্রকের সামনে বা যন্তর মন্তরে ধরনা দেওয়া, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়া–এই ধরনের নানা কর্মসূচি রয়েছে সংগঠনের পরিকল্পনায়। লক্ষ্য ছিল ২০২৪ সালের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে মিলবে স্বচ্ছ, পরিশুদ্ধ পানীয় জল। সময়সীমার সাড়ে ন’মাস পার হয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার থেকে এখনও বেশ অনেকটাই দূরে রয়েছে মিশন। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে সাড়ে তিন কোটির বেশি বাড়িতে এখনও পৌঁছে দেওয়া যায়নি জলের কল। এই পরিস্থিতিতে যেভাবে কেন্দ্রীয় বঞ্চনায় সম্মুখীন হচ্ছেন ঠিকাদাররা, তাতে যদি তাঁরা সেভাবে কাজ না করেন, তবে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে যে আরও সময় লেগে যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।